আইপিএল, বিগব্যাশ, পিএসএল, সিপিএল — আরো হরেক রকমের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফ্রাঞ্চাইজি লীগের ভিড়ে এখন ক্রিকেটারদের সামনে নানা রকমের সুযোগ আসে। একই সময়ে অনেকগুলো ফ্রাঞ্চাইজি লীগ চলমান থাকায় ক্রিকেটারদেরকেও মাঝে মাঝে পড়তে হয় দ্বিধাদ্বন্দে। এমনই এক টানাপোড়েনে পড়ে শা’স্তির মুখোমুখি হতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকান পেস বোলিং অলরাউন্ডার করবিন বশকে। পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) পেশোয়ার জালমির হয়ে খেলার কথা ছিল তার। ডায়মন্ড ক্যাটাগরি থেকে তাকে দলে নিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাল্টে আইপিএলের পথ ধরেন তিনি—যদিও শুরুতে আইপিএল নিলামে কোনো দলই পাননি করবিন। বরং ইনজুরির কারণে লিজার্ড উইলিয়ামস ছিটকে যাওয়ায়, তার জায়গায় রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ডাক দেয় লিজার্ডের স্বদেশী করবিন বশকে।

আরও পড়ুন: রাহুল ঝড়ে চারে চার দিল্লির
আইপিএল চলাকালীন সাধারণত অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজি লীগ খুব একটা হয় না। তবে এবার পিএসএল আইপিএল উইন্ডোতে এজন্য গিয়েছে যেন আইপিএলে অবিক্রীত খেলোয়াড়দের দেখা মিলে পিএসএলে। কারণ আইপিএলে মোট বিদেশী ক্রিকেটার দল পায় ৮০ জন। সেক্ষেত্রে এই ৮০ জন বাদে আরো অনেক ভালো মানের ক্রিকেটার থাকে, তাই তাদেরকে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই পরিকল্পনার জন্যই এবার ডেভিড ওয়ার্নার, কেইন উইলিয়ামসন, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, টম কারান, সিকান্দার রাজা, ড্যারাইল মিচেলদের মত তারকাদের তারা পাচ্ছেন পিএসএলে; যারা কিনা অবিক্রীত ছিলেন ২০২৫ আইপিএল নিলামে। করবিন বশকেও পেশোয়ার জালমি এভাবেই পেয়েছিলো। তবে আইপিএলের প্রস্তাব আসার পর বশ পিএসএলের চুক্তির তোয়াক্কা না করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলতে চলে যান। স্বভাবতই তার এই সিদ্ধান্তকে পেশাদারিত্ববিরোধী ও চুক্তিভঙ্গ হিসেবে দেখেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।এমন আচরণ শুধুমাত্র একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির উপর আঘাত নয়, এটি পুরো লিগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে। করবিন বশের মতো খেলোয়াড় যদি নির্ধারিত চুক্তি থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে আরেকটি লিগে চলে যান, তাহলে তা ভবিষ্যতে অন্য খেলোয়াড়দেরও একই পথে হাঁটার সুযোগ করে দিতে পারে। ফলে, এমন নজিরবিহীন আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি ছিল, এজন্যই করবিন বশকে মার্চ মাসে লিগাল নোটিশ পাঠায় পিএসএলে। পিসিবির ঘোষণায় বলা হয়েছে, বশের আচরণ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং পিএসএলের মতো একটি মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্টের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছে। তাই তাকে এক বছরের জন্য পিএসএল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আর্থিক জরিমানাও ধার্য করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তান সুপার লিগে আসছে প্লেয়ার ট্র্যাকিং টেকনোলজি
ঘটনার পর করবিন বশ ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “পিএসএল একটি মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট, এবং আমার কর্মকাণ্ড যে হতাশা সৃষ্টি করেছে, তা আমি সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করি। পেশোয়ার জালমির প্রতি অনুগত সমর্থকদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত—আমি আপনাদের নিরাশ করেছি। আমি আমার কাজের পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি এবং এক বছরের নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক জরিমানাসহ সব শাস্তি মেনে নিচ্ছি। এটি আমার জন্য একটি কঠিন শিক্ষা, তবে আমি এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখে ভবিষ্যতে আরও নিষ্ঠা ও সমর্থকদের আস্থা নিয়ে আবারও পিএসএলে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”
এই ঘটনা আরও একবার মনে করিয়ে দিল, পেশাদারিত্ব কেবল মাঠের পারফরম্যান্সে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সিদ্ধান্ত, দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতির প্রতিও একজন খেলোয়াড়ের দায় থাকে। লোভনীয় আর্থিক প্রস্তাব বা বড় মঞ্চের মোহে পড়ে যারা পূর্বনির্ধারিত চুক্তি ভঙ্গ করেন, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে থাকবে। পিএসএল কর্তৃপক্ষ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো, তা ভবিষ্যতে ক্রিকেটারদের আরও সচেতন হতে বাধ্য করবে।