ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে শুরু করে বিপিএলের মঞ্চ, পারভেজ হোসেন ইমনের সাথে বেশ লম্বা সময় একই দলে কাটিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। ইমনের খেলার ধরন, তার টেকনিক সবকিছুই যেন নখদর্পণে এই অভিজ্ঞ ব্যাটারের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ইমনের অসাধারণ সেঞ্চুরির পর ইমনের ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন মিঠুন। জানিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটারদের পাওয়ার হিটিংয়ের অভাবটা পূরণ করতে পারেন ইমন।
আরও পড়ুন: শিরোপা খরা কাটিয়ে পুনর্জন্মের গল্পে মোড়া ২০২৫
মিঠুন বলেন, “বাংলাদেশ জিতলে তো অবশ্যই সবসময় ভালো লাগে। বিশেষ করে ইমন বিপিএলেও আমার সাথে ছিল আবার ডিপিএলও ছিল। ওর সাথে আমার আগেও প্রাইম ব্যাংকে খেলা হয়েছে। লম্বা সময় একসাথে খেলছি। তো যখন একটা প্লেয়ারের সঙ্গে লম্বা সময় খেলা হয় এবং সে পারফর্ম করে তখন আলাদা ভালো লাগা কাজ করে।”

ইমনের ব্যাটিংয়ে আলাদা কি বৈশিষ্ট্য আছে এমন প্রশ্নের জবাবে মিঠুন জানান, “আসলে টি-টোয়েন্টিকে যে পাওয়ার ক্রিকেট বলে ও সেই পাওয়ার ক্রিকেটটা খেলতে পারে। বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এই পাওয়ার ক্রিকেটের বেশ অভাব রয়েছে। আপনি যদি ওর শট গুলা দেখেন অন্যান্য ব্যাটসম্যানের থেকে ওর শট গুলা একটু অন্যরকম। আমি মনে করি এখানে অন্যান্য ব্যাটসম্যানের সাথে ওর বেশ পার্থক্য রয়েছ। টি টোয়েন্টির জন্য যেই পাওয়ার ক্রিকেটটা দরকার ওইটা ওর মধ্যে ন্যাচারালি আছে।”
বরাবরই সেঞ্চুরি করার দিক দিয়ে পটু পারভেজ হোসেন ইমন। দেশের স্বীকৃত ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি ও হাফসেঞ্চুরি করার রেকর্ডটাও রয়েছে ইমনের দখলে। মিঠুন মনে করেন ইমনের খেলার ধরন বাকি ব্যাটারদের থেকে আলাদা হওয়ায় টি-টোয়েন্টিতে তার সেঞ্চুরি করার সম্ভাবনা বেশি। মিঠুন বলেন, “আসলে সেঞ্চুরি করার ক্ষেত্রে স্পেশালি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খেলার ধরনটাই জরুরি। আপনি দেখেন অনেকেই অনেক বড় ইনিংস খেলতে পারে, দেখা যাচ্ছে ২০ ওভার খেলছে ৮০ রান নট আউট থাকতে পারে। কিন্তু ও যেভাবে খেলে তাতে ২০ ওভার ব্যাট করতে পারলে পারে ওর ১০০ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ ও চারের থেকে ছয় বেশি মারতে পছন্দ করে। আর টি টোয়েন্টি মানেই ছয় মারার খেলা।”
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে নাহিদ-রিশাদের আটকা পরার কারণ জানালেন ফাহিম
গত বিপিএল ফাইনালে ব্যাট হাতে দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলেন ইমন। বরিশালের বিপক্ষে তার ৪৯ বলে ৭৮ রানের ইনিংসে ভর করে বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় চিটাগং। তবে তা সত্ত্বেও সেদিন ফাইনাল হারতে হয়েছিল মিঠুনের দলকে। ফাইনাল জয়ের আক্ষেপ প্রায় তিন মাস পরও ফুটে উঠেছে মিঠুনের কন্ঠে। যদিও হারের দায়টা পুরো দলের কাধেই দিয়েছেন মিঠুন। তবে তিনি এটাও মনে করেন সেদিন ইমনের ব্যাটে শতক আসলে ম্যাচ জয়ের আশা আরো বেড়ে যেত চিটাগংয়ের।

ইমন বলেন, “ক্রিকেট তো আর একার খেলা না, ক্রিকেট হচ্ছে টিম গেম। আমরা ওইদিন স্পেশালি ফাইনাল ম্যাচের কথা যদি বলেন আমরা লাস্ট চার ওভার ব্যবহার করতে পারি নাই। আর সব দায়িত্ব তো ইমনের একার না। ওতো যথেষ্ট ভালো শুরু দিয়েছিল আমাদের। তারপরে আমাদের বাকি যে ব্যাটসম্যান ওই সময় ব্যাটিং করেছে, যে স্ট্রাইক রেটে খেলার কথা ছিল সেটা আমরা পারি নাই। একই সাথে আমাদের দলে সেদিন আলিস খেলতে পারেনি। তো ফাইনাল হারার পেছনে অনেকগুলা ইস্যুই আমরা দাঁড় করাতে পারি। তবে হ্যা ও যদি ১০০ করতো হয়তোবা রানটা একটু বেশি হতো তখন সম্ভাবনা আরো বেশি হতো।”
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটারদের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা কতটা সেটা গত ম্যাচেই বুঝিয়েছে বাংলার ব্যাটাররা। আগের দিনই অধিনাায়ক লিটন দাস ব্যাটারদের কোনো চাপ ছাড়াই খেলার স্বাধীনতা দিয়ে দেন। অধিনায়কের কাছ থেকে এই স্বাধীনতা পেয়ে যেন বদলে গেলে টাইগাররা। ব্যক্তিগত এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা সহ দলীয়ভাবেও এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটাও একই দিনে করে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: ডেথ ওভারে মুস্তাফিজই ডট বলের রাজা
ভালো পারফরম্যান্সের জন্য শুধুই কি স্বাধীনতা প্রয়োজন, নাকি দলের আবহটাও জরুরি। এমন প্রশ্নের জবাবে মিঠুন বলেন, “দুটোই আসলে দরকার। আপনার দলের আবহটাও যেমন জরুরি তেমনি নিজের ভালো করার ইচ্ছাটাও প্রয়োজন। আপনি একটা প্লেয়ারকে যতই সাপোর্ট করেন, ওর যদি নিজের ভেতর থেকে ইমপ্রুভ করার ওই ইচ্ছাটা না থাকে বা বড় ইনিংস না খেলে আপনি সাপোর্ট করে করাতে পারবেন না। একই সাথে যদি একটা প্লেয়ারের অনেক ইচ্ছা কিন্তু টিমের আবহ ভালো না, তখন ওর জন্য পারফরমেন্স করা কঠিন হয়ে যায়। এইজন্যই কিন্তু ক্রিকেটটাকে টিম গেম বলা হয়। একটা টিমের ভালো করতে হলে সবকিছুর কম্বিনেশন জরুরি।”

২০১৬ সালে প্রথম শতকের দেখা পাওয়া টাইগাররা দ্বিতীয় শতক হাঁকান ব্যাটার পেয়েছে প্রায় নয় বছর পর। দেশের ক্রিকেটে আসলে ঘাটতিটা কোথায়, এতো দিনের লম্বা ক্যারিয়ারে নিজের উপলব্ধি সম্পর্কে বলতে গিয়ে মিঠুন জানান, “যখন টি-টোয়েন্টি শুরু হয়েছে তখনও আমরা পিছিয়ে ছিলাম। এখনও আমরা পিছিয়ে আছি। আমরা কিন্তু কখনোই আন্তর্জাতিক লেভেলে, বিশেষ করে এই ফরম্যাটে কখনোই নিজেদের মানিয়ে নিতে পারিনি। সেই জন্যই একটা দুইটা এরকম ব্যক্তিগত পারফরমেন্স হচ্ছে। কিন্তু আপনি টিমওয়াইজ যদি চিন্তা করেন এখনো বাংলাদেশ টিম এত বছর খেলার পরে যেই জায়গায় থাকার কথা ছিল আমরা কিন্তু সেই জায়গায় নাই।”
এর ব্যাখ্যাও অবশ্য দিয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। তিনি বলেন, “এখানে অবশ্য অনেক ফ্যাক্ট কাজ করে। উইকেট একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায় আমাদের জন্য। কারণ আপনার বড় শট খেলতে হলে আপনার মাসল মেমোরিটাও ইম্পর্টেন্ট। আমরা আসলে যেই টাইপের উইকেটে খেলি আমাদের ওটা এলাও করে না। আমরা হয়তোবা দুইটা শট মারবো তবে তিনটার সময় বল একই বাউন্সে আসে না বা একই পেসে আসে না।”
আরও পড়ুন: পিএসএলে ফিরে উচ্ছ্বাস, ম্যাচের জন্য প্রস্তুত সাকিব
আমাদের ক্রিকেটীয় কালচারও ক্রিকেটারদের সেই স্বাধীনতা দেয় না বলে ধারণা মিঠুনের। তিনি জানান, “আমরা যেই কালচারে বড় হয়েছি বা যেই কালচারে আমরা ক্রিকেট খেলি প্লেয়ারদেরও ওই স্বাধীনতা থাকে না। টি-টয়েন্টি খেলতে হলে আপনার অবশ্যই স্বাধীনতা থাকতে হবে। ওখানে আপনি ভুল করবেন, ওখানেই আপনি সাকসেস হবেন। কিন্তু আপনি একদিন ভুল করার পরে যদি আর সাহসটাই না দেখান তাহলে আপনি সফল হবেন কখন।”