ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ৩৩তম ম্যাচে মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। পয়েন্ট টেবিলের নিচের সারির দুই দলই শেষ ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামে। ম্যাচের টস জিতে মুম্বাই অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে চিরচেনা আগ্রাসী হায়দ্রাবাদকে যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আইপিএলে এই দলের ইনিংস মানেই শুরুতেই ঝড়, বিশেষ করে অভিষেক শর্মা ও ট্রাভিস হেডের ওপেনিং জুটি। তবে এদিন তাদের শুরুটা ছিল তুলনামূলক ধীর। দীপক চাহারের করা প্রথম বলেই ডাউন দ্য উইকেটে এসে বড় শট খেলতে যান অভিষেক, কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় স্লিপে। উইল জ্যাকস সেই ক্যাচ তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হলেও হায়দ্রাবাদ ওপেনাররা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি।পাওয়ার প্লে-তে কোন উইকেট না হারালেও রান তুলতে পারেননি সুবিধামতো। ৬ ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৪৬ রান।
আরও পড়ুন: ডিপিএলেও টিম অ্যানালিস্ট; দেশের ক্রিকেটে নতুন দিগন্তের উন্মোচন
এরপর ওপেনিং এই জুটি ভাঙে ৫৯ রানে, যখন অভিষেক ২৭ বলে ৪০ রান করে আউট হন হার্দিক পান্ডিয়ার বলে। অভিষেক ফিরে যাওয়ার পর মিডল ওভারে রানরেটে ধস নামে। ট্রাভিস হেড, যিনি সাধারণত বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত, এদিন খেলেন ২৯ বলে ২৮ রানের স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংস। হেডের উইকেটটি তুলে নেন পার্ট টাইমার উইল জ্যাকস, যিনি এই ম্যাচে আরেকটি উইকেট নেন ইশান কিষাণকে ফিরিয়ে। আরেক মিডল অর্ডার ব্যাটার নীতিশ কউমার রেডিও ছিলেন ছন্দের বাইরে। তিনি করেন ২১ বলে মাত্র ১৯ রান।
তবে ইনিংসের শেষদিকে কিছুটা আশার আলো জ্বালান হেনরিক ক্লাসেন। বুমরাহর বলে বোল্ড হওয়ার আগে খেলেন ২৮ বলে ৩৭ রানের একটি কার্যকর ইনিংস। শেষ ওভারে জ্বলে ওঠেন অনিকেত ভার্মা ও অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। দু’জনে মিলে তুলেন ২১ রান, যার ফলে ইনিংসের শেষে সানরাইজার্সের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৬২ রান।১৬৩ রানের জবাবে দারুণ শুরু পায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ওপেনার রায়ান রিকেলটন ও রোহিত শর্মা মিলে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয় দলকে। রোহিত কামিন্সের বলে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরার আগে ৩ ছক্কায় ১৬ বলে ২৬ রানের এক ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস খেলে যান।
আরও পড়ুন: স্টার্কের জাদুতে সুপার ওভারে শ্বাসরুদ্ধকর জয় দিল্লির
পাওয়ারপ্লে শেষে শুধু রোহিতের উইকেট হারিয়ে মুম্বাই সংগ্রহ করে ৫৫ রান। পাওয়ারপ্লের পর প্রথম ওভারেই এসে রিকেলটনের উইকেট তুলে নিয়েও তুলতে পারেননি লেগস্পিনার জিশান আনসারি, কারণ উইকেটকিপার হেনরিক ক্লাসেনের গ্লাভস স্টাম্পের সামনে চলে আসায় বলটিকে নো-বল ঘোষণা করা হয়। অবশ্য পরের ওভারেই হার্শাল প্যাটেলের বলে আউট হন রিকেলটন।
এরপরই উইল জ্যাকসকে নিয়ে জুটি গড়েন সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ। দুইজনের ২৯ বলে ৫২ রানের জুটিতে ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে যায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ৷ সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ কামিন্সের বলে আউট হওয়ার আগে করেন ১৫ বলে ২৬ রান। সুরিয়ার উইকেটের পর উইল জ্যাকসও ফিরে গেলে একটু চাপ অনুভব করতে শুরু করে মুম্বাই। তবে সেই চাপ নিমিষেই দূর করে দেন মুম্বাই কাপ্তান হার্দিক পান্ডিয়া। ৯ বলে ২১ রানের এক ক্যামিও ইনিংস খেলে যখন তিনি ইশান মালিঙ্গার বলে আউট হন, তখন মুম্বাই জয় থেকে কেবল ১ রান দূরে। তবে হার্দিক পান্ডিয়ার পর নামান ধীর এসে ইশান মালিঙ্গার ৩ বল খেলে ০ রানে আউট হয়ে গেলে ম্যাচ জেতানোর দায়িত্ব বর্তায় দলের আট নম্বর ব্যাটার মিচেল স্যান্টনারের কাঁধে। শেষ পর্যন্ত ১১ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটের দাপুটে জয় পায় মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এই জয়ে টুর্নামেন্টে সপ্তম ম্যাচে এসে তৃতীয় জয় পেলো মুম্বাই, অন্যদিকে হায়দ্রাবাদ ৭ ম্যাচ খেলে পাঁচটিতেই হারের মুখ দেখলো।
স্কোরকার্ড:
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ: ১৬২/৫
(অভিষেক ৪০, ক্লাসেন ৩৭, জ্যাকস ২/১৪)
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স: ১৬৬/৬
(জ্যাকস ৩৬, রিকেলটন ৩১, কামিন্স ৩/২৬, ২/৩৬
ফলাফল: মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী।