ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরুটা করেছিল আগুনঝরা। মাত্র ৯ বলেই তুলে নিয়েছিল ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার—জেমি স্মিথ ও বেন ডাকেট, দুজনেই ফিরেছেন শূন্য রানে। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ২ রান, উইকেট ২টি। এরপর ৯৩ রানে পড়ে যায় চতুর্থ উইকেট। চাপে নুইয়ে পড়া এক ইংলিশ দল, যাদের সামনে ৩০৯ রানের লক্ষ্য। মনে হচ্ছিল, আজ বুঝি ওয়েস্ট ইন্ডিজই লিখে দেবে গল্পের শেষাংশ।

কিন্তু জো রুটের ব্যাটে লেখা হল এক মহাকাব্য। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল ওয়ানডে ব্যাটার হিসেবে এই ম্যাচেই পেছনে ফেললেন ইয়ন মর্গানকে, আর একই ম্যাচে গড়ে ফেললেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস—১৬৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে এনে দিলেন তিন উইকেটের দুর্দান্ত জয়। সঙ্গী ছিলেন উইল জ্যাকস (৪৯) এবং হ্যারি ব্রুক (৪৭), তবে গল্পটা নিঃসন্দেহে রুটের একার।
এর আগে, টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের মূল স্তম্ভ ছিলেন কেসি কার্টি। ১০৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন তিনি, তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ শতক। শেষ ৪ ম্যাচে এটি কেসির তৃতীয় শতক, এবারের ইউরোপীয় সফরটা যে দুর্দান্ত কাটাচ্ছেন কেসি, সে তো বলার অপেক্ষাই রাখে না৷

শুরুতে ব্র্যান্ডন কিংয়ের (৫৯) সঙ্গে গড়েছেন ১৪১ রানের এক চমৎকার জুটি। শেষ দিকে অধিনায়ক শাই হোপ যোগ করেছেন ৭৮ রান। তবে তারা ইনিংস শেষ করতে পারেনি পূর্ণ ৫০ ওভার, ৪৯.৪ ওভারে থেমেছে ৩০৮ রানে। ইংল্যান্ডের পক্ষে আদিল রশিদ ৪ উইকেট নিয়েছেন ৬৩ রান দিয়ে। সাকিব মাহমুদের শিকার ৩ উইকেট। এই ম্যাচটি আদিল রশিদ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের স্পিনার হিসেবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বনে যান।

আরও পড়ুন: বিশাল হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে জরিমানা
৩০৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুরু ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। ওপেনিং জুটিই গড়তে পারেনি কোনও রান। বেন ডাকেটের বাজে ফিল্ডিং ও ক্যাচ ফেলা হয়তো তার ব্যাটিংয়ে আস্থাহীনতার ইঙ্গিত। মাঝে নতুন অধিনায়ক ব্রুকের সাথে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন রুট। তবে এরপর বাটলারও সাজঘরে ফিরে শূন্য রানে৷ কিন্তু সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। রুটের সঙ্গে উইল জ্যাকস গড়েন ১৪৩ রানের জুটি, মাত্র ১২২ বলে। জ্যাকসের ইনিংস ছিল ধীরলয়ে, ৪৯ রানে থেমেছেন তিনি। তবে রুট তখন তীব্র ছন্দে, পরবর্তী ২৪ বলে তুলে নেন ৪৩ রান।

আরও পড়ুন: হারিসের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে পাকিস্তানে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
জ্যাকসের বিদায়ের পরও থামেননি রুট। ১২৯ বলে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে পেরোলেন দেড়শো রানের গণ্ডি। প্রথম ইংরেজ ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৭০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন রুট। ফোর্ডের এক ওভারে মারেন চারটি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি। ম্যাচ শেষ করেন অন-ড্রাইভে চারের মাধ্যমে—তখনও হাতে ছিল ৭ বল, উইকেট ৩টি।অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়দৃপ্ত প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন ভেঙে যায় ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতায়। কার্টিকে দুইবার জীবন দিয়ে বসে ইংল্যান্ড, একইসঙ্গে রুটকেও দিয়েছিল রানআউটের সুযোগ—কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। ব্রুককেও জীবন দেন হোপ। অথচ এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ম্যাচের চিত্র হতে পারত একেবারে ভিন্ন।জো রুট হয়তো এই সময়ের দ্রুততম ফিনিশার নন, কিন্তু আজকের ইনিংস বলে দিল—চাপের মাঝে কে ক্লাস দেখাতে জানে, কে জানে কীভাবে একাই বয়ে নিতে হয় ৩০৯ রানের পাহাড়। ক্যাম্পেইনের প্রথম ম্যাচে ২৩৮ রানে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু রুটের ব্যাটের জাদু তাতে ছেদ ফেলল। সিরিজ জিতে নিল ইংল্যান্ড, এক ম্যাচ হাতে রেখেই।
স্কোরকার্ড:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩০৮/১০ (৪৭.৪ ওভার)
(কেসি কার্টি ১০২, শাই হোপ ৭৮, আদিল রশিদ ৪/৬৩)
ইংল্যান্ড: ৩১২/৭ (৪৮.৫ ওভার)
(জো রুট ১৬৬*, জোসেফ ৪/৩১)
ফলাফল: ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে জয়ী