বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

গুজরাটের টপ অর্ডার ত্রয়ীই কি আইপিএল ইতিহাসের সেরা?

আইপিএল ২০২৫-এর সেরা টপ অর্ডার কোন দলের? এই প্রশ্নের উত্তরে দ্বিমত থাকার কথা না ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে। আসরের ৫১টি ম্যাচ পেরিয়ে, শুভমান গিল, সাই সুদর্শন ও জস বাটলার নির্দ্বিধায় এই লড়াই জিতে নিয়েছেন। তবে বাইশগজে তাদের এই আধিপত্য এখন একটাই প্রশ্ন তোলে, গুজরাটের এই ত্রয়ীই কি  তবে আইপিএলের ইতিহাসে কোনো আসরের সেরা?

আইপিএলের ৫১তম ম্যাচ শেষে শুভমান গিল, সাই সুদর্শন ও জস বাটলার আইপিএল ২০২৫-এ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষ চারজনের মধ্যে তিনটি জায়গা দখল করে আছেন। দ্বিতীয়স্থানে থাকা সুরইয়াকুমার ইয়াদাভ আবার একটি ইনিংস বেশি খেলেছেন। গুজরাটের তিন ব্যাটার মিলে দলীয় মোট রানের (অতিরিক্ত বাদে) প্রায় তিন-চতুর্থাংশ রান করেছেন। সংখ্যার বিচারে যা দাঁড়ায় ৭৫.৯%। এই রান করতে অবশ্য সবাই প্রায় সমান অবদান রেখেছেন। সাই সুদর্শনের ব্যাটে এসেছে ২৬.৬%, বাটলারের ব্যাটে ২৪.৮% ও গিল করেছেন ২৪.৫%।

গুজরাটের টপ অর্ডারের প্রাণ সাই সুদর্শন-সুভমান গিল

এবারের আইপিএলে এমন একটি ম্যাচও নেই যেখানে এই তিন ব্যাটারের অন্তত একজন ৫০-এর বেশি রান করেননি। তাছাড়া আইপিএলের ১৮ বছরের ইতিহাসে দলভিত্তিক টপ অর্ডারের সম্মিলিত পারফরম্যান্সের মধ্যে মাত্র দুইবার গড় রান ৫০ এর বেশি হয়েছে। আর এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে এবারের গুজরাট টাইটান্স। ৫৭.৫৬ গড়ে সবাইকে ছাপিয়ে গেছে গিল-বাটলার-সুদর্শনরা। এই তালিকার দুই নম্বরের রয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ২০১৬ সালের আইপিএলস ৫১.২৬ গড়ে রান করেছিলো বেঙ্গালুরুর টপ অর্ডার।

আরও পড়ুন: তামিম-জাওয়াদে স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ

২০১৬ সালে অবশ্য আরসিবির টপ অর্ডারে ব্যাট করেছিলেন মোট পাঁচজন ব্যাটার। যেখানে ভিরাট কোহলি একাই টপ-অর্ডারের মোট রানের ৪৬.৩% করেছিলেন। কোহলির পরেই ছিলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। টপ অর্ডারের ৩২.৫% রান এসেছিলো এই প্রোটিয়া ব্যাটারের ব্যাট থেকে। আরসিবির সেই দলে আরও ছিলেন ক্রিস গেইল, কেএল রাহুল এবং শেন ওয়াটসন। কোহলির রেকর্ড গড়া সে বছর অবশ্য ব্যাট হাতে হতাশ করেছিলেন ক্রিস গেইল। সাতবার এক অঙ্কে আউট হওয়া গেইলের গড় ছিল মাত্র ২২.৭০।

এদিকে টপ অর্ডারে স্ট্রাইক রেটের বিচারে সবার উপরে আছে ২০২৫ সালের পাঞ্জব কিংস। ১৮০.০৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছে পাঞ্জাবের টপ অর্ডার। এরপরের দুই অবস্থানে রয়েছে গত আসরের দুই ফাইনালিস্ট। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের টপ অর্ডারের স্ট্রাইক রেটও ১৮০.০৫। এরপরেই অবস্থান কলকাতা নাইট রাইডার্সের। ১৭৪.১২ স্ট্রাইক রেটে গত বছর ব্যাট করেছে কলকাতা।

এদিকে স্ট্রাইক রেটের বিচারে ৬ষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে গুজরাট। ১৬১.৩২ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন গিল-বাটলার-সুদর্শনকে নিয়ে গড়া গুজরাটের টপ অর্ডার। ডট বলার খেলার ক্ষেত্রেও বেশ কার্পণ্য করে গুজরাটের এই ত্রয়ী। সবচেয়ে কম ২৬.২% শতাংশ ডট বল খেলেছে গুজরাটের এই ব্যাটাররা। 

আরও পড়ুন: অন্ধকার থেকে আলোয় কী ফিরতে পারবেন রাবাদা?

