বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারিয়ে আইপিএলের আঠারোতম আসর শুরু করলো রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। শনিবার (২২ মার্চ) নিজেদের ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে অধিনায়ক আজিংকা রাহানের অর্ধশতকে ১৭৪ রান সংগ্রহ করে কলকাতা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২২ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষে পৌঁছে যায় বেঙ্গালুরু।
আইপিএলের উদ্ভোধনী ম্যাচে টস ভাগ্যটা জিতে নেন বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ভিরাট কোহলি, সিদ্ধান্ত নেন আগে বল করার। বল হাতে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন জশ হ্যাজেলহুড। বিদায় করেন উইকেট কিপার ব্যাটার কুইন্টন ডি কককে। পাঁচ বলে মাত্র এক বাউন্ডারি মেরেই ইনিংসের ইতি টানতে হয়ে এই প্রোটিয়া ব্যাটারকে।
প্রথম ওভারে উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিছুটা দেখেশুনে শুরু করলেও চতুর্থ ওভার থেকে তান্ডব চালাতে থাকেন অধিনায়ক আজিংকা রাহানে ও সুনীল নারিন। পাওয়ার প্লের প্রথম তিন ওভারে ৯ রান তোলা কলকাতা পাওয়ার প্লের শেষ তিন ওভারে নিয়েছে ৫১ রান। রাশিক সালাম, ক্রুনাল পান্ডিয়া কিংবা ইয়াশ দায়াল, রাহানে-নারিন জুটি ছাড় দেননি কাউকেই।
ইনিংসের নবম ওভারে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন রাহানে। মাত্র ২৫ বলে দুইশোর বেশি স্ট্রাইকরেটে পঞ্চাশ অতিক্রম করেন কলকাতার এই অধিনায়ক। রাহানের সাথে তাল মিলিয়ে রানের চাকা সচল রাখছিলেন সুনীল নারিনও। তবে দশম ওভারের শেষ বলে রাশিক সালামের এক ডেলিভারি অফ সাইডে খেলতে গিয়ে উইকেটের পিছনে জিতেশ শর্মার কাছে ক্যাচ তুলে দেন নারিন। ভেঙে যায় রাহানে-নারিনের ১০৩ রানের অসাধারণ এক জুটি।
নারিনের বিদায়ের পর নিজের মোকাবিলা করার দ্বিতীয় বলেই প্যাভিলিয়নের রাস্তা ধরেন আজিংকা রাহানেও। ক্রুনাল পান্ডিয়ার বল সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে বসেন রাহানে। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কোয়ার লেগে ক্যাচটি ধরে কলকাতার অধিনায়ককে বিদায় করেন রাশিক সালাম। ৩১ বলে ৫৬ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন রাহানে।

দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে হুট করেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ভেংকাটেশ আইয়ার, রিংকু সিং, আন্দ্রে রাসেলরা মেতে ওঠেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। দুর্দান্ত শুরু করেও মিডল অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় কপাল পুঁড়তে শুরু করে রাহানের দলের। তবে আংক্রিশ রাঘুবংশী ২২ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেললেও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটিও যথেষ্ট ছিলো না। শেষ পর্যন্ত বেঙ্গালুরুর বোলারদের দৃঢ়তায় নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলা শেষে ৮ উইকেটে ১৭৪ রানেই থামে স্বাগতিকদের ইনিংস। বেঙ্গালুরুর হয়ে ২৯ রানে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন ক্রুনাল পান্ডিয়া। এছাড়া ২২ রান খরচায় ২ উইকেট পেয়েছেন জশ হ্যাজেলহুড।
১৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বল থেকেই আক্রমণ শুরু করে বেঙ্গালুরু। ওপেনিংয়ে নেমে ফিল সল্ট ও ভিরাট কোহলির তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়ে কলকাতার বোলাররা। বরুণ চক্রবর্তী, ভৈবব অরোরা, স্পেন্সার জনসন কেউই পাওয়ার প্লেতে বেঙ্গালুরুর ব্যাটারদের বিপক্ষে সুবিধা করতে পারেনি। পাওয়ার প্লেতেই বিনা উইকেটে ৮০ রান তুলে ফেলে কোহলির বেঙ্গালুরু, যা কিনা তাদের আইপিএল ইতিহাসে পাওয়ার প্লেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ।

পাওয়ার প্লের অবশ্য কিছুটা লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করে স্বাগতিক বোলাররা। ইনিংসের নবম ওভারে বরুণের বলে বিদায় নেন সল্ট। মাত্র ২৫ বলে অর্ধশতকের দেখা পাওয়া সল্ট শেষ পর্যন্ত নিজের ইনিংস শেষ করেন ৩১ বলে ৫৬ রান করে। সল্টের বিদায়ের পর ব্যাঙ্গলুরুর ইনিংস সামলানোর দায়িত্ব পড়ে ভিরাট কোহলির উপর। যেই কাজটা বেশ দারুণভাবেই করতে থাকেন আইপিএল ইতিহাসের সর্বাধিক রানের মালিক ভিরাট।
ইনিংসের ১৩ তম ওভারে ব্যক্তিগত অর্ধশতকে পৌছান ভিরাট। সেই সাথে গড়েন বেশ কিছু রেকর্ডও। ভারতের মাটিতে আইপিএলে সাত হাজার রানের পাশাপাশি কলকাতার বিপক্ষে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে এক হাজার রানের কীর্তি এই ম্যাচেই গড়েছেন ভিরাট। তিন নাম্বারে নেমে দেভদূত পাডিক্কাল ১০ বলে ১০ রান করে বিদায় নিলে অধিনায়ক রজত পাতিদার খেলতে থাকেন হাত খুলে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংস সাজানো পাতিদার দলকে জয়ের বেশ কাছে নিয়ে আসেন। যদিও জয়ের জন্য যখন প্রয়োজন মাত্র ১৩ রান তখন ভৈবব অরোরার বলে বিদায় নিতে হয় পাতিদারকে।
অধিনায়ক বিদায় নিলেও সেই ১৩ রান করতে খুব বেশি সময় ক্ষেপণ করেননি লিয়াম লিভিংস্টোন। ২ চার ও ১ ছক্কায় ৫ বলে অপরাজিত ১৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন এই ইংলিশ তারকা। অন্য প্রান্তে ৩৬ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ভিরাট কোহলি। স্বাগতিকদের হয়ে সর্বোচ্চ একটি করে উইকেট নেন ভৈবব অরোরা, বরুণ চক্রবর্তী ও সুনীল নারিন।