বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে ফের আলোচনায় অনিয়মের অভিযোগ। আর্থিক খাত থেকে শুরু করে ঘরোয়া লিগের বিভিন্ন স্তরে স্বজনপ্রীতির মতো গুরুতর ইস্যু ঘিরে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি বিসিবির প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে নথিপত্র যাচাই করে কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইনভেস্টিগেশন ইউনিট।
তদন্তে উঠে এসেছে মুজিব বর্ষ উদ্যাপনে ব্যবহৃত অর্থের হিসাবের বিশাল ফাঁকফোকর— প্রায় ১৮ কোটি টাকার গরমিল মিলেছে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে। পাশাপাশি বিপিএলের টিকিট বিক্রিতে আর্থিক স্বচ্ছতা এবং তৃতীয় বিভাগের দলবাছাইয়ে প্রভাব খাটানো সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছে তদন্তকারীরা।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিসিবির সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, তদন্ত নিয়ে তারা কোনো রকম গোপনীয়তা বা বাধা সৃষ্টি করবেন না। বরং তদন্তে সহায়তা করাই বোর্ডের নীতিগত অবস্থান।
আরও পড়ুন: বিটিভির প্রতি বিসিবির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ

তিনি বলেন, “যেদিন দুদক আমাদের কার্যালয়ে আসে, সেদিন রাতেই আমি দেশে ফিরি। এরপর থেকে পুরো বিষয়টি নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছি। আমার মনে হয়েছে, তদন্তকারী দল কোনো ভিত্তিহীন সন্দেহে নয়— বরং নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসেছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে আমরা খোলামেলা সহযোগিতা করছি। দুদক যেসব তথ্য বা নথি চেয়েছে, তার সব সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যেই আমাদের সিইও এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।”
তদন্তে যদি কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তারা একচুলও পিছু হটবে না বলেও স্পষ্ট করেন বোর্ড সভাপতি।
তবে শুধু অর্থনৈতিক অনিয়ম নয়, ক্রিকেট মাঠেও অসাধু প্রভাবের ছায়া পড়ছে— তা মানছেন স্বয়ং ফারুক আহমেদ। তাঁর ভাষায়, ঘরোয়া পর্যায়ে ম্যাচ পাতানোর প্রবণতা কিছুটা কমলেও এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি।
তিনি বলেন, “তৃতীয় বা দ্বিতীয় বিভাগে এমন কিছু দল আছে যারা নিজেদের স্বার্থে একাধিক দল মাঠে নামাচ্ছে। বিষয়টা সন্দেহজনক। এখনো যেসব ম্যাচ বাকি, সেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি। চেষ্টা করছি প্রতিটি জায়গায় খতিয়ে দেখতে কোথায় কোথায় দুর্নীতির রেশ থেকে যেতে পারে।”
আরও পড়ুন: শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৭৮ রানের পুঁজি বাংলাদেশের

ম্যাচ গড়াপেটা প্রসঙ্গে ফারুক বলেন, “যদি আপনার সেরা ব্যাটসম্যানকে ইচ্ছে করে আউট হতে বলা হয়, কিংবা ভালো বোলারকে জোর করে ওয়াইড বা নো বল করতে বলা হয়— তাহলে সেটা আর খেলা থাকে না। এই ধরনের সংস্কৃতি থেকে ভালো ক্রিকেটার উঠে আসবে না। আমরা চাই এমন একটি বার্তা দিতে, যাতে কেউ ভবিষ্যতে এসব কাজ করতে সাহস না পায়।”
বিসিবি ইতোমধ্যে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে যাদের দায়িত্ব মাঠের খেলায় সন্দেহজনক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা। ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি বোর্ডে নতুন এলেও এই ইস্যুগুলো নিয়ে কোনো ছাড় দিতে নারাজ।
“আমরা তদন্তে নামব, উদাহরণ তৈরি করব। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে— তাতে যারাই জড়িত থাকুক না কেন।”