বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন উত্তাল সময়। মাঠের পারফরম্যান্সে যেমন ছন্নছাড়া টাইগাররা, তেমনি ক্রিকেট বোর্ডের ভেতরেও বইছে গভীর অস্থিরতার হাওয়া। খেলোয়াড়দের ব্যর্থতার চাপের সঙ্গে যোগ হয়েছে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিসিবির সভাপতির পদে থাকা বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ। সম্প্রতি বোর্ড পরিচালকদের একটি বড় অংশ সরাসরি তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে এবার এনএসসি ফারুক আহমেদের মনোনয়নও বাতিল করলো।
জানা গেছে, বিসিবির মোট ৮ জন পরিচালক স্বাক্ষর করে একটি অনাস্থাপত্র জমা দিয়েছেন, যেখানে স্পষ্টভাবে তারা জানিয়েছেন, ফারুক আহমেদকে তারা আর বোর্ডে দেখতে চান না। এই অনাস্থার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিপিএল নিয়ে গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট এবং বোর্ডের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ফারুক আহমেদের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ। যদিও ফারুক আহমেদ নিজে এই পদ ছাড়ার ব্যাপারে এখনো অনড় ছিলেন।
আরও পড়ুন: ফারুকের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বুলবুল

তবে বোর্ড পরিচালকদের অবস্থানের প্রেক্ষিতে এবার কড়া সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে যেভাবে ফারুক আহমেদকে পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল, সেটি এখন বাতিল করা হলো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিসিবির গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৩.২ (খ)(৪) অনুযায়ী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ২০২৪ সালের ১৯ আগস্টের ৩৪.০৩.০০০০.০০৪.০৩.০২৯-৩০৭৮ সংখ্যক স্মারকে মনোনীত ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে বর্তমানে বিসিবির ৮ জন পরিচালক (যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ) আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা জানানোয় এবং বিপিএল সংক্রান্ত গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে।

এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বোর্ড পরিচালকদের অনাস্থা এবার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেল সরকারের পক্ষ থেকেও। একইসঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠল, বিসিবির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন আর চাপা থাকছে না— তা গড়াচ্ছে বড় ধরনের প্রশাসনিক রদবদলের দিকেও।
আরও পড়ুন: বিনা কারণে পদত্যাগে অনিচ্ছুক – প্রথম আলোকে ফারুক
বাংলাদেশ ক্রিকেট যখন মাঠে পারফরম্যান্সহীনতার ঘোর সঙ্কটে, তখন বোর্ডের অভ্যন্তরে এমন দ্বন্দ্ব ক্রিকেটের সামগ্রিক কাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নির্বাচক প্যানেল, পরিচালক পর্যায় কিংবা বিসিবির সার্বিক সিদ্ধান্ত—সবখানেই এখন এক ধরনের বিশৃঙ্খলা ও আস্থার সংকট স্পষ্ট। এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে না পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেট কেবল মাঠে নয়, প্রশাসনিক দিক থেকেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।