লিটন কুমার দাস—বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক অন্যতম প্রতিভার নাম, যিনি ব্যাট হাতে প্রতিভার দীপ্তিতে অনেকবার আলো ছড়িয়েছেন, আবার অফফর্মের অন্ধকারেও হারিয়ে গেছেন বহুবার। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তেমনি ধারাবাহিকতার অভাবে হয়েছেন সমালোচিতও, পেয়েছেন সমালোচনা। ২০২৪ সালটি তো যেন লিটনের জন্য দুঃস্বপ্ন। ওয়ানডেতে মাত্র পাঁচ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৬ রান—একজন শীর্ষ ব্যাটারের ক্যালিবারের সঙ্গে যা একেবারেই বেমানান। অন্য দুই ফরম্যাটে এক দুটো বিচ্ছিন্ন পারফরম্যান্স বাদ দিলে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন: এক সিরিজ নিয়ে নয়, লিটন করতে চান ভবিষ্যত পরিকল্পনা
তবু ক্রিকেটের গল্প এমনই—একদিকে যখন ছায়া, ঠিক তখনই আলো এসে দাঁড়ায় সামনে। ২০২৫ সাল শুরু হতে না হতেই লিটনের হাতে এল বড় দায়িত্ব—টি-টোয়েন্টি দলের পূর্ণাঙ্গ অধিনায়কত্ব। আর সেই দায়িত্ব নিয়েই প্রথমবারের মতো পূর্ণকালীন অধিনায়ক হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে এলেন লিটন।ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে অফফর্মে থাকা লিটন বলেন, “এটা সত্যি যে আমার ব্যাট থেকে খুব একটা রান আসেনি। কিন্তু প্রতিটি প্লেয়ারেরই আপস অ্যান্ড ডাউনস থাকে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কীভাবে এই অফফর্ম থেকে বেরিয়ে আসা যায়। আমি বিশ্বাস করি, আমার যে ক্যালিবার আছে, সেটা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ দলকে দিতে পারব।”
২০২৫ সালে এখনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি লিটন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ খেলেছেন, যেখানে ছিলেন বিবর্ণ। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ছিলেন না, পিএসএল খেলার জন্য স্কোয়াডে রাখা হয়নি তাকে। পরে ইনজুরিতে ছিটকে যান সেখান থেকেও। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সিরিজ দিয়েই অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর থেকেই লিটনকে ঘিরে আবার শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনার তরঙ্গ। এই প্রসঙ্গে তিনি বললেন, “একজন খেলোয়াড়কে যেমন বাহবা নিতে হয়, তেমনি সমালোচনাও নিতে হবে। সব সময় প্রশংসা আসবে—এমনটা নয়। দুটো মিলিয়েই আগাতে হবে।”

আরও পড়ুন: বিসিবি চাইলে আমরা অবশ্যই পাকিস্তানে খেলতে যাব: লিটন
বর্তমান দলে তিনি অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার। তার কাঁধে এখন লিটন মনে করেন অভিজ্ঞতার ভারের পাশাপাশি নেতৃত্বের দায়িত্বও। প্রশ্ন উঠেছে—অপশন থাকা অবস্থায় অধিনায়কত্ব পাওয়া মানে কি বাড়তি চাপ? লিটনের জবাব সহজ, “আমি যখন অধিনায়ক ছিলাম না, তখনও তো রান আসেনি। কাজেই অধিনায়কত্বকে আলাদা চাপ হিসেবে দেখছি না। বরং দায়িত্বটা সাদরে গ্রহণ করে দলকে জেতাতে পারি—এটাই আমার লক্ষ্য।”লিটন মনে করেন দলের প্রয়োজনে যেরকম ভূমিকা পালন করা উচিৎ, সেরকম ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত থাকবে তিনি ও তার দল। লিটন দাসের সামনে এখন এক লম্বা পথ। ব্যাট হাতে নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ের সঙ্গে নেতৃত্বের পরীক্ষাও। এই দ্বৈত মিশনে তিনি কতটা সফল হন, সেটাই এখন দেখার।