ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা তকমাটি বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে শুধু একজনের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি আর কেউ নন বরং বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান।
আইপিএল, বিগ ব্যাশ, ক্যারাবিয়ান প্রিমিয়ার লীগ, পিএসএল সহ বিশ্বের নামি-দামি সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগে লাল-সবুজের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। বিশেষ করে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে এ সাকিবের অংশগ্রহণই ছিল বাংলাদেশের মানুষের আইপিএল দেখার প্রধান আকর্ষণ।

২০২৫ সালের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আজ যদি পেছন ফিরে দেখা হয় তবে আইপিএলে সাকিবের অসংখ্য ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্স চোখের সামনে ভাসবে। এর মধ্যে অন্যতম এক বীরত্বগাথা লেখা হয়েছিল ২০১২ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সিতে। ইডেন গার্ডেনসে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে বল হাতে জাদু ছড়ানোর পাশাপাশি ব্যাট হাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। সেই ম্যাচটি যেন প্রমাণ করেছিল কেন সাকিব শুধুই একজন অলরাউন্ডার নন বরং তিনি একজন ম্যাচ উইনার।
২০১২ সালের আইপিএল মৌসুমে কলকাতার হয়ে প্রথম দুই ম্যাচ একাদশের বাইরে ছিলেন সাকিব। তবে সুযোগ পেয়ে যেন একদম বাজিমাত করলেন। রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটাররা শুরুতে দুর্দান্ত ছন্দে থাকলেও সাকিবের আগমনে বদলে যায় পুরো ম্যাচের দৃশ্যপট।
রাহুল দ্রাবিড় ও অজিঙ্কা রাহানে উদ্বোধনী জুটিতে দারুণ শুরু এনে দেন রাজস্থানকে। কিন্তু সাকিব বল হাতে নিয়েই রাজস্থানের ভিত নাড়িয়ে দেন। প্রথম বলেই রাহানে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ তুলে দেন কিপারের হাতে। এরপর দ্রাবিড়কে ফেরান অতিরিক্ত ফ্লাইট দেওয়া এক ডেলিভারিতে। যেটি তুলে মারতে গিয়ে তিনি এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দিয়ে বসেন।
আরও পড়ুনঃ দ্রুত সুস্থ হবেন তামিম, আশা সাকিবের
রাজস্থান ৪৫/০ থেকে মুহূর্তেই হয়ে যায় ৪৯/৩! এরপর ওয়েস শাহ ও শ্রীবৎস গোস্বামী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও সাকিব আবার আঘাত হানেন। ১৭তম ওভারে গোস্বামীকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এরপর নারাইনের দুর্দান্ত এক বলে শাহও ফিরে গেলে রাজস্থানের বড় সংগ্রহ গড়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।
শেষ পর্যন্ত রাজস্থান ১৩১ রানের বেশি তুলতে পারেনি যেখানে সাকিবের বোলিং ফিগার ছিল ৩-০-১৭-৩ যা নিঃসন্দেহে এক ম্যাচ জেতানো স্পেল।

১৩২ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কলকাতা শুরুটা দেখে-শুনে করলেও শেষ দিকে ম্যাচ কঠিন হতে শুরু করে। তবে জ্যাক ক্যালিস ও মনবিন্দর বিসলা দায়িত্ব নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন।
শেষ দিকে যখন রানরেট বেড়ে দাঁড়ায় ৮ এর ঘরে তখনই দৃশ্যপটে ফের হাজির হন সাকিব আল হাসান। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ঠান্ডা মাথায় দুইটি বাউন্ডারি মেরে কলকাতাকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
সাকিবের বল হাতে ৩ উইকেট ও ব্যাট হাতে ১০ বলে ১৬ রানের ক্যামিও কলকাতাকে এনে দিয়েছিল এক গুরুত্বপূর্ণ জয় যা ২০১২ সালের আইপিএলে কেকেআরের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বড় ভূমিকা রেখেছিল।
আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে সাকিবের আইপিএল ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করলে ২০১২ সালের এই ম্যাচের কথা না বললেই নয়। এই ম্যাচ দিয়েই আইপিএলে প্রথম বারের মতো ম্যাচ সেরার পুরস্কার অর্জন করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই উজ্জ্বল নক্ষত্র। সেই পারফরম্যান্স শুধু কলকাতার সমর্থকদের নয় বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনেও আজও গেঁথে আছে এক সোনালি স্মৃতি হয়ে
আরও পড়ুনঃ সংগ্রাম থেকে সাফল্যের শিখরে: আশুতোষ শর্মার অপ্রতিরোধ্য ক্রিকেট যাত্রা