বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ছয় বলে ছয় ছক্কায় পরাগের নতুন ইতিহাস

আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টানা ছয় বলে ছয়টি ছক্কা মারার কীর্তি গড়লেন রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটার রিয়ান পরাগ। রবিবার (৪ মে) কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে স্বাগতিক কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে খেলতে নেমে এ কীর্তি গড়েন রাজস্থানের ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।

আরও পড়ুন: দুই প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে শিরোপার স্বপ্ন বাংলাদেশের

এদিন ম্যাচ জেতার জন্য রাজস্থানের সামনে লক্ষ্য ছিল ২০৭ রান। একের পর এক টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতাত তখন রাজস্থানের অবস্থা পুরোপুরি নড়বড়ে। ১২ ওভারে ১০২ রান তুলতেই প্যাভিলিয়নে ফেরত গেছে ৫ জন ব্যাটার। চাপের মধ্যে ১৩তম ওভারে মঈন আলির প্রথম বল থেকে হেটমায়ার সিঙ্গেল নিয়ে পরাগকে স্ট্রাইক দেন। পরাগ এরপর যা করলেন, তা ছিলো চোখ ধাঁধানো। ওভারের বাকি পাঁচটি বলেই মারলেন পাঁচটি বিশাল ছক্কা, লং অন ও স্কয়ার লেগ দিয়ে হাঁকান চারটি ছক্কা, আর অন্য একটি মারেন লং-অফের উপর দিয়ে। মাঝে অবশ্য একটি বল ওয়াইড করেছিলেন মঈন।

পরের ওভারে আবার হেটমায়ার সিঙ্গেল নিয়ে পরাগকে স্ট্রাইক দেন। রাজস্থানের এই অধিনায়ক এবার ভরসা রাখেন রিভার্স-সুইপে। ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে মারা সেই শটে মিললো আরো একটি ছক্কা। আর তাতেই পরাগের নাম উঠলো ইতিহাসের পাতায়, পূর্ণ করলেন ছয় বলে ছয় ছক্কার অনন্য কীর্তি। এই ৬ ছক্কা বাদেও আরো দুইটি ছক্কা হাঁকান পরাগ। মোট ৮ ছক্কা ও ৬ চারে পরাগের ব্যাটে আসে ৯৫ রান। তবে তাঁর এই ইনিংসের পরও রাজস্থান রয়্যালস জয় পায়নি। শেষ বলের নাটকীয়তায় ম্যাচ হেরে যায় মাত্র ১ রানে। তবে পরাগ যা করেছেন, তা আইপিএলের ইতিহাসে আগে কখনো দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন: অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে আইসিসির ম্যাচসেরা হবার দৌড়ে মিরাজ

এর আগে একাধিকবার টানা পাঁচ ছক্কা হাঁকালেও ছয় ছক্কা মারতে পারেনি কোনো ব্যাটারই। ক্রিস গেইল, কিরন পোলার্ড, রিঙ্কু সিংয়ের মতো হার্ডহিটাররা চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি কেউই। ২০১২ সালে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে পাঁচ ছক্কা মেরেছিলেন গেইল। ১৮৩ রান তাড়া করতে নেমে চাপের মুখে পড়েন এই ব্যাটার। প্রথম ৩৬ বলে করেন মাত্র ৪১ রান। তবে ইনিংসের ১৩তম ওভারে রাহুল শর্মার বিপক্ষে তাণ্ডব চালান ইউনিভার্সাল বস খ্যাত এই ব্যাটার। ওভারের প্রথম বলে সৌরভ তিওয়ারি সিঙ্গেল নিয়ে গেইলকে স্ট্রাইক দেন, এরপরের পাঁচটি বল একে একে উড়ে যায় গ্যালারিতে। গেইল অবশ্য শেষ পর্যন্ত ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। আউট হন ৮১ রানে। তবে নাটকীয়তায় ঠাসা সেই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যাঙ্গালুরু জয় পায় একেবারে শেষ বলে।

