বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

সংগ্রাম থেকে সাফল্যের শিখরে: আশুতোষ শর্মার অপ্রতিরোধ্য ক্রিকেট যাত্রা

আইপিএলের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে লখনউ সুপার জায়ান্টসকে ১ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রের্কড গড়ল দিল্লি ক্যাপিটালস। আর এই রের্কড গড়ার কারিগর হলেন ইমপ্যাক্ট সাব হিসেবে ব্যাটিং এ আসা আশুতোষ শর্মা।

৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা দিল্লি ক্যাপিটালসকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান মধ্যপ্রদেশের এই হার্ড হিটিং ব্যাটসম্যান। গেল মৌসুমে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে আলোচনায় আসেন আশুতোষ। যদিও এর আগে ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়ান্টি ক্রিকেটে যুবরাজ সিং এর দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রের্কড ভেঙে সবার নজরে কাড়েন তিনি।

আশুতোষ শর্মা

আশুতোষ ২০২৩ সালের সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে রেলওয়ের হয়ে খেলতে নেমে অরুণাচল প্রদেশের বিপক্ষে মাত্র ১১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন যা ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম। এর আগে যুবরাজ সিং ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন।

মধ্যপ্রদেশের রতলামে জন্ম নেওয়া আশুতোষ অল্প বয়স থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু তার ছোট শহর থেকে ক্রিকেটার হওয়ার বড় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব ছিল না। তাই মাত্র ৮ বছর বয়সে ক্রিকেট প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ইন্দোরে চলে যান। এই পরিবর্তন মাত্র ১০ বছর বয়সেই তাকে জীবনের কঠিনতম বাস্তবতার মুখোমুখি এনে দেয় ।

খাবার কেনার মতো অর্থও তার কাছে ছিলো না। এটিও জানতেন না পরবর্তী বেলার খাবার আদৌও তার কপালে জুটবে কিনা। এসময় জীবিকার জন্য আম্পায়ারিং করার পেশা গ্রহণ করেন। তাতে আশুতোষের এক বেলার খাওয়ার খরচ জুটতো। এমনকি অন্যের জামাকাপড় ধুয়ে সামান্য উপার্জন করতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা এতটাই প্রবল ছিল যে তিনি কখনও হাল ছাড়েননি।

আশুতোষ শর্মা

আশুতোষের ক্রিকেট জীবনে সবচেয়ে বড় সহায়ক ছিলেন তার কোচ অময় খুরাসিয়া যিনি মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে তাকে ছোটবেলা থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তার কাছেই আশুতোষের ক্রিকেটের হাতেখড়ি। এমনকি এখনও প্রতি ম্যাচের পূর্বে আশুতোষ তার সঙ্গে আলাপ করেন।

আরও পড়ুনঃ আশুতোষ-ঝড়ে অবিশ্বাস্য জয় পেলো দিল্লী

২০১৭-১৮ মৌসুমে জোনাল টি-টোয়েন্টি লীগে মধ্য প্রদেশের হয়ে আশুতোষের টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। এরপর ২০১৯-২০ মৌসুমে বিজয় হাজারে ট্রফিতে খেলার সুযোগ পান। কিন্তু ২০২০ সালে মধ্যপ্রদেশ দলের প্রধান কোচ হিসেবে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত আসার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০১৯ সালে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফির শেষ ম্যাচে আশুতোষ ৮৪ রান করেছিলেন। কিন্তু পরের বছর নতুন কোচের ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় না থাকায় দলে জায়গা হারান তিনি।

২০২০ সালে এক ট্রায়াল ম্যাচে ৯০ রান করেও তিনি দল থেকে বাদ পড়েন। কোভিডের সময় ২০ জন খেলোয়াড় স্কোয়াডে থাকলেও তাকে মাঠে আসতে দেওয়া হতো না। আশুতোষের শুধু হোটেলে থাকতে হতো যা তাকে আরও হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। এই পরিস্থিতি তার জন্য মেনে নেওয়া তার জন্য কষ্টকর ছিলো এবং সেসময় আশুতোষ পুরোপুরি ভেঙে পড়েন।

আশুতোষ শর্মা

তারপরও এই কঠিন সময়েও আশুতোষ ক্রিকেট ছাড়েননি। ভাগ্যবশত তিনি রেলওয়েতে চাকরি পেয়ে যান যা তাকে কিছুটা স্থিতিশীলতা দেয়।

২০২৩ সালের সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে রেলওয়ের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে তিনি আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর নজরে আসেন। নিলামে পাঞ্জাব কিংস তাকে ২০ লাখ রুপিতে দলে নেয়। আশুতোষ সুযোগ পেয়েই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে ১৭ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ জেতান আর সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে ১৫ বলে অপরাজিত ৩৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যান। তিনি সেরা ইনিংসটি খেলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে। ২৮ বলে ৬১ রানের এই ইনিংসে আশুতোষ শর্মা সময়ের সেরা ফাস্ট বোলার জাসপ্রিত বুমরার একটি ডেলিভারিকে সুইপ শট খেলে সীমানার বাইরের পাঠান। আশুতোষের এই ইনিংসটি ছিলো তার অকুতোভয় ব্যাটিং দক্ষতার এক অনন্য নিদর্শন।

একসময় অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটানো এই তরুণ আজ আইপিএলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন স্বপ্ন যদি সত্যি করতে হয় তাহলে বাধা যত কঠিনই হোক লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। শৈশবের দুঃসময়, কোচের উপেক্ষা, হতাশার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে আশুতোষ শর্মা এখন ভারতের ক্রিকেট দুনিয়ার এক নতুন বিস্ময়। তার গল্প কেবলই রেকর্ড গড়ার নয় এটি প্রমাণ করে প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম ও মানসিক দৃঢ়তা একসঙ্গে থাকলে কোনো প্রতিকূলতাই সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না।

আরও পড়ুনঃ আইপিএলে রোহিতের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড!

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর