আবারো ক্রিকেটে ফিরছেন কাগিসো রাবাদা। মাদক নির্ভরতা নিরাময় কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করে নিষেধাজ্ঞা কমে এসেছে প্রোটিয়া এই পেসারের। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) আইপিএলে গুজরাটের হয়ে মাঠে নামারও সুযোগ রয়েছে রাবাদার সামনে।
বয়সভিত্তিক দলে খেলার সময় থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকান পেস বোলিংয়ের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছিলেন কাগিসো রাবাদা। গতি, আগ্রাসন আর নিঁখুত লাইন লেন্থে বল করতে পারা এই পেসার বিশ্বজুড়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন পরিপূর্ণ বোলার হিসেবে। গত এক দশকে বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটারদের জন্য হয়ে উঠেছেন এক দুঃস্বপ্নের নাম। তবে অপ্রত্যাশিত এক ঘটনায় রাবাদার ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে লেগেছে কালো দাঁগ।

এবারের আইপিএলে গুজরাট টাইটান্সের হয়ে খেলছেন রাবাদা। তবে হুট করেই গত ৩ এপ্রিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ক্যাম্প ছেড়ে রাবাদা পাড়ি জমান নিজ দেশে। সেসময় জানানো হয়েছিল, তিনি ‘ব্যক্তিগত কারণে’ ভারত ছেড়েছেন। তবে গুজরাট টাইটানসের বিবৃতিতে সেই ‘ব্যক্তিগত কারণ’কে ঘিরে তৈরি হয়েছিল অসংখ্য প্রশ্ন। কেউ বলেছিলেন, হয়তো পারিবারিক কোনো সমস্যা, কেউ বলেছিলেন মানসিক অবসাদ। কিন্তু পরবর্তীতে যা সামনে এলো, তা গোটা ক্রিকেটবিশ্বকেই হতবাক করে দিল।
জানা গেলো, ডোপ টেস্টে ব্যর্থ হয়েছেন প্রোটিয়া এই পেসার। এবছরেই এসএ টি-টোয়েন্টি লিগে এমআই কেপটাউনের হয়ে খেলার সময় তার শরীরে পাওয়া গেছে নিষিদ্ধ এক নেশাজাতীয় পদার্থের উপস্থিতি। তবে পারফরম্যান্স বৃদ্ধি করার জন্য নয় রাবাদা এই নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করেছিলেন নিছক বিনোদনের খাতিরেই। তবে খেলার জগতে এই রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ ব্যবহারেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তখনো বিষয়টি গোপন থাকলেও, সময়ের ব্যবধানে অবশেষে নিজের মুখেই সব স্বীকার করে নিয়েছেন এই প্রোটিয়া পেসার।
আরও পড়ুন: দুই প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে শিরোপার স্বপ্ন বাংলাদেশের

এক বিবৃতিতে রাবাদা দোষ স্বীকার করে বলেন, “আমি সম্প্রতি ব্যক্তিগত কারণে আইপিএল থেকে দেশে ফিরেছিলাম। আসলে আমি একটি নিষিদ্ধ মাদক সেবনের জন্য ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছি। আমি যেসব মানুষকে হতাশ করেছি, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ক্রিকেট খেলার সুযোগকে আমি কখনোই হালকাভাবে নেইনি। এটি আমার ব্যক্তিগত স্বপ্নের চেয়েও অনেক বড়, অনেক বিশাল কিছু। আমি এখন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় আছি এবং আমি আবারও প্রিয় খেলায় ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি।”
রাবাদার মাদক গ্রহণের ব্যাপারে দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “ পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে রাবাদা একটি নিষিদ্ধ মাদক গ্রহণ করেছিলেন বলে ধরা পড়েছেন। এরপর ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল তাকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। তাকে সাময়িকভাবে খেলা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ভারত থেকে নিজের দেশে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে গেছেন।” যদিও ঠিক কোন মাদকটি তিনি নিয়েছিলেন, তা প্রকাশ করা হয়নি, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ডোপিং নিয়ম অনুযায়ী যেসব মাদককে ‘অব্যবহারযোগ্য মাদক’ বলা হয়, তার মধ্যে রয়েছে— কোকেইন, হেরোইন, এক্সট্যাসি এমডিএমএ এবং গাঁজার উপাদান টিএইচসি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আঙিনায় নিজের ছাপ রাখার আগেই মাদক নিয়ে নিজের অভিমত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছিলেন রাবাদা। সেখানে তিনি বলেন, “অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না, আমরা কতটা মাদকগ্রস্থ এক সমাজে বাস করছি।” তবে সেই রাবাদাই কিনা এখন শাস্তি পেলেন মাদক সেবনের অভিযোগে।