পরের বছর টানা পাঁচ ছয় মারার কীর্তিতে গেইলেরই জাতীয় দলের সতীর্থ কাইরন পোলার্ড। জয়ের জন্য যখন মুম্বাইয়ের চার ওভারে ৬২ রানের প্রয়োজন ছিল তখম সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক ক্যামেরন হোয়াইট বল তুলে দেন থিসারা পেরেরাকে। সেই ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা মারে রোহিত শর্মা। এরপর দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল দিয়ে পোলার্ডকে স্ট্রাইক দেন রোহিত। স্ট্রাইকে এসে নিজের খেলা প্রথম বলে পোলার্ড মারেন দারুণ এক চার। এরপরের তিন বলে পোলার্ডের ব্যাট থেকে আসে টানা তিনটি ছক্কা। 

পরের ওভারে বল করতে আসেন লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র। এবার প্রথম বলেই সিঙ্গেল নেন রোহিত, স্ট্রাইকে ফিরে আসেন রোহিত এবং পরের দুটি বলে আরও দুটি ছক্কা মারেন। অর্থাৎ দুই ওভার মিলিয়ে টানা পাঁচটি ছক্কা মারেন পোলার্ড। এক বল ডট দিয়ে মিশ্র এবার করে বসেন কোমর পর্যন্ত উঁচু নো-বল, আর সেখানেও পোলার্ড ছক্কা মারেন। শেষ পর্যন্ত তিন বল বাকি থাকতেই রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নেয় মুম্বাই।

আরও পড়ুন: আইপিএলে আরো ২-৩ মৌসুম খেলতে চান রাসেল

২০২৩ সালের সেই বিখ্যাত ম্যাচের কথাও সহজে ভুলে যাওয়া যায় না। আহমেদাবাদে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের জন্য শেষ ওভাতে প্রয়োজন ছিলো ২৯ রান। কাগজে কলমে সম্ভব হলেও বাস্তব জীবনে এটি একপ্রকার অসম্ভবের কাছাকাছি। টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটে শেষ ওভারে এত রান নিয়ে জেতার রেকর্ড ছিলো না কারোই। উমেশ যাদব প্রথম বল থেকে নেন একটি রান, স্ট্রাইক যায় রিংকু সিং-এর হাতে। এরপর যা ঘটল, তা রীতিমতো হার মানাবে সিনেমার গল্পকেও। ইয়াশ দয়ালের বলগুলিকে লেগ, মিডউইকেট, লং-অফ, স্কয়ার লেগ, সব দিক দিয়ে পাঠিয়ে দেন সীমানার বাইরে। পরপর পাঁচ ছক্কা, কলকাতার জয় আসে ম্যাচের শেষ বলে।

গেইল, পোলার্ড, রিঙ্কু সিংয়েরা অবশ্য পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়েছেন টানা পাঁচ বলে। তবে আইপিএলে এমন ঘটনাও আছে যেখামে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা হাঁকিয়েছে ব্যাটাররা। তবে সেই পাঁচ ছক্কা অবশ্য টানা পাঁচ বলে ছিলো না। পাঞ্জাবের বিপক্ষে রেকর্ড ২২৪ রান তাড়া করতে গিয়ে এক ওভারে পাঁচটি ছক্কা হাঁকান রাহুল তেওয়াতিয়া। শেলডন কর্টলের করা ওভারের প্রথম চার বলে চার ছক্কা হাঁকানো তেওয়াতিয়া মিস করেছেন পঞ্চম বল। আউটসাইড অফের স্লো ডেলিভারিতে বলে ব্যাটে লাগাতে পারেননি এই ব্যাটার। ওভারের শেষ বলে আরো এক ছক্কা মেরেই ক্ষান্ত হন তেওয়াতিয়া।

২০২১ সালে ওভারে পাঁচ ছক্কা হাকাঁনোর কীর্তিতে নাম লেখান রবীন্দ্র জাদেজা। হার্ষাল প্যাটেলের করা ওভারে পাঁচ ছক্কার পাশাপাশি তুলে নেন ৩৭ রান। আর এবার সবাইকে পেছনে ফেলে ছয় ছক্কা হাঁকালেন পরাগ। এই ছয় ছক্কার ইনিংস পরাগকে শুধু রেকর্ডবুকে তুলেই ধরেনি, বরং তাকে দিয়েছে আলাদা পরিচিতি। যেখানে গেইল, পোলার্ড কিংবা রিংকু একধাপ দূরেই থেমে গেছেন, সেখানে তরুণ পরাগ পৌঁছে গেলেন শীর্ষে। এমন নজির আইপিএলে আর নেই।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর