শেষ মুহূর্তের রোমাঞ্চ পেরিয়ে চূড়ান্ত লড়াইয়ের মঞ্চ এবার প্রস্তুত। ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আগামী ১১ জুন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। আর এই মহারণকে ঘিরে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে আইসিসি, যা আগের দুই আসরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ!
২০২৩–২৫ চক্রের ফাইনালের জন্য নির্ধারিত মোট পুরস্কার মূল্য ৫.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চ্যাম্পিয়ন দল ঘরে তুলবে ৩.৬ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২১ ও ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি। সেবার শিরোপাজয়ীরা পেয়েছিল মাত্র ১.৬ মিলিয়ন ডলার। এবার রানার্সআপ দলও পাবে ২.১৬ মিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের ফাইনালগুলোর রানার্সরা পেয়েছিল ৮ লাখ ডলার।
আরও পড়ুন: বিফলে আকবরের সেঞ্চুরি, সিরিজে সমতা প্রোটিয়া ইমার্জিংয়ের

এই উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচ ঘিরে এক বিশেষ প্রচারণাও চালিয়েছে আইসিসি। ৩০ দিনের কাউন্টডাউন উপলক্ষে প্রকাশ করেছে এক ঝাঁকজমক ভিডিও, যেখানে রয়েছেন দুই দলের তারকারা—টেম্বা বাভুমা, কাগিসো রাবাদা, এইডেন মারক্রাম, স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেড। সঙ্গে ছিলেন কিংবদন্তি শন পোলক, ডেইল স্টেইন, ম্যাথু হেইডেন, নাসের হুসেন, শোয়েব আখতার ও রবি শাস্ত্রীর মতো সাবেক গ্রেটরা।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি আসরে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতা দেখিয়ে সবার আগে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জয় এবং ভারতের সঙ্গে ঘরের মাঠে ড্র তাদের পৌঁছে দেয় লর্ডসের ফাইনালে।
অস্ট্রেলিয়ার যাত্রাটাও কম চমকপ্রদ নয়। ভারতের বিপক্ষে বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিশ্চিত করে ফাইনালের জায়গা। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ জয় ও শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে দলটি।

আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এই ফাইনালকে ‘টেস্ট ক্রিকেটের উৎসব’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এবারের চক্রটি ছিল সত্যিই নাটকীয়। শেষ দিকে গিয়েই নির্ধারিত হয়েছে কোন দুটি দল উঠবে ফাইনালে। প্রতিটি দলের কাছ থেকে দারুণ পারফরম্যান্স পেয়েছি আমরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার লড়াই নিঃসন্দেহে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার সেরা উদাহরণ হবে।”
আরও পড়ুন: এপ্রিলে আইসিসির মাসসেরা মিরাজ
দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক বাভুমা বললেন, “বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আমাদের জন্য বিশাল সুযোগ। এটা শুধু একটা ম্যাচ নয়, বরং আইসিসি ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা, যেটার জন্য গোটা দেশ অপেক্ষা করে। লর্ডসের মঞ্চে খেলাটা সবসময়ই সম্মানের, আর এবার সেটা আরও বড়।”
অন্যদিকে, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানান, “বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত। লর্ডসে খেলা বরাবরই বিশেষ কিছু। গত দুই বছরে যেসব খেলোয়াড় ও স্টাফ কঠোর পরিশ্রম করেছেন, এটা তাদের সবার প্রাপ্য।”
সব মিলিয়ে এবারের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩–২৫ আসরের দলভিত্তিক পুরস্কার অর্থে শীর্ষে থাকবে ফাইনালের বিজয়ী দল— অস্ট্রেলিয়া অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা পাবে ৩.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রানার্স-আপ দল পাবে ২.১৬ মিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থানে থাকা ভারত অর্জন করবে ১.৪৪ মিলিয়ন, চতুর্থ অবস্থানে থাকা নিউজিল্যান্ড পাবে ১.২ মিলিয়ন, আর পঞ্চম স্থানে থাকা ইংল্যান্ডের প্রাপ্য ৯ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম অবস্থানে থাকা শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ যথাক্রমে পাবে ৮ লাখ ৪০ হাজার, ৭ লাখ ২০ হাজার ও ৬ লাখ ডলার। নবম স্থানে থেকে তালিকা শেষ করেছে পাকিস্তান, যাদের প্রাপ্য ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

এই পুরস্কার তালিকায় যেমন রয়েছে গৌরবের প্রতিযোগিতা, তেমনি প্রতিটি দলের জন্য একটি বার্তা, টেস্ট ক্রিকেট বেঁচে আছে, এবং আগামীতেও থাকবে। আর তারই প্রমাণ হতে চলেছে ১১ জুনের ফাইনাল, যেখানে শিরোপার সঙ্গে থাকবে গর্ব, ইতিহাস আর বিপুল অর্থের হাতছানি।