ক্রিকেট বোর্ডের অর্থ এক ব্যাংক থেকে উঠিয়ে অন্য ব্যাংকে জমা করার ঘটনায় অভিযোগের তীর উঠেছিলো বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের উপর। বিসিবি যদিও এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করলেও এবার গঠনতন্ত্রের অনিয়মের অভিযোগে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সেই লক্ষ্যে শনিবার (১৭ মে) বিসিবিতে তদন্ত অভিযানে এসেছে দুদকের কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন: পিএসএলে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত সাকিব
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে যাচাই করছে দুদক। বোর্ডের কাছ থেকে ইতিমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তদন্তে আসা কর্মকর্তারা। শনিবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে দুদক কর্মকর্তা বলেন, “আপনারা রিসেন্ট একটা নিউজ দেখেছেন যে একাউন্টের টাকা ট্রান্সফার হয়েছে। ব্যাংক থেকে সেই সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র আমরা সংগ্রহ করেছি। যতটুকু জানতে পেরেছি তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেই সিগনেচার গুলো থাকে তাদের সিগনেচারেই এই ট্রান্সফার করা হয়েছে। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এখানে যে রিস্ক জোন ব্যাংকগুলো ভাগ করা হয়েছে সেখানে তারা যেটাকে মনে করেছে অধিক নিরাপদ সেখানেই ট্রান্সফার করেছে। এ বিষয়ে রেকর্ডপত্রগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি এবং সেই রেকর্ড পত্রগুলো আরো যাচাই বাছাই করে আমাদের রিপোর্ট দাখিল করব।”

বিসিবির গঠনতন্ত্রে টাকা ট্রান্সফার করার দায়িত্ব কার উপর বর্তায় এবং সঠিক ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা রাখা হয়েছে কিনা সেই ব্যাপারেও খতিয়ে দেখবে দুদক। এ ব্যাপারে দুদক কর্মকর্তা বলেন, “আর্থিক যে লেনদেনটা হয়েছে সেখানে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কনসার্ন থাকবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেটা ট্রান্সফার করতে হবে। আর্থিক অনিয়মের ব্যাপারটা কখন সংঘটিত হয়ে থাকে কিভাবে সংঘটিত হয় সেটা যাচাই করতে আমরা রেকর্ডপত্র ছাড়া কিছু বলতে পারি না। এখন প্রতিটা ডকুমেন্ট যেভাবে ট্রান্সফার করেছে, সেখানে স্বাক্ষরকারী কারা ছিলেন, বিসিবির গঠনতন্ত্রে আসলে এই দায়িত্বটা কার উপরে বর্তায় সেই ব্যাপারগুলো আমাকে যাচাই করতে হবে। বোর্ড যে দাবি করছেন যে সঠিক ব্যাংকিং চ্যানেলে তারা রেখেছেন সেটা হয়েছে কিনা এবং তাদের দাবিটা কতটুকু যৌক্তিক আমার সেটা পর্যালোচনা করতে হবে। কেন তারা জনতা ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে নিয়ে গেল এবং এখানে অনিয়ম হয়েছে কিনা এটা অবশ্যই যাচাই করব।”
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৭০ রানের জয় কিউইদের
এছাড়াও বিসিবির টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েও আনিত অভিযোগ কমিশনকে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, “টেন্ডার প্রক্রিয়াতে অনিয়ম করার তো সুযোগ নেই। যথাযথপ্রক্রিয়া অনুসরণ করে টেন্ডার করতে হবে। টেন্ডারের এই বিষয়টা আমাদের মাথায় থাকবে। আমরা এই অভিযোগের বিষয়ে আমাদের কমিশনকে জানাবো।”

পূর্ববর্তী বোর্ডের দূর্নীতি ও অনিয়ম নতুন বোর্ড সংগঠিত করলে দুদক সেটাকে প্রশ্রয় দেবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে কর্মকর্তা বলেন, “বিসিবি আমাদের সবার পছন্দের একটা জায়গা, আবেগের জায়গা। পূর্বের যে অনিয়মগুলো হয়েছে এবং যারা সংগঠিত করেছে তাদের একটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে চাই। সাথে সাথে আমরা এটাও চাইবো না যে ভবিষ্যতে সেই আগের বিসিবি আবার ফেরত আসুক। আমরা চাই এই বিসিবিটা আরো স্বচ্ছ, স্ট্রাকচার্ড ও অর্গানাইজড হোক এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ফলো করুক যেন আমরা কোয়ালিটি প্লেয়ার পাই। আমাদের দেশের সম্মানটা বৃদ্ধি পাক এবং যারা এই দেশের মানুষ তারা যেন একটু স্বস্তি পায়।”
এদিকে বিসিবির গঠনতন্ত্রে অনিয়মের অভিযোগে কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে দুদক। এ প্রসঙ্গে দুদক কর্মকর্তা বলেন, “বিসিবি একটা গঠনতন্ত্রের আলোকে পরিচালিত হয়। সেই গঠনতন্ত্র কতটা বৈধ এবং সিদ্ধ সেটা আমরা পর্যালোচনা করেছি। আমাদের কাছে অভিযোগ আছে গঠনতন্ত্রে কিছু অসঙ্গতি আছে। আদালতের একটা রায় অনুযায়ী গঠনতন্ত্র সংশোধিত হয়ে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে। গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা শেষে আমরা একটা বিষয় খেয়াল করেছি, একটা অর্গানাইজড উপায়ে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল বিসিবি। কিন্তু এই জায়গাতে আমরা অসঙ্গতি পেয়েছি। এখানে সঠিক চাকরি বিধিমালা নেই। একটা প্রতিষ্ঠান যেভাবে সুগঠিত থাকার কথা সেটা এখানে নেই। এই বিষয়টা আমরা আরো পর্যালোচনা করতে চাই।”