বিরতির পর আবার ফিরেছে পাকিস্তান সুপার লিগ। পিএসএলের ২৪তম ম্যাচে রাওয়ালপিন্ডিতে মুখোমুখি হয়েছিল পেশোয়ার জালমি এবং করাচি কিংস। রাওয়ালপিন্ডির পিচে আবারও দেখা গেল রান উৎসব। ৪৫১ রান হলো দুই ইনিংসে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল করাচি কিংস। ২৩৭ রান তুলে ব্যাটিংয়ে দাপট দেখানোর পর তারা ২৩ রানে হারিয়ে দিল পেশোয়ার জালমিকে। এই জয়ের ফলে নিশ্চিত হয়ে গেল করাচির প্লে-অফ টিকিট, আর পেশোয়ার পড়ে গেল কঠিন সমীকরণে—শেষ ম্যাচে হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যেতে হবে। রাওয়ালপিন্ডিতে তে এদিন টসে জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন পেশোয়ার জালমির অধিনায়ক বাবর আজম; তবে ডেভিড ওয়ার্নার আগে ব্যাট করতে বাধ্য হলেও বাবরের সেই সিদ্ধান্তকে সাদরেই গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: ইমনকে জয় উপহার দিলেন বোলাররা
ম্যাচের শুরুতেই করাচির ধাক্কা খেতে হয়েছিল। প্রথম বলেই লুক উডের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন বেন ম্যাকডারমট। কিন্তু এরপর দৃশ্যপট পুরোপুরি বদলে দেন ডেভিড ওয়ার্নার ও জেমস ভিন্স। দুইজনই ছিলেন আগ্রাসী মুডে। পাওয়ারপ্লেতে উড ছাড়া পেশোয়ারের অন্য বোলারদের ওপর যেন কোনো নিয়ন্ত্রণই ছিল না। উড নিজের তিন ওভারে দেন মাত্র ১৪ রান, তাতে ১ উইকেটও পান। কিন্তু বাকি তিন ওভারেই উঠে যায় ৪৩ রান।

আরও পড়ুন: টানা তৃতীয়বারের মতো বার্ষিক আয়ে শীর্ষে রোনালদো
ভিন্স ৪৪ বলে করেন ৭২ রান, ১১ চার এবং ১টি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। অন্যদিকে ওয়ার্নার ৫০ বলে খেলেন ৮৬ রানের ইনিংস, দুটি ছক্কার সাথে ওয়ার্নারের উইলো থেকে আসে ১১ চার। স্পিনার থেকে শুরু করে মিডিয়াম পেসার- কেউই সামনে দাঁড়াতে পারেননি এই জুটির। ১৭তম ওভার পর্যন্ত রানরেট ছিল ১০–১১ এর আশেপাশে, কিন্তু শেষ দুই ওভারে যা হলো, সেটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আলি রাজা ও আহমেদ দানিয়াল শেষ দুই ওভারে দেন মোট ৫২ রান। এর মধ্যে ছিল ৬টি ছয় ও ২টি চার। খুশদিল শাহ মাত্র ১৫ বলে করেন ৪৩ রান, আর তার সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি, আফগান এই অল-রাউন্ডার ১ চার ও ৩ ছক্কায় ১০ বলে করেন ২৬ রান। বোলিংয়ে একদমই নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি জালমি। রাজার ৪ ওভারে ৬০, দানিয়ালের ৪ ওভারে ৬৬ রান। দুই জন মিলে দেন ১২৬ রান—টি-টোয়েন্টিতে যেটা বোলিং দলকে ব্যাকফুটে পাঠানোর জন্য যথেষ্ট৷ শেষ পর্যন্ত করাচি ২৩৭ রান করে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে।
২৩৮ রানের লক্ষ্যে পেশোয়ারও রান তাড়া করতে নেমে ভয়ডরহীন শুরু করে। অদিও পেশোয়ার শুরতেই হারান মোহাম্মদ হারিসকে, কিন্তু সাইম আয়ুব ও বাবর আজম মিলে পাওয়ারপ্লেতে তুলেন ৫৯ রান। করাচির স্কোর তাড়ার পথে তখনও পিছিয়ে ছিল না তারা। সাইম ৩ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি মিস করেন, তাকে ফিরিয়ে ব্রেকথ্রু এনে দেন আব্বাস আফ্রিদি। তারপর ব্যাটিংয়ে আসেন টম কোলার-ক্যাডমোর। শুরুতেই একটি ছয় মারলেও এরপর থেমে যান তিনি। ১৫ বলে করেন মাত্র ২০ রান। কিন্তু অপর প্রান্তে বাবর চালিয়ে যান। স্ট্রাইক রেট নিয়ে সবসময় প্রশ্ন থাকলেও এদিন ৪৯ বলে করেন ৯৪ রান। ছয়-চারে সাজানো ছিল তার ইনিংস, পুরো খেলায় তার ব্যাটিং ছিল নিখুঁত।

আরও পড়ুন: অবসর নিয়ে কোহলি সিদ্ধান্ত যৌক্তিক, দাবি শাস্ত্রীর
কিন্তু ইনিংসের ১৮তম ওভারে বদলে যায় সব। একে একে আউট হয়ে যান ক্যাডমোর, ম্যাক্স ব্রায়ান্ট ও বাবর আজম। বাবরের রান আউট ছিল বিশেষ হতাশাজনক। ১০০ রানের খুব কাছে গিয়েও ফিরতে হয় তাকে, আর পেশোয়ারও ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে সেই সময়েই। শেষ দিকে চেষ্টা চালালেও রানের গতি ঠিক রাখতে পারেনি তারা। শেষ দুই ওভারে ২৮ রান এলেও লক্ষ্যটা তখন অনেক দূরের। এই জয়ে করাচি পৌঁছে গেল প্লে-অফে। আর পেশোয়ারের সামনে এখন বাঁচা-মরার লড়াই। সাকিব আল হাসান এর লাহোর কালান্দার্সের বিপক্ষে তাদের পরবর্তী ম্যাচ হয়ে দাঁড়িয়েছে একপ্রকার কোয়ার্টার ফাইনাল। ১৮ই মে তেই প্লে-অফ নিশ্চিত করার লড়াইয়ে নামবে এই দুই দল। সেখানে হারলে করাচিকে বিদায় নিতে হবে এবারের পিএসএল থেকে, সেই ম্যাচে লাহোর হারলে লাহোরকেও বিদায় নিতে হবে একই ভাবে, সেক্ষেত্রে মাত্র এক ম্যাচ খেলেই সাকিবের পিএসএল যাত্রা শেষ হবে।
স্কোরকার্ড:
করাচি কিংস: ২৩৭/৪
(ওয়ার্নার ৮৬, ভিন্স ৭২, খুশদিল ৪৩*, উড ২/১৯)
পেশোয়ার জালমি: ২১৪/৪
(বাবর ৯৪, সাইম ৪৭, আব্বাস ২/৪৮)
ফলাফল: করাচি কিংস ২৩ রানে জয়ী
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ: করাচি কিংস