পাকিস্তান সুপার লিগের ২৪তম ম্যাচে লাহোরে মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক লাহোর কালান্দার্স এবং করাচি কিংস। এই ম্যাচের আগে পয়েন্ট তালিকায় এই দুই দল তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে ছিল, তাই প্লে-অফের অবস্থানটা আরেকটু নিশ্চিত করতে এই দুই দলের কাছে ম্যাচটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে লাহোর কালান্দার্স একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন রিশাদ হোসেন। যেই ইংলিশ পেস বোলিং অলরাউন্ডার টম কারান-এর কাছে জায়গা হারিয়েছিলেন রিশাদ, সেই টম কারানকে টপকে আবার একাদশে ফিরেছেন রিশাদ। তবে রিশাদের এই প্রত্যাবর্তনে নায়ক হয়ে উঠে ইরফান খান নিয়াজী।
গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন করাচি কিংসের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার। ডেভিড ওয়ার্নারের এই সিদ্ধান্তকে কাজে লাগাতে পারেননি করাচি কিংসের শুরুর বোলাররা। লাহোর কালান্দার্সের দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম এবং ফখর জামান-এর সামনে অসহায় হয়ে পড়ে করাচির বোলাররা। শুরুর দিকে ফখর জামান একটু দেখে শুনে খেললেও মারকাটারি ব্যাটিং চালাতে থাকেন মোহাম্মদ নাঈম। মোহাম্মদ নাঈম দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে প্রমাণ করেন কেন তার উপর এত আস্থা রাখছিল লাহোর কালান্দার্স। এতদিন রান না পেলেও লাহোর কালান্দার্স ওপেনার নাঈম এদিন খেলেন দুর্দান্ত এক ইনিংস, ছয় চার এবং পাঁচ ছক্কায় ২৯ বলে ৬৫ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন পাকিস্তানি এই তরুণ ওপেনার। দলীয় আট ওভার হওয়ার আগেই দলীয় সংগ্রহ ৯০ রানে পৌঁছে যায়। কিন্তু দলের রান যখন ৯০, ঠিক তখনই আউট হয়ে যান মোহাম্মদ নাঈম।

আরও পড়ুন: এক মৌসুমে তিন ট্রেবল, ইতিহাসের দোরগোড়ায় বার্সেলোনা
মোহাম্মদ নাঈমের ইনিংসটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই লাহোরে বৃষ্টি শুরু হয়, যে বৃষ্টির জন্য খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ থাকে। নির্ধারিত সময় পর বৃষ্টি থেমে খেলা শুরু হলে ম্যাচটি ১৫ ওভারে নির্ধারিত হয়। ৯০/১ থেকে ব্যাটিং শুরু করা লাহোরের সব ব্যাটার তখন মারকাটারি খেলা শুরু করেন। অপরপ্রান্তে ওপেনার ফখর জামান নিজের পিএসএল ক্যারিয়ারের ২৪তম পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস তুলে নেন। তবে অর্ধশতক তুলে নেওয়ার পরপরই আব্বাস আফ্রিদির দুর্দান্ত ইয়র্কারে আউট হন ফখত। অন্যরা সবাই আসা-যাওয়ার মিছিলে থাকলে উইকেট পেতে থাকে করাচির বোলাররা। ১৫তম ওভার অর্থাৎ শেষ ওভারে রিশাদ নেমেছিলেন এবং নেমে একটি বল খেলার সুযোগ পান, তবে সেই বলে কোনো রান আদায় করতে পারেননি রিশাদ। এক বলে শূন্য রানে অপরাজিত থেকে ইনিংস শেষ করেন তিনি। ১৫ ওভারের খেলা শেষে লাহোরের সংগ্রহ দাঁড়ায় আট উইকেটে ১৬০ রান। করাচির পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন আব্বাস আফ্রিদি। লাহোর ১৬০ রান করলেও বৃষ্টির কারণে ডি এল মেথডে করাচির লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৬৮ রান।

