বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ফারুকের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন বুলবুল

‘বিনা বেতনে বাংলাদেশের জন্য কাজ করতে রাজি’- গত মার্চ মাসে অন ফিল্ডকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামিকে এ কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটমস্তিষ্কের অধিকারী আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বিস্তৃতি শুধু বাংলাদেশেই নেই, তিনি আইসিসির কাছেও এক বড় নাম। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরও ২০টি দেশে তিনি কাজ করেছেন, তবে বাংলাদেশ থেকে সেভাবে কখনো কোনো জব অফার আসেনি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কাছে, ‘অন-ফিল্ড’কে একথা জানিয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর যেকোনো দলকে হারাতে পারে বাংলাদেশ: লিটন

তবে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) আরেকটি বড় ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। বর্তমান বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের পদত্যাগ নিয়ে জোর গুঞ্জন চলছে, আর সেই জায়গায় সাবেক অধিনায়ক ও দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নামটি উঠে এসেছে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে। ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) মনোনয়নে বিসিবির পরিচালক হয়ে বোর্ডে আসেন ফারুক আহমেদ। পরিচালকদের ভোটে সভাপতি হন তিনি, সরিয়ে দেওয়া হয় আগের প্রভাবশালী কয়েকজনকে। কিন্তু মাত্র ৯ মাস পরই সেই ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাসভবনে সম্প্রতি এক বৈঠকে ফারুককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁকে দিয়ে সরকার আর বিসিবি পরিচালনা করতে চায় না। বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান সভাপতি জানান, “উপদেষ্টা বলেছেন, বোর্ডের শীর্ষ পদে তিনি পরিবর্তন চান। আমি এখনও কিছু ভাবিনি। মাত্রই গতকাল রাতের ব্যাপার… কিছুটা সময় নিতে চাই।” যদিও ফারুক সরকারের সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন না—এই শর্তে নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছুক। তবে সরকার হয়তো সেই সময়টুকুও দিতে রাজি নয়। সরকার চায় বিসিবিতে নেতৃত্বে আসুক নতুন মুখ এবং সেই নতুন মুখ হিসেবে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম। আইসিসির এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার পর তাঁর বর্তমান মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মাসে। যদিও আইসিসির সঙ্গে আরও এক বছরের চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, তবুও সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে বিসিবির কোনো ভূমিকায় যুক্ত করার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।

বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানান যে, আইসিসিও বেশ খুশি তিনি বাংলাদেশের বোর্ড থেকে অফার পেয়েছেন বলে। এ ব্যাপারে বুলবুল বলেন, “ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পর আইসিসিতে কথা বলেছি আমি। ওদের কোনো বাধা নেই, ওরা বরং খুশিই। ওরাও তো চায় সদস্য দেশগুলিকে যেভাবে পারা যায় সহায়তা করতে। ওরা বলেছে, বিসিবির দায়িত্ব শেষে আবার আইসিসিতে যোগ দিতে পারব। বরং আরও বেটার রোল আমাকে দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ওরা। এমনিতে আমি যে সেক্টরে আছি, এখানে ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজারই শেষ, ওপরে কিছু নেই। তবে অন্যান্য জায়গায় কাজ করার সুযোগ আছে। ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য যে ডেভেলপমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক, সেটি আমারই করা। হয়তো ওই সংক্রান্ত কোনো কাজ বা দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে আমাকে।”

আরও পড়ুন: ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ বিশ্বাস মুশতাকের

