‘লাহোর কালান্দার্স যেনো একটুকরো বাংলাদেশ।’ প্রথমবারের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের একই দলে বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটার ডাক পেয়েছেন। এমনকি বেশ ভালো সম্ভাবনাই আছে তিনজনেরই একই ম্যাচে মাঠে নামার। আর তা যদি হয়েই যায় তবে পাকিস্তানের সুপার লিগের প্লে-অফের মঞ্চও ভাসবে নতুন রঙ্গে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের তিন ক্রিকেটারই একই সাথে বাইরের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবে, কি দুর্দান্ত এক খবরই বটে!
চলতি পিএসএলে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছিলেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তবে আসরের শুরুটা হয় তার হতাশা দিয়েই। প্রথম ম্যাচেই ছিলেন বেঞ্চে বসে, তার দলও হেরে বসে সেই ম্যাচে। এরপরেও রিশাদকে একাদশে সুযোগ দেয় লাহোর কালান্দার্স। দলটির ভালো সময়ও যেনো শুরু সেখান থেকেই।

আরও পড়ুন: এলিমিনেটর ম্যাচের আগে আবারও লাহোরে ফিরলেন রিশাদ
নিজের অভিষেক ম্যাচেই নেন ৩ উইকেট, পরের ম্যাচে আবারও ৩ উইকেট। একসময় তো পিএসএলের চলতি আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই পরবর্তীতে ৯ উইকেট পান। পাকিস্তানের এই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ৯ উইকেট শিকার, এমন দারুণ সময়টাই কিনা থেমে যায় ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক অরাজকতায়।
সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায় লিগ, থেমে যায় ক্রিকেটের স্পন্দনও। অন্যান্য বিদেশির মতো রিশাদও পাকিস্তান ছাড়েন। পরবর্তীতে জাতীয় দলের হয়ে দুবাইতে যান আরব আমিরাতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। সেই রিশাদকেই কিনা আবারও ফিরিয়েছে লাহোর, তাও কিনা গুরুত্বপূর্ণ এলিমিনেটরের ম্যাচকে সামনে রেখে।

অন্যদিকে নতুন করে শুরু হওয়া এই লিগে ডাক পেয়েছেন সাকিব আল হাসানও। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে তিনি খেলেছেনও৷ যদিও ড্যারেল মিচেলের বদলি হয়ে আসা সাকিব সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে শূন্য রানে ফেরার পর বোলিংয়েও ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে লাহোরের মালিক এখনো আস্থা রাখছেন তার উপর। জানিয়েছেন, সাকিবের উপস্থিতিই বাড়িয়েছে দলটির আত্মবিশ্বাস। তবে কী গুরুত্বপূর্ণ এলিমিনেটরের ম্যাচে আবারও মাঠে দেখা যাবে সাকিবকে? এই অলরাউন্ডার অবশ্য নিজেও চাইবেন দলের আস্থার প্রতিদান দিতে।
আরও পড়ুন: চূড়ান্ত হলো আইপিএলের প্লে-অফের লাইনআপ
এদিকে প্রথমবারের মতো বিদেশি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে মাঠে নামার অপেক্ষায় অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও তিনি এর আগে সিপিএলে ডাক পেয়েছিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত খেলা হয়নি। এবার যদি পিএসএলের মঞ্চে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে মাঠে নামেন, তাহলে সেটাই হবে তার আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্যারিয়ারের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

এবারের পিএসএলে হঠাৎ করেই ডাক পেয়েছেন মিরাজ। জাতীয় টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে না থাকায় দলের বাইরে থেকেই আলাদা অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময়েই প্লে-অফের আগে এক কার্যকর অলরাউন্ডারের খোঁজে লাহোর কালান্দার্স নজর দেয় তার দিকে। লাহোরের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় সিকান্দার রাজা ইতিমধ্যে জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট খেলতে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছেন। ফলে তার জায়গায় একজন বিকল্প খুঁজছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট। সেই শূন্যস্থান পূরণের লক্ষ্যেই তারা চেয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজকে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একই সাথে তিন বাংলাদেশি ক্রিকেটারকে খেলাবে কিনা লাহোরের এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। যদিও আগের ম্যাচে খেলা তিন বিদেশি ক্রিকেটারের মধ্যে একজন ছিলেন বাংলাদেশি সাকিব আল হাসান, অপরজন লঙ্কান কুশাল এবং জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা। তবে রাজার বদলেই মিরাজ আসায় তার একাদশে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আরও পড়ুন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৪ রানের রেকর্ড জয় আইরিশদের
তিনজনই অলরাউন্ডার, তিন ধরনের বৈচিত্র্য, যেখানে সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট-বল দু’দিকেই অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত। অন্যদিকে রিশাদ হোসেন মূলত লেগস্পিনার হলেও ব্যাট হাতে তার কার্যকারিতাও কম নয়। এই তিনজনকে একসাথে মাঠে দেখা মানেই লাহোর কালান্দার্সের স্পিন আক্রমণে বাড়তি শক্তি, বৈচিত্র্য এবং কৌশলগত গভীরতা।

আজকের এলিমিনেটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এই তিন বাংলাদেশিকে একাদশে রাখবে কি না লাহোর— এটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ একদিকে ম্যাচ জিততেই হবে, অন্যদিকে একাদশ গঠনে চাই ভারসাম্য।
তবে যেটাই হোক, পিএসএলের মতো বিশ্বমঞ্চে একই দলে তিন বাংলাদেশি অলরাউন্ডারের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে দেশের ক্রিকেটের জন্য গর্বের বিষয়। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা— এই ত্রয়ী লাহোরের জার্সিতে মাঠে কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন, সেটাই দেখার। আপাতত ক্রিকেটপ্রেমীদের দৃষ্টি আটকে আছে লাহোর কালান্দার্সের একাদশ ঘিরেই।
আরও পড়ুন: লাহোরে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন মিরাজ