আরও পড়ুন: রিয়ালের রুদ্ধশ্বাস জয়ের রাতে লিভারপুল-ইউনাইটেডের লজ্জা
১৬৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় দুর্দান্ত শুরু করেন করাচির অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ও টিম সেইফার্ট। এই দুই ওপেনার মিলে ২০ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন। তবে হারিস রউফের করা প্রথম বলে ভুল করে ১৩ বলে ২৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন ডেভিড ওয়ার্নার। আরেক ওপেনার টিম সেইফার্ট এদিন ২৪ রান করে আউট হন, তিনি খেলেন ১০ বল। ইনিংসের সপ্তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে আসেন বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। প্রথম ওভারেই তুলে নেন জেমস ভিন্সের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। জেমস ভিন্স এবারের আসরে এখন পর্যন্ত তিনটি ম্যাচে ম্যাচসস্রা হয়েছিলেন, তাই ভিন্সের উইকেটটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল লাহোরকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার জন্য। প্রথম ওভারে সাত রান দিয়ে ভিন্সের উইকেট নেন রিশাদ।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে অবশ্য রিশাদ একটু খরুচে ছিলেন, খরচ করেন ১৩ রান। নিজের শেষ ওভারে ৮ রান দিয়ে তিন ওভারে ২৮ রান দিয়ে ভিন্সের উইকেট নিয়ে কোটা শেষ করেন রিশাদ। করাচির মিডল-অর্ডার ব্যাটার সাদ বাইগ এদিন রানের দেখা পেলেও ড্যারিল মিচেলের এলবিডব্লিউ শিকার হয়ে ফিরে যান। রিশাদ, মিচেল ও রাজার দুর্দান্ত বোলিংয়ে লাহোর বেশ শক্ত অবস্থানেই পৌঁছে গিয়েছিলো, শেষ ১৮ বলে করাচির প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান। সেখানে ১৩তম ওভার করতে এসে অধিনায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদি এসে ২১ রান হজম করলে শেষ ১২ বলে ২৭ রানের প্রয়োজন পড়ে করাচির। শাহীনের ওভারে চড়া হন ইরফান খান নিয়াজী। ১৪তম ওভারেও একই গল্প রচনা করে নিয়াজী ও মোহাম্মদ নবী, এবার বোলারটা ছিলেন হারিস রউফ। যিনি ১৪তম ওভারে খরচ করেন ২০ রান। হারিস রউফ ৩ ওভারে ৪০ এবং শাহীন শাহ ৩ ওভারে ৪১ রান দিয়ে বোলিং স্পেল শেষ করলে ম্যাচ সহজ হয়ে পড়ে করাচির জন্য। শেষ ওভারটা ড্যারাইল মিচেল ৬ রান ডিফেন্ড করতে এলেও সেই রান নিতে বেগ পেতে হয়নি ইন ফর্ম ইরফান খান নিয়াজীর। শেষ পর্যন্ত দুই চার ও পাঁচ ছক্কায় ২১ বলে ৪৮ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলে করাচিকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ইরফান।
এই হারে লাহোর কালান্দার্স পয়েন্ট তালিকায় এক ধাপ পিছিয়ে এলো, অন্যদিকে করাচি কিংস লাহোরকে টপকে তৃতীয় অবস্থানে পৌছে গেলো। এই হারে লাহোর তাদের ঘরের মাটিতে প্রথম হারের স্বাদ পেলো।
স্কোরকার্ড:
লাহোর কালান্দার্স: ১৬০/৮ (১৫ ওভার)
(নাঈম ৬৫, ফখর ৫১, আব্বাস ৪/২৭)
করাচি কিংস: ১৬৮/৬ (১৪.৩ ওভার) (লক্ষ্য ১৬৮)
(নিয়াজী ৪৮*, মিচেল ২/৯, রিশাদ ১/২৮)
ফলাফল: করাচি ৪ উইকেটে জয়ী (ডিএল)