এছাড়াও এবারের আইপিএলে পাওয়ারপ্লেতে গুজরাট গড়ে প্রতি উইকেটে তুলেছে ৯৫.৬৬ রান, যা আইপিএলের ইতিহাসে যেকোনো আসরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই তালিকায় এর আগে সর্বোচ্চ গড়েএ রেকর্ড ছিল ২০২৩ সালের চেন্নাই সুপার কিংসের। সেবার গড়ে প্রতি উইকেটে ৯৩.৬৬ রান করে তুলেছিলো সেই আসরের চ্যাম্পিয়নরা।  এবারের আসরে নিজেদের খেলা প্রথম ১০ ম্যাচের মধ্যে পাওয়ারপ্লেতে গুজরাট মাত্র ছয়টি উইকেট হারিয়েছে, যার মধ্যে একটি আবার ছিলো রান আউট। যদিও পাওয়ার প্লের এই সময়ে গুজরাটের বাউন্ডারি মারার হার ছিলো ২২.৭৭%, যা কিনা এবারের আইপিএলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। তবে এই ধীরগতির শুরুর পরেও তারা বেশিরভাগ ম্যাচেই বড় স্কোর করতে পেরেছে। 

শুধু যে পাওয়ার প্লেতেই রানের ফোয়ারা সাজিয়েছে গুজরাট সেটাও কিন্তু না। মিডল ওভারেও ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছে গুজরাট। যার পুরো কৃতিত্বটাই যাবে এই ত্রয়ীর কাছে। ২০২৫ আইপিএলে ৭ থেকে ১৫ ওভারে গুজরাট প্রতি উইকেটে তুলছে গড়ে ৬৩.৭১ রান এবং একই সময়ে তাদের রান রেট ছিলো ৯.৯১, দুটিই আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এই তালিকার দুইয়ে অবস্থান রয়েছে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের। ৯.৭৭ রান রেটে ব্যাট করা শাহরুখের দলের এভারেজ ছিল ৪১.৯৬।

গুজরাটের এই ত্রয়ীকে সফল করানোর পেছনে রয়েছে দলটির কোচিং প্যানেলের এক মাস্টার প্লান। এবছরের মেগা নিলামের আগে গুজরাট টাইটান্সের হাতে ছিল ৬৯ কোটি রুপি। তার এক-চতুর্থাংশ (১৫.৭৫ কোটি) খরচ করে তারা জস বাটলারকে দলে ভেড়ালেও তখন কাগজে-কলমে তাদের টপ অর্ডার শক্তিশালী দেখালেও প্রশ্ন উঠেছিল, কে ওপেন করবে?

আরও পড়ুন: ক্রিকেট থেকে অস্থায়ীভাবে নি’ষিদ্ধ কাগিসো রাবাদা

গত আইপিএলের সাইকেলে (২০২২–২০২৪) সবচেয়ে বেশি ১৭৯৯ রান করেছিলেন গিল। আর এই তালিকায় বাটলার ছিলেন চতুর্থ, তবে শতকের দিক থেকে আবার শীর্ষে ছিলেন এই ইংলিশ ব্যাটার। এক মৌসুমে সর্বাধিক রানের তালিকাতেও গিলের অবস্থান দ্বিতীয় ও বাটলার ছিলেন তৃতীয় স্থানে। এদিকে, সুদর্শনের আগের ২৫ ইনিংসে ছিল ১০৩৪ রান, গড় ৪৭, স্ট্রাইক রেট ১৩৯.১৭। তবে সুদর্শন বেশিরভাগ রান করেছিলেন তিন নম্বরে, যার মধ্যে ২০২৩ সালের ফাইনালে খেলেছিলেন ৪৭ বলে ৯৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।  

তবে মূলত ডান-বাম হাতি কম্বিনেশনের জন্য গিল-সুদর্শন ওপেনিং জুটি গঠন করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন ছিল বাটলারকে তিনে নামানোটা কতটা যৌক্তিক, কারণ তার সেরা পারফরম্যান্স ওপেনিংয়েই। সেই ইতিহাস বলে, একই হাতের ব্যাটসম্যানদের ওপেনিং জুটি বেশি সফল হয়েছে। যেমন, হবস-রোডস, হবস-সাটক্লিফ, গ্রিনিজ-হেইন্স, হেইডেন-ল্যাঙ্গার, স্ট্রস-কুক সহ আরো অনেকেই। টেস্ট কিংবা ওয়ানডে, এমনকি টি২০ বিশ্বকাপে সাম্প্রতিক চ্যাম্পিয়ন দলেও ছিল একই হাতি ওপেনার। 

তবে গিল-সুদর্শনের জুটিতে শুধু হাতের পার্থক্যই নয়, বরং খেলার ধরনও আলাদা। সুদর্শন বেশিরভাগ সময় ব্যাকফুটে খেলেন। পেসে সেটা ৬২.৫% এবং স্পিনে ৫৫.৪%। তবে স্ট্রাইক রেট ঠিকই ১৫০-এর ওপরে। শর্ট বলের বিপক্ষে স্পিনে তার স্ট্রাইক রেট ১৬৯.২৩। গিল অবশ্য সামনেই বেশি খেলেন, পেসে সেটা ৫০.৫% ও স্পিনে ৫৪.৫%। এছাড়া ৯.৬% শতাংশ পেস ও ৪.৯% শতাংশ স্পিন বলে একেবারে সোজাসুজি বড় শট খেলার প্রবণতা রয়েছে গিলের। দুই ধরনের বলেই তার স্ট্রাইক রেট ১৬০-এর ওপরে। আর এই খেলার ভিন্নতাই প্রতিপক্ষের বোলারদের জন্য এখন দাঁড়িয়েছে কাল হয়।

আরও পড়ুন: ফ্যাসিস্টের সাথে সম্পর্ক নেই, অভিযোগ উড়িয়ে বললেন ফারুক

গুজরাটের এই ত্রয়ী শেষ পর্যন্ত দলকে শিরোপা জেতাতে পারবেন কিনা সেটা হয়তো সময় হলেই বোঝা যাবে। তবে বাইশগজে যেভাবে শাসন করছেন এই তিন ব্যাটার তাতে করে আইপিএলের সেরা টপ অর্ডারের তকমা এই ত্রয়ীর গায়ে লাগলেও সেটা মোটেই ভুল কিছু হবে না। 

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর