সারা বিশ্বের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে দিন বদলেছে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বাদে বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে একের অধিক বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণ করেন এখন। পাকিস্তান সুপার লিগের কথাই ধরা যাক। এবারের আসরে তিনজন বাংলাদেশি দল পেয়েছেন পিএসএল-এ। এদের মধ্যে অন্যতম হলো তরুণ দুই তুর্কি নাহিদ রানা ও রিশাদ হোসেন। পেশোয়ার ঝালমি ও লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলছেন তারা। পেশোয়ার ঝালমির স্পিন বোলিং কোচ সাকলাইন মুশতাক নাহিদ- রিশাদে দেখছেন বাংলাদেশের আগামী ভবিষ্যত হিসেবে।
আরও পড়ুন: পিএসএল উত্তেজনায় ছন্দপতন: পেশোয়ার-করাচি ম্যাচ স্থগিত
বৃহস্পতিবার (৮ মে) বিডিক্রিকটাইমকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানি কিংবদন্তি সাকলাইন মুশতাক এসব জানান।
পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) এবারের আসরে দল পেয়েছেন তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটার লিটন দাস, রিশাদ হোসেন এবং নাহিদ রানা। পুরো মৌসুমের জন্য লিটন ও রিশাদ ছাড়পত্র পেলেও তরুণ পেসার নাহিদকে পুরো আসরের জন্য অনুমতি দেয়নি বিসিবি। গত ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পিএসএল-এ শুরুতে অংশ নিতে পারেননি ২২ বছর বয়সী গতিতারকা নাহিদ রানা। তবে অন্য দুই ক্রিকেটার রিশাদ ও লিটন পেয়েছেন পুরো সিজনের জন্য বিসিবির ছাড়পত্র।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলে গত ২৭ এপ্রিল পেশাওয়ার জালমি শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন নাহিদ রানা। এটাই তার প্রথম কোন বিদেশি লিগে খেলতে যাওয়া। দল পেলেও এখনো ম্যাচ পাননি নাহিদ। এ সময়ের মধ্যে পেশাওয়ার জালমি তিনটি ম্যাচ খেললেও একটিতেও একাদশে জায়গা হয়নি বাংলাদেশের এই ফাস্ট বোলারের।
নাহিদের না খেলার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ইংলিশ পেসার লুক উডের দুর্দান্ত ফর্ম। বিষয়টি স্বীকার করেছেন পেশাওয়ার জালমির স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদও। বিডিক্রিকটাইমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মুশতাক বলেন, ‘আমার মনে হয় লুক উড একটা বড় কারণ নাহিদের না খেলার পেছনে। আপনি চাইবেন না যে ভালো খেলছে, তাকে বসিয়ে দিতে।’
আরও পড়ুন: জুনেই কিউবা মিচেলকে পাওয়ার আশা বাফুফের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেছেন এক বছর আগে। বাংলাদেশের জার্সিতে সবমিলিয়ে খেলেছেন মাত্র ১০ ম্যাচ, তবে এখনই তারকাখ্যাতি পেতে শুরু করেছেন নাহিদ রানা। বল হাতে গতির ঝড় তুলে ইতোমধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বের নজর কেড়েছেন তরুণ এই পেসার। লাল-সবুজের জার্সিতে দ্যুতি ছড়িয়ে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে।
নাহিদার ব্যাপারে মুশতাক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নাহিদ ম্যাচ উইনার, গ্রেট বোলার। বাংলাদেশের হয়েও আমি তার সাথে কাজ করেছি। এখানেও সে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। অ্যাটিটিউড গ্রেট। খুব ভালো টিম ম্যান। টিম কম্বিনেশনের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’
নাহিদের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, ‘নাহিদ রানা এক কথায় ইন্টারন্যাশনাল ম্যাটেরিয়াল। যে কোন মুহূর্তে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। গতি আছে, অ্যাটিটিউড আছে। বেশিরভাগ মানুষ যেটা জানেন না, সে একজন কুইক লার্নার। খুব স্মার্ট কিড। খুব দ্রুত শিখে যায়। সব উপকরণই তার মধ্যে আছে। সে যাতে নিজের মেধা কাজে লাগাতে পারে এর জন্য শুধু প্ল্যাটফর্মটা তার দরকার।’
রিশাদ বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় দলে নিয়মিত খেলোয়াড়। এখনো টেস্টে অভিষেক হয়নি। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৩৯ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে ২৫৪ রান ও ৪৬ উইকেট নিয়ে নিজের সম্ভাবনা জানান দিয়েছেন ভালো করেই। বোলিং হিসেবে খেললেও ব্যাটিং খারাপ করেন না। দলের বিপদে বিগ হিট করতে পারেন অনায়াসে। এই রিশাদের পিএসএল যাত্রাটা নাহিদ থেকে ভিন্ন। সুযোগ পেয়েছেন, পারফর্ম করেছেন, বাদ পড়েছেন, আবার সুযোগ পেয়েছেন রিশাদ।
আরও পড়ুন: পিএসএল খেলতে চাচ্ছেন না বিদেশি ক্রিকেটাররা
প্রথম চার ম্যাচ ৮ উইকেট নিয়েও লাহোর কালান্দার্সের একাদশ থেকে ছিটকে পড়েছিলেন রিশাদ হোসেন। বাংলাদেশের লেগ স্পিনার এরপর টানা তিনটি ম্যাচ দেখেছেন বেঞ্চে বসে। সেই রিশাদ অবশেষে রোববার আবার একাদশে সুযোগ পেলেন। তবে সুযোগ পেয়ে দারুণ বোলিং করেও অবশ্য দলকে জেতাতে পারেননি। তবে নতুন রেকর্ড গড়েছেন। বর্তমানে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহকে ছাড়িয়ে পিএসএলে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি রিশাদ।
বাংলাদেশের এই দুই তরুণ তুর্কির ব্যাপারে সাকলাইন মুশতাক বলেন, ‘নাহিদ ও রিশাদ বাংলাদেশের আগামী ভবিষ্যত। তাদের আগলে রাখতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তারা যেন লাল বলের ক্রিকেট খেলে। বিশেষ করে রিশাদ। নাহিদ লাল বলের ক্রিকেট খেলেছে ফলে টেকনিক, বলের সুইং বুঝে ভালো। তারা দুজনেই স্কিলফুল ক্রিকেটার। ম্যাচ উইনার। ম্যাচে এক্স ফ্যাক্টর।’
পাকিস্তানের মাঠে পিএসএল আর ভারতের মাঠে আইপিএল-এর মত হাই ভোল্টেজ টুর্নামেন্ট চললেও মানুষের নজর এখন পাক-ভারত সীমান্তে। যুদ্ধের ধামামা এবার বেশ ভালো করেছে বাজছে সীমান্তে। ফলে দুই টুর্নামেন্ট নিয়ে চাপা উত্তেজনা তো আছেই দর্শকদের মধ্যে। তবে সাকলাইন দিলেন অভয়। টুর্নামেন্টের মত পেশোয়ার ঝালমিও ভালো আছে বলে জানান তিনি।
বিডিক্রিমটাইমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে সবকিছুই ঠিক আছে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। ক্রিকেটের দিক থেকে দেখলে পেশোয়ার জালমিও ভালো অবস্থানে আছে। আমরা ভালো ছন্দে আছি। গত দুই ম্যাচেও ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ছেলেরা এভাবে খেলতে থাকলে আমরা অনেক দূর যাব। ইনশাআল্লাহ।’
পাকিস্তান বিখ্যাত তার খাবার, মেহমানদারির জন্য। পিএসএল-এ যাওয়া প্রত্যেক ক্রিকেটার এটা খুব ভালো করেই অনুভব করছেন। ক্রিকেটারদের খুব আপন করে নিয়েছে ফ্রাঞ্চাইজিগুলো। ফলে বাড়ির বাইরে আছে অনুভব হচ্ছে না খেলোয়াড়দের। ব্যতিক্রম নয় পেশোয়ার ঝালমিও। তারাও বিদেশি খেলোয়াড়দের মেহমানদারিত্বে ব্যস্ত। এ ব্যাপারে সাকলাইন মুশতাক বলেন, ‘বিদেশি ক্রিকেটারদের আমরা পরিবারের মত দেখি। পেশোয়ার জালমি সবাইকে পরিবার মনে করে। অনেক ভালোবাসে ও সম্মান করে। নাহিদ ও অন্যান্য বিদেশি ক্রিকেটার খুব খুশি। ম্যানেজমেন্ট তাদের খুব ভালো যত্ন নিচ্ছে।’
সাকলাইন মুশতাক বাংলাদেশে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন বাংলাদেশের উত্থান-পতন, জয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্মাদনা। সাম্প্রতিক সময়ে দলের ভেতর থাকা প্রায় সকল সিনিয়রই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে না করে দিয়েছেন। ফলে শূন্যতা তৈরি হয়েছে এক প্রকার। বাংলাদেশের নতুন কোচ ফিল সিমন্স নতুন করে দল গঠন করছে। সামনের দিনে যা ভালো ফলাফল এনে দিবে বলে বিশ্বাস সাকলাইন মুশতাকের।
এ ব্যাপারে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন নতুন দল তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। নতুন কোচ ফিল সিমন্স। ওকে একটু সময় দিতে হবে। ম্যানেজমেন্টে আরো অনেককে নতুন নেয়া হয়েছে। একটু সময় ওদের দিতে হবে। বাংলাদেশ দল হিসেবে খুবই ভালো। সাদা বলের ক্রিকেটে তারা বিশ্বের যে কোন দলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। টেস্টে স্কিলের দিক থেকে আরো উন্নতি করতে হবে। ব্যাটাররা যদি আরো রান করে তাহলে টিম হিসেবে ভালো করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ভালো পেস বোলার, স্পিন বোলার আছে। তারা খুবই ভালো দল। আমি ভাগ্যবান ও গর্বিত কারণ আমি এমন একটি দলের সাথে কাজ করছি যারা প্রতিনিয়ত শিখতে মরিয়া।’