নিজের এই এক ভুলের জন্য তাই সামগ্রিকভাবে তাকে যাচাই করার অনুরোধও করেছেন এই প্রোটিয়া পেসার। তিনি বলেন, “এই একটি ভুল আমাকে সংজ্ঞায়িত করবে না। ক্রিকেট আমার পরিচয়ের একটি বড় অংশ। আমি চাই, মানুষ যেন আমাকে আমার কামব্যাক দিয়েই চিনে রাখে।” তিনি জানিয়েছেন, পরিবার, বন্ধু ও ক্লাবের সমর্থনে তিনি এই কঠিন সময় পার করছেন এবং নিজেকে নতুন করে গড়তে চান।
আরও পড়ুন: আইপিএলে আরো ২-৩ মৌসুম খেলতে চান রাসেল
রাবাদার পাশে এই সময়টায় যারা ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন তিনি। “পরিবার, বন্ধু, এজেন্ট, ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকা ও গুজরাট টাইটানস, সবাই আমাকে সাহস দিয়েছে। আমি ভেঙে পড়িনি। বরং এই সময়টাই আমাকে শিখিয়েছে, আবার কীভাবে উঠে দাঁড়াতে হয়।”
এই ঘটনাটি ভবিষ্যতে রাবাদার আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্যারিয়ারে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন ছিলো। অস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের শাস্তি কতদিন থাকবে সেটা নিয়েও ছিলো সংশয়। তবে আশার আলো আবারো ক্রিকেটে ফিরছেন রাবাদা। প্রাথমিকভাবে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা পেলেও শাস্তি কমে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা এজ পেসারের। মূলত নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়েছেন রাবাদা। একই সাথে ক্ষমাও চেয়েছেন ক্রিকেট বোর্ডের কাছে। আর এই ক্ষমা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতেই তার এই নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয়েছে।
নতুন শাস্তি অনুযায়ী এক মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে রাবাদাকে। যদিও ২৯ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার এরই মধ্যে এক মাসের শাস্তি ভোগ করেছেন, ফলে সব ধরনের ক্রিকেটে তার খেলতে আর কোনো বাধা নেই। এমনকি মঙ্গলবার (৬ মে) মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে গুজরাট টাইটান্সের জার্সিতে মাঠে নামার সম্ভাবনা রয়েছে তার।

দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যান্টি-ডোপিং কোডের ১০.২.৪.১ ধারা অনুযায়ী “যদি কোনো খেলোয়াড় প্রমাণ করতে পারেন যে তিনি যেটি গ্রহণ করেছেন তা খেলার বাইরে এবং খেলায় পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য নয়, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ তিন মাস নিষিদ্ধ করা হবে। তবে যদি খেলোয়াড় SAIDS অনুমোদিত মাদক নির্ভরতা নিরাময় কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেন, তাহলে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক মাসে নামিয়ে আনা যেতে পারে।”
রাবাদার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। তিনি নির্ধারিত চিকিৎসা কর্মসূচির দুইটি সেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এরপর তার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে দক্ষিণ আফ্রিকার তরফ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “খেলোয়াড় নিজে তার দোষ স্বীকার করেছেন এবং সাময়িক নিষেধাজ্ঞার সময়কাল পূর্ণ সম্মানের সঙ্গে পালন করেছেন।”
আরও পড়ুন: অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে আইসিসির মাসসেরা হবার দৌড়ে মিরাজ
“দক্ষিণ আফ্রিকার ডোপিং নিয়ম অনুযায়ী, খেলোয়াড়কে চিকিৎসা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। রাবাদা সেই কর্মসূচির দুটি সেশন সফলভাবে সম্পন্ন করার পর তার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। তিনি এক মাসের নিষেধাজ্ঞা পালন করেছেন এবং এখন আবার তিনি মাঠে খেলার জন্য প্রস্তুত।”