এপ্রিল মাসের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারের জন্য মনোনীত খেলোয়াড়দের তালিকা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। সোমবার (৫ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরুষ ও নারী দুই বিভাগেই ছয়জন ক্রিকেটারের নাম ঘোষণা করে আইসিসি। এপ্রিল মাসে ব্যাট-বল হাতে দারুণ পারফরম্যান্স করার সুবাদে জায়গা করে নিয়েছেন এই ছয় ক্রিকেটার।

সেরা ক্রিকেটার হবার দৌঁড়ে পুরুষ বিভাগে রয়েছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যেখানে আধিপত্যটা বোলারদেরই বেশি। মনোয়ন পাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ, জিম্বাবুয়ের ব্লেসিং মুজারাবানি ও নিউজিল্যান্ডের বেন সিয়ার্স। এবারই প্রথম আইসিসির মাসসেরা খেলোয়াড়ের মনোনয়ন পেলেন মিরাজ। এপ্রিল মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টে ব্যাট-বলে সমান পারফরম্যান্স করে সিরিজ সেরা হয়েছেন মিরাজ।

প্রথম টেস্টে সিলেটে প্রথম ইনিংসে ৫২ রানে ৫ টি এবং দ্বিতীয় ইনিংসের ৫০ রান খরচায় তুলে নেন ৫ টি উইকেট। যদিও ম্যাচে দশ উইকেট নিলেও স্বাগতিকদের সেই টেস্ট জেতাতে পারেননি মিরাজ। তবে দ্বিতীয় টেস্টে মিরাজ ব্যাট হাতে খেলেন ১০৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস, যা কিনা তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট শতক। সেই টেস্টেও বল হাতে ফাইফার তুলেছেন মিরাজ। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩২ রান খরচায় ৫ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই অলরাউন্ডার। দ্বিতীয় ম্যাচে তার এমন অলরাউন্ড অবদানে বাংলাদেশ সিরিজ ড্র করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুনঃ আইসিসির র্যাংকিংয়ে বড় ধাক্কা বাংলাদেশের
এদিকে মিরাজের সাথে এই তালিকায় আছেন একই সিরিজ দারুন পারফর্ম করা জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানি। দীর্ঘদিন ধরেই জিম্বাবুয়ের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন ব্লেসিং মুজারাবানি। এবারের টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশেরর ব্যাটাররা তার আগুন ঝরানো বোলিংয়ের সামনে কাবু হয়েছে। প্রথম টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৭২ রান খরচায় ৬ নিয়ে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেন মুজারাবানি। এর আগে প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।

ব্লেসিং মুজারাবানির এমন পারফরম্যান্সে জিম্বাবুয়ে ২০২১ সালের পর প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে জয় তুলে নেয়। এপ্রিল মাসে টেস্ট বোলিং র্যাংকিংয়েও ৭০০ রেটিং অতিক্রম করেন মুজারাবনি। হিথ স্ট্রিকের পরে এবারই প্রথম জিম্বাবুয়ের কোনো বোলার হিসেবে ৭০০ রেটিং পার করেছেন এই পেসার।
এদিকে ফেব্রুয়ারিতে অভিষেক হলেও মাত্র দুই মাসের ব্যবধানেই নিজেকে প্রমাণ করে ফেলেছেন নিউজিল্যান্ডের তরুণ পেসার বেন সিয়ার্স। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে মাত্র দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় সিয়ার্সের। সিরিজের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে মাঠে নেমেই অনন্য কীর্তিতে নাম লেখান এই পেসার। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৫৯ রান খরচায় ৫ উইকেট তোলা সিয়ার্স তৃতীয় ম্যাচেও পেয়েছেন ফাইফার।

তৃতীয় ওয়ানডেতেও মাত্র ৩৪ রান খরচায় পাঁচ উইকেট তুলে নেন সিয়ার্স। পরপর দুটি ম্যাচে পাঁচ উইকেট তুলে নজির গড়েছেন এই পেসার। সিয়ার্সের বোলিং জাদুতে তিন ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জয় পায়, এবং সিয়ার্স হন সেই সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। এবার অভাবনীয় এই পারফরম্যান্সের বদৌলতে প্রথমবারের মতো আইসিসির মাসসেরা পুরস্কারের মনোনয়ন পেলেন সিয়ার্স।