যে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে এতদিন কোনো অফার করা হয়নি, এখন সেই বুলবুলেরই দ্বারস্থ হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমিনুল বলেন, “আমাকে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিতে এখনো বলা হয়নি। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে গতকালের সভায়ও আমি ছিলাম না। তবে ১০-১৫ দিন আগে আমার সঙ্গে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তারা আমাকে কোনো একটা ভূমিকায় কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে চাচ্ছেন। আমিও তাতে রাজি হয়েছি।”তিনি আরও বলেন, “আমার বিসিবিতে লম্বা সময় ধরে থাকার ইচ্ছা নেই। আমাকে হয়তো আবেগপ্রবণ ভাবতে পারেন, তবে একটা দেশের যখন সৈনিক দরকার হয়, ওই সৈনিক কিন্তু তার পারিশ্রমিক বা নিজের স্বার্থ দেখে না। কাজটাই তার কাছে আগে। বিসিবির যেকোনো দায়িত্ব নিতে আমি প্রস্তুত।”মাঝে গুঞ্জন উঠে আমিনুল ইসলাম ক্রিকেট বোর্ডের সিইও হবেন, যদিও আমিনুল জানান, তাঁকে বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, সেটি ভিত্তিহীন। তাঁর ভাষায়, “প্রধান নির্বাহী হওয়ার ব্যাপারে কোনো রকম আলোচনা হয়নি, টাকা পয়সা নিয়ে আলোচনা তো দূরের কথা।”সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে আমিনুলকে এনএসসি প্রতিনিধি হিসেবে বোর্ডে পরিচালক করা হতে পারে। এরপর পরিচালকদের ভোটে, সরকারের ইঙ্গিত থাকলে, তাঁকে সভাপতি করা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য—অর্থাৎ আগামী অক্টোবরের নির্বাচন পর্যন্ত। নির্বাচন শেষ হওয়ার পর তিনিও দায়িত্ব ছাড়বেন। নিজে থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন।

তবে এখানেই একটা বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে—এই প্রক্রিয়া আসলে কতটা বৈধ? বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচিত সভাপতির মেয়াদ পূর্ণ না হলে তাঁকে সরানো সম্ভব নয়, যদি না তিনি স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ান। আর যদি সরকার কোনোভাবে চাপ প্রয়োগ করে তাঁকে সরায়, তাহলে সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আইসিসি তাদের সদস্য বোর্ডগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়। শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের অতীত অভিজ্ঞতা তার প্রমাণ। ফলে পরিস্থিতি জটিল। সরকার সরাসরি পদত্যাগে বাধ্য করলে সেটা ‘সরকারি হস্তক্ষেপ’ হিসেবে গণ্য হতে পারে, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপর নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে। এক্ষেত্রে ফারুক আহমেদের ‘স্বেচ্ছায়’ পদত্যাগই হতে পারে একমাত্র উপায়। এই কৌশলই এখন সবচেয়ে সম্ভাব্য রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাই, বর্তমান বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন, সেক্ষেত্রে তিনি শুধু নিঃস্বার্থ সিদ্ধান্তই নিবেন না, দেশের ক্রিকেটের মানও বাঁচাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন, পরিশ্রমের ফল পেয়ে খুশি হাসান

৩১ মে বিসিবির এক জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে, যেখানে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে। জানা গেছে, ফারুক আহমেদ ওই সভার আগেই তাঁর সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন। তবে বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোরকে খোলাসা করে কিছু না বললেও জনাব ফারুক জানিয়েছেন, “এই সভায় আলোচনার অনেক বিষয়ই আছে। আমার ব্যাপারটি এখানে মুখ্য নয়।” যদি তিনি পদত্যাগ করেন, তাহলে সরকার দ্রুত আমিনুল ইসলামকে নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে।বুলবুলের বিসিবিতে প্রত্যাবর্তন নিঃসন্দেহে অনেকের কাছে চমকপ্রদ খবর। দীর্ঘদিন দেশের ক্রিকেট থেকে দূরে থাকা এই সাবেক অধিনায়ক আইসিসির গুরুত্বপূর্ণ পদের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেট প্রশাসনে যথেষ্ট পরিচিতি ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বগুণ ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বিসিবিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে—এমনটাই ভাবছে সংশ্লিষ্ট মহল। তবে এটাও সত্য, এই রদবদলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কিভাবে এগুবে, সেটা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর