দক্ষিণ ভারতের দুই শহর বেঙ্গালুরু ও হায়দরাবাদ শুধু ভৌগোলিক সীমায় নয়, নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইস্যুতেও একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে মাঝেমধ্যেই। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবার গিয়ে ঠেকেছে আইপিএলের মাঠ পেরিয়ে বিজ্ঞাপনচিত্রে, যার কেন্দ্রে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ট্রাভিস হেড।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে মাঠ মাতানো হেড বর্তমানে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে খেলছেন। ঠিক এই পার্থক্যটাই হয়তো কাজে লাগাতে চেয়েছে উবার— যারা সাম্প্রতিক একটি বিজ্ঞাপনে ট্রাভিস হেডকে দিয়ে বেঙ্গালুরুকে ব্যঙ্গ করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আর এই ব্যঙ্গ যে আর কৌতুক হিসেবে নেয়নি বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজি, তার প্রমাণ মিলেছে দিল্লি হাইকোর্টে। উবারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মালিকপক্ষ।
আরও পড়ুন: ৯ গোলের রোমাঞ্চে ইতিহাস লিখে সেমিতে ইউনাইটেড
বিতর্কের শুরু গত ৫ এপ্রিল, উবার প্রকাশ করে একটি ৫৮ সেকেন্ডের ভিডিও। সেখানে দেখা যায়, ট্রাভিস হেড এক উবার রাইডারকে নিয়ে পৌঁছান এমন এক স্টেডিয়ামে, যা স্পষ্টতই এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের প্রতিরূপ। ভেতরে ঢোকার আগে হেড বলেন, “বেঙ্গালুরু, তোমরা কি হেড-এক (headache) সামলাতে প্রস্তুত?” এরপর নিজেকে সম্প্রচারকর্মী পরিচয় দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন। সেখানেই স্প্রে দিয়ে বেঙ্গালুরুর নামের ওপর লিখে দেন—“Royally Challenged”। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, নিরাপত্তারক্ষীরা তাড়া করে তাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে হেড বাইকে চেপে পালিয়ে যান এবং শেষদিকে বলেন, “আমি ট্রাভিস হেড, আর আমরা হায়দ্রাবাদি।”
এই বিজ্ঞাপন বেঙ্গালুরুর মালিকদের কাছে মনে হয়েছে সরাসরি ব্যঙ্গ, যা ক্লাবের ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে। আদালতে তারা দাবি করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের ব্র্যান্ডকে হেয় করতে ট্রাভিস হেডকে ব্যবহার করেছে উবার। সবচেয়ে বড় অভিযোগ, বেঙ্গালুরুর অতি পরিচিত স্লোগান ‘এ সালা কাপ নামদে’ অনুমতি ছাড়াই বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে।
বেঙ্গালুরু দলের জনপ্রিয় এই স্লোগানটির বাংলা ভাবার্থ— “এই বছর কাপ আমাদের।” যদিও শিরোপাহীন ইতিহাসের কারণে প্রতি বছরই তা হয়ে দাঁড়ায় বিদ্রুপের উৎস। এবার সেই বিদ্রুপের ইন্ধনই যেন দিল উবারের বিজ্ঞাপন।
এদিকে উবার জানিয়েছে, বিজ্ঞাপনটির উদ্দেশ্য ছিল কেবল শহরের ট্রাফিক জট এবং যাতায়াত নিয়ে হালকা রসিকতা করা। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর নাম বা খেলোয়াড়দের নিয়ে মজা করার কোনো উদ্দেশ্য তাদের ছিল না। তারা মনে করে, বিষয়টিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে আদালতে টেনে এনে জনগণের হাস্যরসের অনুভূতিকে অপমান করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সিনারের মতো করলে ২০ বছর নি’ষিদ্ধ হতাম, দাবি সেরেনার
উবারের আইনজীবী আদালতে যুক্তি দেন, “বিজ্ঞাপনটি সৃজনশীল এবং হালকা ধাঁচের। এতে কোনো কু-উদ্দেশ্য ছিল না।” তবে আদালত এখনো কোনো চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেনি। ট্রাভিস হেডকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির হতে হবে কিনা, সেটিও এখনো স্পষ্ট নয়।
এই ঘটনাই যেন আরও একবার প্রমাণ করে, আধুনিক ক্রিকেট শুধু মাঠেই নয়— বাণিজ্য, বিপণন এবং ব্র্যান্ড ইমেজের লড়াইতেও জমে উঠেছে ভালোভাবে। আর সেই লড়াইয়ে কখন কে হয়ে যায় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু, বলা বড়ই কঠিন।