এদিকে নারী তিন ক্রিকেটার বাছাই করা হয়েছে সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং রাউন্ড থেকে। মাত্র ২৩ বছর বয়সেই পাকিস্তান নারী দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন ফাতিমা সানা। এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। ৫ ম্যাচে তুলে নিয়েছেন ১২টি উইকেট, এভারেজ মাত্র ১২.২৫। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩ রান খরচায় তুলে নেন চার উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষেও ঝুলিতে নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট। বল হাতে এমন অসাধারণ সাফল্যের জেরেই কোয়ালিফাইং রাউন্ড থেকে সবার আগে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুনঃ ব্যাটসম্যানের পকেটে ফোন, রান নিতে গিয়ে পড়লো মাটিতে
শুধু বল হাতে নয়, নিচের দিকে নেমে ব্যাট হাতে ১০৩ রানও করেছেন করেছেন পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার। তার এই অলরাউন্ড নৈপুণ্য আইসিসি র্যাংকিংয়েরও প্রভাব ফেলেছে। বোলিং ও অলরাউন্ডার দুই বিভাগেই উন্নতি ঘটেছে সানার রেটিংয়ে। এবার এপ্রিল মাসের সেরা নারী ক্রিকেটার হওয়ার জন্য মনোনীত হলেন ফাতিমা। যদি শেষ পর্যন্ত ফাতিমার হাতেই এই পুরস্কার যায় তবে ২০২২ সালের পর প্রথম পাকিস্তানি নারী ক্রিকেটার হিসেবে মাসের সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতবেন ফাতিমা সানা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেইলি ম্যাথিউজ এই পুরস্কার এর আগে জিতেছেন আরো তিনবার। এবার চতুর্থবারের মতো মনোনয়ন পেলেন। বাছাইপর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমেই আলো ছড়ান, যেখানে ৪ উইকেট নিয়ে স্কটল্যান্ডকে আটকে রাখেন, এরপর ব্যাট হাতে করেন ঝড়ো ১১৪ রান। তবে হেইলির এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর সেই ম্যাচে পরাজয় এড়াতে পারেনি ক্যারিবিয়ানরা।
১৩ উইকেট তুলে নিয়ে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও হয়েছেন ক্যারিবিয়ান এই তারকা। নিজেদের শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ২৯ বলে ৭০ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন এই অলরাউন্ডার। তবে তার প্রায় আড়াইশো স্ট্রাইকরেটের কাছাকাছি ইনিংস সত্ত্বেও রান রেটের হিসাবের মারপ্যাঁচে কপাল পুড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বাংলাদেশের থেকে ০.০১ রানরেট কম থাকায় বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ভেস্তে যায় ক্যারিবিয়ানদের।

স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক ক্যাথরিন ব্রাইসের ক্ষেত্রেই গল্পটা একই। হয়তো তিনি তার দলকে বিশ্বকাপে তুলতে পারেননি, কিন্তু তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। ৫ ম্যাচে ৭৩.২৫ গড় নিয়ে ২৯৩ রান করেছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯১, থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ এবং আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৩১ রান করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাছাইপর্বের সেরা ব্যাটার হিসেবে। শুধু ব্যাট হাতে নয়, বল হাতেও ৬টি উইকেট নিয়ে অলরাউন্ড পারফর্মার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তার এমন পারফরম্যান্সের সুবাদে টুর্নামেন্টের ‘প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ’ পুরস্কারটাও গিয়েছে স্কটিশ এই অধিনায়ক।
সেরা ক্রিকেটার বাছাইয়ের এই প্রক্রিয়ায় ভোট দেবে আইসিসি-নির্বাচিত সাংবাদিক, সাবেক খেলোয়াড়, সম্প্রচারক ও হল অব ফেম সদস্যদের নিয়ে গঠিত ‘আইসিসি ভোটিং একাডেমি’। তাঁদের ভোটের ওজন ৯০ শতাংশ। বাকি ১০ শতাংশ ভোট পড়বে সাধারণ ক্রিকেটভক্তদের কাছ থেকে, যারা কিনা আইসিসির ওয়েবসাইটে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে আগামী সপ্তাহে।

আফগানিস্তান থেকে ভোটিং একাডেমিতে রয়েছেন জাভেদ হামিম। অস্ট্রেলিয়া থেকে ভোট দেবেন ড্যানিয়েল চের্নি এবং নারী ক্রিকেটের কিংবদন্তি লিসা স্থালেকার। বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন মাজহার উদ্দিন এবং মো. আরিফুল ইসলাম রনি। ইংল্যান্ডের ভোটার হলেন ক্রিস স্টোকস ও সাবেক নারী ক্রিকেটার লিডিয়া গ্রিনওয়ে।
আয়ারল্যান্ড থেকে ভোট দেবেন গার সিগিন্স ও ক্লেয়ার শিলিংটন। ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন এস গোমেশ এবং শিবানী গুপ্তা। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে রয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার ক্রেইগ কামিং। পাকিস্তান থেকে রয়েছেন সাবেরা পাশা এবং সাবেক অধিনায়ক সানা মীর।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভোট দেবেন জাহির অ্যাডামস ও অ্যাশওয়েল প্রিন্স। শ্রীলঙ্কার প্রতিনিধি হলেন দানুশকা অরবিন্দা ও ফারভীজ মাহারুফ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে রয়েছেন ড্যারেন গাঙ্গা ও স্টেসি অ্যান কিং। জিম্বাবুয়ের প্রতিনিধি লরেন্স ত্রুসিদা। এছাড়া অন্যান্য দেশের পক্ষ থেকে রয়েছেন ড্যারেন অ্যালান কেয়ুনে ও কাইল কোয়েটজার।
আরও পড়ুনঃ অবশেষে চ্যাম্পিয়ন হ্যারি কেইন, অবসান অভিশপ্ত অধ্যায়ের