ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) সুপার লিগে প্রথম দিনের ম্যাচে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। রাউন্ড লিগে দাপুটে পারফরম্যান্সে দ্বিতীয় স্থানে থেকে সুপার সিক্সে উঠেছিল মোহামেডান, আর রূপগঞ্জ ছিল তালিকার ছয় নম্বরে। তবে সুপার লিগের শুরুতে সব হিসেব উল্টে দিয়ে ৯ উইকেটের বড় জয়ে মাঠ ছাড়ল তরুণ-নির্ভর রূপগঞ্জ।
আরও পড়ুন: ডিপিএলেও টিম অ্যানালিস্ট; দেশের ক্রিকেটে নতুন দিগন্তের উন্মোচন
টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রূপগঞ্জ অধিনায়ক আকবর আলী। লিজেন্ড অফ রুপগঞ্জের একাদশের তানজিম হাসান সাকিব ও জাকের আলী অনিক জিম্বাবুয়ের টেস্ট সিরিজে নাম থাকায় তাদের একাদশে পায়নি লিজেন্ড অফ রুপগঞ্জ। তবে তাতে খুব একটা ঝানেলা হয়নি রুপগঞ্জের। কেননা একাদশে নিয়মিত অধিনায়ক আকবর আলী ফেরার সাথে সাথে পেস বোলিং অল-রাউন্ডার চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানকেও একাদশে পেয়েছে লিজেন্ড অফ রুপগঞ্জ। অন্যদিকে মোহামেডানের অবস্থা ছিল বেশ নড়বড়ে। অসুস্থতার কারণে আগে থেকেই দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল। নিষেধাজ্ঞার কারণ বিকল্প অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয়ও অনুপস্থিত। জাতীয় দলের টেস্ট সিরিজ থাকায় মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামকেও পাওয়া যায়নি একাদশে। সুপার লীগের মত গুরুত্বপূর্ণ পর্বের প্রথম ম্যাচে তাই মোহামেডানের অধিনায়কত্বের ভার এসে পড়ে রনি তালুকদারের কাঁধে। তবে এই ম্যাচে ফিরে আসেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান।
তবে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারদের অনুপস্থিতিতে সুপার লীগের প্রথম ম্যাচে মোহানেডানের একাদশ ছিল অনেকটাই দুর্বল। এই ভঙ্গুর একাদশ নিয়ে মাঠে নামা মোহামেডান শুরুতে ভালো করলেও দ্রুত ছন্দ হারায়। ওপেনার তৌফিক খান তুষার ও আনিসুল ইসলাম ইমন কিছুটা ধৈর্য্য ধরে শুরু করলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। অধিনায়ক রনি তালুকদার তো প্রথম বলেই ফিরেছেন গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়ে। এরপর কেউই আর বড় সংগ্রহের দেখা পাননি। ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন বাদে কেউই ২০ রানও করতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির নিয়মিত মুখ ফরহাদ হোসেন এদিন ৪২ বলে ১৫ রান করেন। সুবিধা করতে পারেননি আরাফাত সানি জুনিয়রও। অভিজ্ঞদের মাঝে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একাদশে থাকলেও তিনিও এদিন ব্যর্থ হন, করে ২১ বলে ১২ রান। একের পর এক উইকেট হারিয়ে ২৯ ওভার ৪ বল শেষে স্কোর দাঁড়ায় ১১৭/৭। তখনই নামে বৃষ্টি। রূপগঞ্জের হয়ে তানভির ইসলাম নেন তিনটি উইকেট, পেস বোলিং অল-রাউন্ডার চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান শিকার করেন দুই উইকেট। মোহামেডানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস খেলেন ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন, অন্য ওপেনার তৌফিক তুষার করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ রান।
আরও পড়ুন: মুস্তাফিজকে ম্যানেজ করে খেলাবে মোহামেডান
বৃষ্টির পর ডার্কওয়াথ-লুইস নিয়মে রূপগঞ্জের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২২ ওভারে মাত্র ৯৩ রান। লক্ষ্য ছোট হলেও শুরুটা ভালো হয়নি রূপগঞ্জের। প্রথম ওভারেই জাতীয় দলের ওপেনার তানজীদ হাসান তামিম শূন্য রানে আবু হায়দার রনিকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন নাসুম আহমেদের বলে। তবে এরপর আর কোনো বিপদ হতে দেননি দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকার। দুজন মিলে গড়েন অবিচ্ছেদ্য জুটি। সাইফ খেলেন ৪৪ বলে ৫৫ রানের চমৎকার ইনিংস, এই ইনিংসটি সাইফ হাসান সাজান ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। অপর প্রান্তে সৌম্য সরকার অপরাজিত থাকেন ৩৩ বলে ৩৬ রানে, তার উইলো থেকে আসে ৪টি চারের মার। দুই জনের এই জুটিতে মাত্র ১৩.২ ওভার ব্যাট করে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রূপগঞ্জ, ম্যাচ জিতে নেয় ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে। মোহামেডানের বোলারদের মধ্যে কেউই তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি। একমাত্র উইকেটশিকারী নাসুম আহমেদ ৪ ওভার বল করে ৩০ রান খরচ করেন। ম্যাচ শেষে ম্যাচসেরার পুরষ্কার পান লিজেন্ড অফ রুপগঞ্জের বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম।
বৃষ্টির কারণে খেলার দৈর্ঘ্য কমে এলেও মোহামেডানের ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই ছিল স্পষ্ট দুর্বলতা। অন্যদিকে রূপগঞ্জ তরুণদের নিয়ে গড়া দল নিয়েও প্রথম ম্যাচেই শক্তির প্রমাণ দিয়েছে। এই জয়ে উপার লীগের নেট রানরাটে লম্বা ঝাপ দিলো রুপগঞ্জ, এদিকে খানিকটা পিছিয়ে গেলো মোহামেডান। সুপার লিগের বাকি ম্যাচগুলোতে এই দুই দলের সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। সুপার লিগের প্রথমদিনের বাকি দুই ম্যাচে জয় পেয়েছে আবাহনী ও গুলশান।
স্কোরকার্ড:
মোহামেডান: ১১৭/৭ (২৯.৪ ওভার)
(আনিসুল ৩৫, তানভীর ৩/৩৭, রিজওয়ান ২/৯)
লিজেন্ড অফ রুপগঞ্জ: ৯৪/১ (১৩.২ ওভার) (লক্ষ্য: ২২ ওভারে ৯৩)
(সাইফ ৫৫*, সৌম্য ৩৬*, নাসুম ১/৩০)
ফলাফল: লিজেন্ড অফ রুপগঞ্জ ৯ উইকেটে জয়ী (ডি/এল)