গত বছর জুলাই-আগস্টে পুরো বাংলাদেশ ছিল উত্তাল। সবার একটাই দাবি, স্বৈরাচারের পতন। সবশেষে এই দাবি পূরণও হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে কিন্তু অনেক বাংলাদেশি নাগরিককে তার প্রাণ দিতে হয়েছে এর জন্য। এই উত্তপ্ত সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান আন্দোলনে সংহতি না জানিয়ে পরিবার নিয়ে পোস্ট দেন। তাতেই বাংলাদেশে জ্বলতে থাকা আগুনে ঘি ঢালেন তিনি। তবে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তার আরো দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন সাকিব আল হাসান।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হয়ে খেলে অবসরে যেতে চাই: সাকিব
বুধবার (১৬ এপ্রিল) বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি সান’-এ প্রকাশিত সাকিব আল হাসানের এক সাক্ষাৎকার থেকে এসব জানা যায়।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি তখন দেশে ছিলাম না। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে এমএলসি খেলতে গিয়েছিলাম, তারপর কানাডায় ছিলাম। ছবিটা কানাডায় তোলা হয়েছিল। আমি নিজে সেটা পোস্ট করিনি। তবে দায় আমারই। এটা ছিল পরিকল্পিত পারিবারিক ভ্রমণ। একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল, সেটা আমি মানছি। তবে রাজনীতিতে আসার আগে ও পরেও আমার মনোযোগ ছিল ক্রিকেটেই। কেউ আমাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে বলেনি, শুধু বলেছিল, “ক্রিকেট খেলো”—আমি সেটাই করেছি।’

একটা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করায় সাকিব আল হাসান এখন দেশেই ঢুকতে পারছেন না, পারছেন না ফিরতে ক্রিকেটে। এই ছবি পোস্টের পরিণতি কি তিনি জানতেন? এ ব্যাপারে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘না, একদমই না। এতটা বড় হবে ভাবিনি। পরে বুঝতে পেরেছিলাম বিষয়টা কতটা গুরুতর। অনেকে বলেছে তারা কষ্ট পেয়েছে সময়টার জন্য। হ্যাঁ, আমার ভুল ছিল। আমি আরও সচেতন হতে পারতাম।’
খারাপ সময় যখন আসে তখন আসতেই থাকে। সাকিবের সাথেও তাই হয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে কানাডায় চলছিল গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগ। সেই লিগেও সাকিব বাকবিতন্ডায় জড়ান এক সমর্থকের সাথে। এ ব্যাপারে তিনি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মনে হলো লোকটা ইচ্ছা করেই আমাকে উসকে দিতে চাচ্ছিল—বা হয়তো হতাশ ছিল। সে বারবার জিজ্ঞাসা করছিল আমি কিছু করি না কেন। আমি তাকে বলেছিলাম, “ভাই, আপনি কী করেছেন?” এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। আমি তখনও কাউকে বলেছিলাম—আপনারা বলেন, কী করা উচিত? আমি চুপ ছিলাম না। পোস্ট দিলে কী হতো? তাতে কি সমস্যার সমাধান হতো, না আরও আগুন লাগতো?’
আরও পড়ুন: লা লিগায় এক ম্যাচ নিষিদ্ধ এমবাপে
সাকিবের অনেক ভক্ত মনে করে রাজনীতিতে যোগ দেয়াটাই সাকিবের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে সাকিব সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি রাজনীতিতে আমার যোগ দেওয়া ভুল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো পেশাজীবী, ডাক্তার, ব্যারিস্টার, ব্যবসায়ী কেউই রাজনীতিতে এলেও সেটা ভুল হবে। কিন্তু রাজনীতি করা প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। আমি বিশ্বাস করি, আমি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমি চাইতাম মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করতে। নির্বাচনটা আমি ন্যায়সংগতভাবে জিতেছিলাম। আজ যদি আবার নির্বাচন করি, আমি বিশ্বাস করি, অন্য কেউ জিতবে না।’

ছয় মাসের রাজনীতিতে লন্ডভন্ড সাকিবের পুরো ক্রিকেট ক্যারিয়ার। তার ছয় মাসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি বলেন, ‘ হ্যাঁ। নির্বাচনের পর মাগুরা গিয়েছিলাম মাত্র তিন দিন। বাকি সময় ক্রিকেট খেলেছি। তখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, “রাজনীতি করতে হবে না, শুধু ক্রিকেট খেলো।” আমিও তাই করেছি। আমি যদি চাইতাম, ক্রিকেট ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে চলে যেতাম। তবে আমার পরিকল্পনা ছিল ধাপে ধাপে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া।’
আরও পড়ুন: জিতেও হতাশ অ্যাস্টন ভিলা, সেমিতে পিএসজি
সাকিবের নামে একটা হত্যা মামলাও হয়েছে। তবে মামলার বাদী জানেন না সাকিব আল হাসানের নাম কিভাবে এই মামলায় এলো। এই মামলার ব্যাপারে সাকিব বলেন, ‘আমার আইনজীবী বলেছে, মামলাগুলোর অগ্রগতি অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত হচ্ছে। আমি সব সময় ক্রিকেটে মনোযোগ দিয়েছি। ব্যবসায় তেমন মনোযোগ দিতে পারিনি। আমার দুটি ব্যবসা আছে—একটা কাঁকড়ার খামার, আরেকটা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ।’