ফিলি’স্তিনের চলমান নিষ্ঠুরতা, সহিংসতা আর মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে এবার প্রতিবাদী কণ্ঠে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের জাতীয় দলের একাধিক ক্রিকেটার। খেলার মাঠের বাইরে সামাজিক মাধ্যমে তারা জানিয়েছেন তাঁদের অবস্থান—মজলুমের পাশে, মানবতার পক্ষে।
গতিতারকা নাহিদ রানা ৬ই এপ্রিলেই তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন,“এই নিষ্ঠুরতার ভার আমাদের সবার উপর। একদিন আমাদের সবাইকে ইতিহাসের কক্ষে দাঁড়াতে হবে।” ফিলি’স্তি’নের নিপীড়িতদের স্মরণ করে একাধিক ছবি পোস্ট করে বিশ্বকে সোচ্চার করে তুলেছেন ২১ বছর বয়সী এই পেস বোলার।

আরও পড়ুন: পিএসএলে নিজের লক্ষ্য নিয়ে যা জানালেন রিশাদ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রানের মালিক মুশফিকুর রহিম ফি’লি’স্তি’ন এর পতাকার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “হে আল্লাহ, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে যেসব মানুষ নিপীড়নের শিকার—তাদের সাহায্য করুন। হে আল্লাহ, আপনি হোন তাদের রক্ষাকর্তা, সহায়ক, সহচর ও শক্তির উৎস।”
মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ লেখেছেন, “হে আল্লাহ, অনুগ্রহ করে সাহায্য করুন, দয়া করে সাহায্য করুন।হে কারীম, হে রহমানুর রাহিম, সাহায্য করুন, দয়া করে সাহায্য করুন।হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রক্ষাকর্তা—তাদের রক্ষা করুন ও বিজয় দিন। আমিন।এই দৃশ্য সহ্য করার মতো নয়, হে রব, দয়া করে করুন।আপনি আল-আহাদ, আস-সমাদ—দয়া করে তাদের বাঁচান, হে আল্লাহ।”
সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের লেখায় ছিলো নিপীড়িতদের জন্য আকুতি, সেই সাথে যারা এই ধ্বংসযজ্ঞের সাথে জড়িত, তাদের জন্য বিচার চেয়েছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে। টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্য মুমিনুল হৃদয়ছোঁয়া এক প্রার্থনা জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন—“হে আল্লাহ, একজন অক্ষম মুসলমান হিসেবে আমি তোমার কাছে এই আকুতি জানাচ্ছি— তোমার পবিত্র ভূমি এবং এর বাসিন্দাদের তুমি রক্ষা করো। ধ্বংস করো সেই নরপিশাচদের, এবং তাদেরও যারা নিজেদের শক্তি দিয়ে মজলুমদের সহায়তা করতে পারেনি, যারা তেল, অর্থ, অস্ত্রের সাথে থেকেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।”

যেকোনো অন্যায় দেখলে বাংলাদেশের যেসব ক্রিকেটাররা সবার আগে প্রতিবাদ জানান, তাদের মাঝে অন্যতম নুরুল হাসান সোহান। ফি’লি’স্তি’ন ইস্যুতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান লিখেছেন—“যতদিন না ফিলি’স্তিন মুক্ত হবে, ততদিন আমাদের সবার স্বাধীনতাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।” যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীর প্রতিবাদের ভাষা ছিলো কঠোর। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা চাওয়ার পাশাপাশি তিনি মনে করেন, এই গ’ণ’হ’ত্যার বিরুদ্ধে চুপ থাকা মানেও অন্যায়ের শামিল। যুববিশ্বকাপুজয়ী অধিনায়ক আকবর আলীর ভাষায়, “গাজা শুধু একটি ভৌগোলিক নাম নয়, এটি যেন আজ নির্যাতিত মানুষের প্রতীক! দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। পুরো বিশ্ব এই গ্ণহত্যার জন্য দায়ী থাকবে। বিশেষ করে আরবসহ প্রতিটি মুসলিম দেশ যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও এর প্রতিবাদ করেনি। হে আল্লাহ গাজা সহ বিশ্বের প্রত্যেকটা মুসলমানকে আপনি কুদরতি শক্তি দ্বারা হেফাজত করুন!”

আরও পড়ুন: পিএসএলের ধারাভাষ্যে থাকছেন আতহার আলী
বাংলাদেশের বর্তমান সময়ে সবচেয়ে ধারাবাহিক সার তাসকিন আহমেদ মানবিকতার পক্ষে দাঁড়িয়ে লেখেন—“একজন মানুষ ও মুসলমান হিসেবে আমি ফি’লি’স্তি’নের নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি। শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবতার জয় হোক—এই প্রার্থনা।” আরেক পেসার শরীফুল ইসলাম দোয়া চেয়েছেন ফিলি’স্তিনের সকল নিপীড়িত ভাইদের জন্য। বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলাম লিখেছেন, “যে ব্যক্তি একটি নির্দোষ মানুষকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানবজাতিকে হত্যা করলো।” – (সূরা মায়েদা: ৩২) ফিলিস্তিনে প্রতিদিন নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরছে। ওরা আমাদের ভাই, ওরা আমাদের আত্মীয়।দোয়া করুন, গর্জে উঠুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকুন।”

আরও পড়ুন: পিএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন রিশাদের
বাংলাদেশ দলের অন্যতম প্রধান অল-রাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজও মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছেন ফিলি’স্তিনের জন্য। মেহেদী হাসান মিরাজ লিখেছেন, “গা’জার আকাশ আজো বারুদের গন্ধে ভারী। গা’জার আকাশ আজ অন্ধকার, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ঘরবাড়ি, নিস্তব্ধ শিশুরা কাঁদছে নিঃশব্দে। প্রতিটি কান্না প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আমাদের হৃদয়ে। আসুন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলাই, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াই, আর গা’জার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ, নির্যাতিতদের ধৈর্য দিন, গা’জাকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিন। হে পরাক্রমশালী আল্লাহ, গা’জাকে হেফাজত করুন, অসহায়দের সহায়তা করুন। আপনি সর্বশক্তিমান।”
এছাড়াও তাওহীদ হৃদয়, সাদমান ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিবসহ আরো অনেক ক্রিকেটারই আকুতি জানিয়েছেন ফিলি’স্তিনের জন্য। শুধু ক্রিকেটাররাই নয়, পুরো মানবজাতিই প্রার্থনা করছে ফিলি’স্তিনের নিপীড়িতদের জন্য। সামাজিক সচেতনতা, ন্যায়ের পক্ষে এক শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছেন সবাই—মানবতার পক্ষে, মজলুমের পাশে।