চোখে তখন অদ্ভুত দৃপ্ততা, মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সেঞ্চুরির উচ্ছ্বাস। ঠিক এমন মুহূর্তেই অভিষেক শর্মা পকেট থেকে বের করলেন এক চিরকুট। সেই কাগজের ছোট্ট টুকরো যেনো হঠাৎই বদলে দিলো সবকিছু। কারণ সেটি কেবল একটি বার্তা ছিল না, ছিল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা— ‘অরেঞ্জ আর্মির জন্য’ লেখা কয়েকটি শব্দ যেনো পুরো হায়দ্রাবাদ শহরের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠলো।
তবে সেই চিরকুটটা ঘিরেই তৈরি হয়েছে রহস্য। অভিষেকের ওপেনিং পার্টনার ট্রাভিস হেড জানিয়েছেন, এই কাগজটা নাকি তিনি আগের ৬ ম্যাচ ধরেই পকেটে রাখছিলেন। এমনকি ম্যাচ শেষে স্টার স্পোর্টসের ক্যামেরার সামনেও হেড বলেন, “চিরকুটটা শেষ ৬ ম্যাচ ধরেই ছিল ওর পকেটে। অবশেষে আজ সেটা মাঠে বেরিয়ে এলো দেখে ভালো লাগলো।”
আরও পড়ুন: রোনালদোর রকেটে জয়, সামনে নতুন রেকর্ডের হাতছানি
অন্যদিকে অভিষেক শর্মার দাবি একদম আলাদা। ম্যাচ শেষে তিনি জানান, ম্যাচের দিন সকালে নিজেই লিখেছিলেন চিরকুটটা। তার ভাষায়, “প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে কিছু না কিছু লিখি আমি। আজ হঠাৎ মনে হলো যদি কিছু করতে পারি, সেটা হবে সমর্থকদের জন্য। সৌভাগ্যবশত, আমি অনুভব করছিলাম— দিনটা আমারই হতে চলেছে।”
চিরকুট নিয়ে বক্তব্যে যতই পার্থক্য থাকুক, মাঠের পারফরম্যান্সে কোনও বিভ্রান্তি ছিল না। অভিষেক আর হেড মিলে ওপেনিংয়ে গড়েন ১৭১ রানের ভয়ংকর এক জুটি— যা হায়দরাবাদের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অভিষেকের ব্যাট থেকে আসে ৫৫ বলে ১৪১ রান; ট্রাভিস হেডও ৩৭ বলে করেন ৬৬ রান। এই বিশাল জুটির ওপর ভর করে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ ২৪৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ফেলেছে মাত্র ৯ বল বাকি থাকতে।
এই ইনিংসের মাহাত্ম্য এখানেই থেমে নেই। মাত্র ২৪ বছর বয়সী অভিষেক শর্মার ১৪১ রানের ইনিংসটি আইপিএল ইতিহাসে একজন ভারতীয় ক্রিকেটারের পক্ষে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান বলেও উঠে এসেছে আলোচনায়। তাঁর ওপরে আছেন কেবল গেইল (১৭৫) ও ম্যাককালাম (১৫৮)। সেরা পাঁচে অন্য কোনো ভারতীয় নেই!
আরও পড়ুন: ফি’লিস্তিনি শিশুদের সহায়তায় অভিনব উদ্যোগ রিজওয়ানদের
যেখানে আগের ৫ ম্যাচে মাত্র ৫১ রান করেছিলেন অভিষেক, সেখানে এমন অভাবনীয় ইনিংসে হঠাৎ জ্বলে ওঠা যেনো ঠিক সিনেমার মতো। দিনের শুরুতে ফিল্ডিং মিস, পরে এক নো বল থেকে পাওয়া জীবন— এসব মিলিয়ে ভাগ্যও যেনো পাশে ছিল।
শেষ পর্যন্ত, শুধু এক ইনিংস নয়— এটা যেনো ছিল প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন। অভিষেক শর্মার চিরকুটে লেখা শব্দগুলোর ওজন বেড়ে যায় তাঁর ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে। তিনি শুধু ম্যাচই জেতাননি, মনে করিয়ে দিয়েছেন— দায়বদ্ধতা আর বিশ্বাস নিয়ে নামলে খেলাটাও হয়ে ওঠে এক ধরনের কাব্য।