পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) সপ্তম ম্যাচে রাওয়ালপিন্ডিতে মুখোমুখি হয়েছিল ইসলামাবাদ ইউনাইটেড এবং মুলতান সুলতান। প্রথম দুই ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে ছিল ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের মুখ দেখেই দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামে মুলতান সুলতান। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মুলতানের অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুই দলের একাদশেই ছিল একাধিক পরিবর্তন।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন ইসলামাবাদের ওপেনার শাহিবজাদা ফারহান। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর এই ম্যাচেও দেখালেন দুর্দান্ত ছন্দে আছেন তিনি। অন্যপ্রান্তে থাকা মার্কিন ওপেনার আন্দ্রিজ গাউজ অবশ্য এদিনও সুবিধা করতে পারেননি। মাত্র ১০ বলে ৯ রান করে ডেভিড উইলির শিকার হন তিনি।
আরও পড়ুন: স্টার্কের জাদুতে সুপার ওভারে শ্বাসরুদ্ধকর জয় দিল্লীর
তবে ফারহান ঠিকই তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরির পর এই ফিফটি যেন আরও একবার বুঝিয়ে দিল—পিএসএলের আলোচনার কেন্দ্রে আছেন তিনিই। শেষমেশ ৩৫ বলে ৫৩ রান করে ফিরে যান এই ইনফর্ম ব্যাটার।
এরপর ব্যাট হাতে মাঠে নামেন ইসলামাবাদের অধিনায়ক শাদাব খান। তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধেন কলিন মুনরো। দু’জন মিলে ইনিংসকে এগিয়ে নিতে থাকলেও শাদাব খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি, ১১ বলে ১৪ রান করে ফিরে যান তিনি। উইকেটকিপার ব্যাটার আজম খানও ব্যর্থ হন এদিন। উইকেট পড়লেও অন্যপ্রান্তে কলিন মুনরো খেলেছেন ঝড়ো এক ইনিংস। মাত্র ২৫ বলে ৪৮ রান করে দলকে এনে দেন ভিত শক্ত করার স্বস্তি।শেষ দিকে জ্বলে উঠেন হায়দার আলী ও জেসন হোল্ডার। দু’জনের ইনিংসে ২০০ পেরিয়ে যায় ইসলামাবাদের সংগ্রহ। হায়দার ১৬ বলে ৩৩ এবং ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার হোল্ডার ১৪ বলে ৩২ রান করেন। মূলত এই দুইজনের ক্যামিও ইনিংসের সুবাদে বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় ইসলামাবাদ। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ২০২ রান তোলে ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। মুলতান সুলতানের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট দখল করেন ইংলিশ পেসার ক্রিস জর্ডান।
আরও পড়ুন: রিশাদের বোলিং দেখে রাশিদ খানকে স্মরণ বিলিংসের
২০৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় মুলতান সুলতান। গতিময় বোলার নাসিম শাহের ডেলিভারিতে সাজঘরে ফিরে যান মুলতানের বিদেশি ওপেনার শাই হোপ। তবে দ্বিতীয় উইকেটে মুলতান অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ও উসমান খান মিলে ৩২ বলে ৫৯ রানের জুটি গড়লে ম্যাচে ফিরে আসে মুলতান সুলতান। উসমান খান ৩১ রান করে আউট হলে ব্যাট হাতে নামেন কামরান গোলাম। তাঁর সঙ্গে কিছুটা সময় ক্রিজ ভাগ করেন রিজওয়ান। কিন্তু হঠাৎ করেই ম্যাচে আসে মোড়। রিজওয়ান এবং কামরান দুইজনই পরপর আউট হয়ে গেলে বিপদে পড়ে মুলতান সুলতান। তাদের এই ব্যর্থতায় চাপ আরও বেড়ে যায় দলের উপর। এরপর ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা করেন নিউজিল্যান্ডের মাইকেল ব্রেসওয়েল ও পাকিস্তানি ইফতিখার আহমেদ। কিন্তু মাইকেল ব্রেসওয়েল ১০ বলে ১৬ রানে ফিরে যাওয়ার পর ডেভিড উইলিও খুব দ্রুত আউট হয়ে যান। হোল্ডার এসে একে একে উইকেট নিলে তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ে মুলতানের লোয়ার অর্ডার। ক্রিস জর্ডান, উসামা মির কেউই সুবিধা করতে পারেনি এদিন। ইসলামাবাদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন জেসন হোল্ডার এবং এরই মধ্য দিয়ে পিএসএলে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় রিশাদকে টপকে যান ক্যারিবীয় এই অল-রাউন্ডার। রিশাদ হোসেন যেখানে ২ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছেন, জেসন হোল্ডার সেখানে ৩ ম্যাচে নিয়েছেন ৯টি উইকেট।
শেষদিকে ম্যাচের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠে দুই ভাইয়ের লড়াই। বল হাতে ইসলামাবাদের নাসিম শাহ বল করেন মুলতান সুলতানের ১১ নম্বর ব্যাটার উবাইদ শাহকে। তবে এ ব্যতীত ম্যাচের শেষভাগে তেমন কোনো উত্তেজনা ছিল না। শেষদিকে ইফতিখার কিছুটা লড়াই করলেও তা কেবল পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়। শেষ উইকেট হিসেবে ইফতিখার ২৬ বলে ৩২ রান করে আউট হলে মুলতাম অল-আউট হয় ১৫৫ রানে। এই জয়ে তিন ম্যাচে তিন জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইসলামাবাদ ইউনাইটেড। দুই নম্বরে অবস্থান করছে বাংলাদেশের রিশাদ হোসেনের লাহোর কালান্দার্স। এদিকে দুই ম্যাচ খেলে একটিতেও না জিতে পয়েন্ট টেবিলের তলানীতে আছে মোহাম্মদ রিজওয়ানের মুলতান সুলতান।
স্কোরকার্ড:
ইসলামাবাদ ইউনাইটেড: ২০২/৪ (২০ ওভার)
(শাহিবজাদা ৫৩, মুনরো ৪৮, হায়দার ৩৩, হোল্ডার ৩২, জর্ডান ২/৪১)
মুলতান সুলতান: ১৫৫/১০ (১৮.৪ ওভার)
(রিজওয়ান ৩৮, ইফতিখার ৩২, উসমান ৩১, হোল্ডার ৪/২৫, ইমাদ ২/৩৩)
ফলাফল: ইসলামাবাদ ইউনাইটেড ৪৭ রানে জয়ী।