পাকিস্তান সুপার লিগের ২৩তম ম্যাচে লাহোরে মুখোমুখি হয়েছিল ইসলামাবাদ ইউনাইটেড এবং কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স। দুর্দান্তভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করা ইসলামাবাদ ইউনাইটেড শেষ দুই ম্যাচে টানা হেরে একটু বিপাকে ছিল, অন্যদিকে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সও ছিল জয়ের খোঁজে। জয়ের লক্ষ্যে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে বল হাতে এদিন শুরুটা খুব একটা ভালো করতে পারেনি কোয়েটার বোলাররা। অন্যদিকে ইসলামাবাদের দুই ওপেনার শাহিবজাদা ফারহান এবং ক্যারিবিয়ান কাইল মায়ার্স দারুণ শুরু করেন। পাওয়ার প্লেতে এই দুই ব্যাটার ৫৮ রান তুলে ফেলেন, তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আউট হয়ে ফিরে যান কাইল মায়ার্স। আবরার আহমেদের বলে বোল্ড হওয়ার আগে কাইল মায়ার্স তিনটি চার ও একটি ছক্কায় ১৭ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলেন।আরেক ওপেনার শাহিবজাদা ফারহান এ বছরটা যেন স্বপ্নের মতো কাটাচ্ছেন, প্রতি ম্যাচেই দারুণ শুরু এনে দিচ্ছেন দলকে। তবে কাইল ফিরে যাওয়ার পর কলিন মুনরো ও অধিনায়ক সালমান আলী আঘা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তাদের ফিরে যাওয়ার পরপরই বিদায় নেন শাহিবজাদা ফারহানও। ফারহানের ব্যাট থেকে এদিন আসে দুটি চার ও চারটি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৯ রানের ইনিংস।

আরও পড়ুন: তামিম-জাওয়াদে স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
এরপর আন্দ্রিজ গাউস এবং মোহাম্মদ শাহজাদও সুবিধা করতে না পারলে ৯১ রানের মধ্যেই ছয় উইকেট পড়ে যায় ইসলামাবাদের। সেখান থেকে দলকে কিছুটা টানেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ব্যাটিং অর্ডারের নিচের দিকে এক শক্তিশালী ইনিংস খেলে দলকে আবার লড়াইয়ে ফেরান তিনি। ১টি চার ও পাঁচটি ছক্কায় মোহাম্মদ নাওয়াজ ৩৪ বলে ৪৯ রানের ইনিংস খেলেন। এক রানের জন্য অর্ধশতক বঞ্চিত হলেও নাওয়াজের ইনিংসটি দলকে দিয়েছে সম্মানজনক স্কোরের ভিত।

তাকে সহায়তা করেন হায়দার আলী (৮ বলে ১০) এবং জেসন হোল্ডার (১১ বলে ১৪)। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ইসলামাবাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ১৫৭ রান। কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের পক্ষে এদিন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট পান অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ, যিনি বিপিএল থেকেই বল হাতে দারুণ ছন্দে আছেন।

আরও পড়ুন: গুজরাটের টপ অর্ডার ত্রয়ীই কি আইপিএল ইতিহাসের সেরা?
১৫৮ রানের লক্ষ্যে এদিন ওপেন করতে নামেন অধিনায়ক সাউদ শাকিল এবং ফিন এলেন। তাদের ওপেনিং জুটি ২৮ রানে ভেঙে যায়। সাউদ শাকিল আউট হওয়ার পরপরই ফিন এলেন বিদায় নিলে দলের হাল ধরেন রাইলি রুশো এবং হাসান নাওয়াজ। দুইজনের ৫২ রানের জুটিতে দল এগিয়ে যায় জয়ের লক্ষ্যে।

তবে রাইলি রুশো রানআউট হয়ে ফিরে গেলে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ধস নামে কোয়েটার ব্যাটিং অর্ডারে। মার্ক চ্যাপম্যান, হাসিবুল্লাহ, ফাহিম আশরাফ এবং কাইল জেমিয়েসন দ্রুত বিদায় নিলে মুহূর্তের মাঝেই ১১৭ রানে ৭ উইকেট পড়ে যায় কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের। অন্যপ্রান্তে অবশ্য হাসান নাওয়াজ ঠিকই অপরাজিত ছিলেন এবং তাকে অষ্টম উইকেটে সঙ্গ দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। যে মুহূর্তে ম্যাচটা একপেশে হতে যাচ্ছিলো ওয়াসিম ও নাওয়াজের জুটি ম্যাচটিকে জমিয়ে তুলে। মোহাম্মদ ওয়াসিম ১১ বলে ১৬ রান করে আউট হলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৫ রান দরকার পড়ে কোয়েটার।
শেষ ওভারটি করতে আসেন নতুন বোলার মোহাম্মদ শাহজাদ, যিনি এই ইনিংসে আগে কোনো বলই করেননি। প্রথম বলেই সম্ভাবনা তৈরি করে শাহজাদ, তবে নাওয়াজের ক্যাচটি শাহজাদ নিজেও ফেলে দেন প্রথম বলে। দ্বিতীয় বলেও তৈরি হয় নাটক।

দ্বিতীয় বলেই নাওয়াজের ক্যাচ উঠে,, তবে সেটি লুফে নিতে ব্যর্থ হন সালমান ইরশাদ। দুই বলে দুইটি জীবন পাওয়ার পর হাসান নাওয়াজ ৩৮ বলে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন। তবে তৃতীয় বলেই ছক্কা হজম করেন নাওয়াজের কাছে। তবে চতুর্থ বলে আবারও ক্যাচ তুলে দেন হাসান নাওয়াজ, সেই ক্যাচটিও লুফে নিতে ব্যর্থ হন ইসলামাবাদের ফিল্ডাররা। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচে শেষ ২ বলে যখন ৫ রান লাগে, তখনই ছয় মেরে নাওয়াজ ম্যাচ জিতিয়ে দেয় কোয়েটাকে। শেষ ওভারে ইসলামাবাদের ক্যাচ মিসের মহড়ায় শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটা জিতে নেয় কোয়েটা। শেষ পর্যন্ত ২ চার ও ৪ ছক্কায় হাসান নাওয়াজ ৪১ বলে ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
এই হারে টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয় হারের স্বাদ পেলো ইসলামাবাদ। অন্যদিকে এই ম্যাচ জিতে ১১ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেলো কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স।
স্কোরকার্ড:
ইসলামাবাদ ইউনাইটেড : ১৫৭/৯
(নাওয়াজ ৪৯, ফারহান ৩৯, ফাহিম ৪/২৫)
কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স: ১৫৯/৮ (১৯.৫ ওভার)
(হাসান নাওয়াজ ৬৪*, রুশো ২৭, ইরশাদ ২/৩১, নাসিম ২/৩১)
ফলাফল : কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স ২ উইকেটে জয়ী