দিনের শুরুতে তার বল ছিল নিষ্প্রভ, উইকেটশূন্য চার ওভার শেষে বোঝা যাচ্ছিল না, আদৌ তিনি ম্যাচে ছাপ রাখতে পারবেন কিনা। গ্যালারিতে তখন আলোচনা ছিল পেসারদের নিয়ে। বিশেষ করে নাহিদ রানার গতি আর বাউন্সে মুগ্ধ সবাই। কিন্তু দিনের শেষ বিকালে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে একটাই নাম— মেহেদী হাসান মিরাজ।
যেখানে সকালের সেশনে ব্যর্থতার রঙ ছিল তার চারপাশে, সেখানে বিকালটা কেটেছে বল হাতে উল্লাসে। শেষপর্যন্ত ইনিংসে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট, ফিরিয়েছেন ম্যাচে প্রাণ।
কীভাবে এমন নাটকীয় বদল? মিরাজের উত্তর একেবারেই সরল— ‘বোলিংয়ে গতি’র সঠিক ব্যবহারে।
আরও পড়ুন: জিম্বাবুয়েকে ৩৫০-৪০০ রানের লক্ষ্য দিতে চায় টাইগাররা
অনেকে ভাবে গতি শুধু ফাস্ট বোলারদেরই অস্ত্র। তবে সিলেটের এই পিচে মিরাজ বুঝিয়ে দিলেন, স্পিনারদের জন্যও গতি হতে পারে সাফল্যের চাবিকাঠি। উইকেটের গতি বুঝে বলের গতি বাড়ানো বা কমানো, কখনো লুপ দিয়ে, কখনো আবার দ্রুত ডেলিভারিতে চমকে দেওয়া— সব মিলিয়ে পুরোটা ছিল এক রকমের বোলিং কৌশলের খেলা।
সেই কৌশলের পেছনে ছিল মিরাজের মস্তিষ্ক ও ম্যাচপড়ার ক্ষমতা। সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, “প্রথম স্পেলে যখন বল করছিলাম, বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা মিসিং। পরে কোচদের পরামর্শে বুঝলাম, গতিই হচ্ছে এই উইকেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তখন নিজের গেমপ্ল্যান পাল্টাই।”
এই বদলেই আসে সুফল। উইলিয়ামসের উইকেটটা ছিল এই নতুন ভাবনার ফল। জানতেন, উইলিয়ামস বড় শট খেলবেন। তাই বলটা একটু ফ্লাইট দিয়ে দেন, একটু ধীরগতিতে। ফলাফল— আত্মঘাতী শট, মূল্যবান উইকেট।
আরও পড়ুন: ‘অনার্স বোর্ড’ না থাকায় আক্ষেপ, উন্নতির নেই বিকল্প: মিরাজ
এই যে বলের গতি নিয়ে এত মনোযোগ, সেটা কেবল পরিকল্পনা নয়, এটা ছিল চাপের মধ্যেও মাথা ঠাণ্ডা রাখার নিদর্শন। প্রতিটি ডেলিভারি ছিল চিন্তা-ভাবনার ফল, যেমনটা মিরাজ নিজেই বললেন, “উইকেট তো হুট করে মিলে না, সুযোগ তৈরি করতে হয়। রান আটকে রাখতে হয়, ভুল শট খেলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে হয়।”
মিরাজের এমন বোলিংয়ে কাটল টানা খরা। দেশের মাটিতে ৮ টেস্ট পর আবার পেলেন ইনিংসে ৫ উইকেট। তার মুখে ছিল পরিশ্রম ও তৃপ্তির ছাপ— “আমার কাছে উইকেটের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলকে সহায়তা করা। ৫ উইকেট এসেছে, মানে কিছুটা হলেও সেটা করতে পেরেছি।”