ভারত ও পাকিস্তান, দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মাঝে লম্বা সময় ধরে জমে থাকা রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন মাঝেমধ্যেই চরমে ওঠে, তখন তার রেশ গিয়ে লাগে খেলার ময়দানেও। দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট ম্যাচ বহু বছর ধরেই বন্ধ, দেখা হয় কেবল বিশ্বকাপ কিংবা এশিয়া কাপের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে। সম্প্রতি পেহেলগামের ইস্যুতে আবারও ক্রিকেটে পড়েছে রাজনীতির ছায়া। তবে এমন বাস্তবতায় শান্তির বার্তা দিলেন পাকিস্তানের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মোহাম্মদ রিজওয়ান— চাইলেন, ক্রিকেট যেন কখনো রাজনীতির হাতিয়ার না হয়।
লাহোরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রিজওয়ান বলেন, ‘ক্রিকেট এমন একটা খেলাই, যেখানে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর শেখার মানসিকতা থাকা উচিত। এখানে রাজনীতির কোনো স্থান নেই।’
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হয়ে খেলতে মুখিয়ে আছেন সামিত
তিনি আরও জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে অনেকটাই দূরে থাকায় তিনি রাজনৈতিক টানাপোড়েনের খবর খুব বেশি জানেন না, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা সম্পর্কেও তার খুব একটা ধারণা নেই। “আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন নেই, জানি না দুই দেশের মধ্যে কী ঘটছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, খেলার জগতে রাজনীতির কোনো প্রয়োজন নেই,” বলেন রিজওয়ান।
পাক-ভারত উত্তেজনার মধ্যে কাশ্মীরের পেহেলগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছে। পাকিস্তান যদিও তা প্রত্যাখ্যান করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে। তারই জেরে দুই দেশের মাঝে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে— আকাশসীমা বন্ধ, পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, এমনকি একে অপরের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত— সবকিছু যেন এক অস্থির বার্তা দিচ্ছে উপমহাদেশকে।
এই উত্তেজনার ঢেউ আছড়ে পড়েছে খেলার জগতেও। ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ব্লক করে দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের শীর্ষ ক্রিকেটার বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদি এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট।
আরও পড়ুন: র্যাংকিংয়ে অবনতি বাংলাদেশের, জায়গা হারালো আইরিশদের কাছে
তবে এই সবকিছুর মাঝেও রিজওয়ানের ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছে সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, “বিরাট কোহলি বা জো রুটের মতো তারকাদের সঙ্গে যখন দেখা হয়, আমরা খেলোয়াড় হিসেবেই নিজেদের পরিবারের মতো মনে করি। খেলাটাই আমাদের এক করে দেয়।”
মুলতান সুলতানসের নেতৃত্ব দেওয়া এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মতে, ‘যুদ্ধ নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক মাঠের মাঝে। সম্পর্ক হোক শ্রদ্ধায় গড়া, বৈরিতা নয়।’
রিজওয়ানের এই বার্তায় যেন ফুটে ওঠে এক বন্ধুত্বপূর্ণ বিশ্ব ক্রিকেটের স্বপ্ন— যেখানে জয়ের আনন্দ কিংবা পরাজয়ের হতাশা মিলেমিশে তৈরি করে এক অভিন্ন ক্রিকেটীয় বন্ধন, রাজনীতির হিসাবের বাইরেই।