পাকিস্তান সুপার লিগের ১২তম ম্যাচে মুলতান স্টেডিয়ামে মুলতান সুলতানসের মুখোমুখি হয় মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বাধীন মুলতান সুলতান এবং রিশাদ হোসেনের দল লাহোর কালান্দার্স। টুর্নামেন্টে তিন ম্যাচ খেলে ফেলেও এখনো জয়ের মুখ দেখেনি মুলতান। তাই এদিন জয়ের লক্ষ্যে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মোঃ রিজওয়ান।
রিজওয়ানদের লক্ষ্য যে কেবল জয়ই ছিল তা স্পষ্ট হয় তাদের ব্যাটিং এপ্রোচে। শুরু থেকেই উড়ন্ত ব্যাটিং করেন মুলতানের দুই ওপেনার ইয়াসির খান এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। ইয়াসির খান এই পিএসএলে এতদিন ম্যাচ না পেলেও অবশেষে শাই হোপের জায়গায় সুযোগ পান। সুযোগ পেয়েই সেই সুযোগকে কাজে লাগান পাকিস্তানের ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ ওপেনার।

আরও পড়ুন: ফি’ক্সিংয়ের অভিযোগ উড়িয়ে দিলো রাজস্থান
পাওয়ার প্লেতেই ইয়াসির খানকে যোগ্য সঙ্গ দেন অধিনায়ক মোঃ রিজওয়ান—তিনিও সমানে ব্যাট চালান। এক পর্যায়ে মুলতানের স্কোর দাঁড়ায় ছয় ওভারে বিনা উইকেটে ৭৯। এরপরই সপ্তম ওভারে বোলিং করতে আসেন বাংলাদেশি রিশাদ হোসেন। নিজের করা প্রথম ওভারে রিশাদ হোসেন দেন দশ রান—প্রথম পাঁচটি বল বেশ ভালো লেংথে বল করে মাত্র চার রান দিলেও শেষ বলে ছক্কা হজম করেন। এই ছক্কাতেই ইয়াসির খান তার চলমান পিএসএলে প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন।

তবে রিশাদ হোসেনের প্রথম ওভারে তৈরি করা চাপ কাজে লাগান আসিফ আফ্রিদি। সপ্তম ওভারের রিশাদের ওভারের পর অষ্টম ওভারে আসেন আসিফ এবং এসেই প্রথম বলেই রিজওয়ানের উইকেটটি তুলে নেন। রিজওয়ান চলে যাওয়ার পর জুটি বাঁধেন উসমান খান। উসমান খানকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন ইয়াসির খান। ওভার করতে আসে ১২তম ওভারে এবং সেই ওভারে ১২ রান খরচ করেন। ততক্ষণে সেট হয়ে যায় উসমান-ইয়াসির জুটি, তবে এই জুটি ভাঙতে লাহোরের শরণাপন্ন হতে হয় রিশাদের কাছেই। দলীয় ১৫৯ রানের মাথায় রিশাদের স্পিন বল বুঝতে না পেরে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যান উসমান। তৃতীয় ওভারে রিশাদ সবচেয়ে সফল হন—উসমানের উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মাত্র সাত রান দেন তিনি। পরের ওভারে রাজার বলে আউট হয়ে ফিরে যান ইয়াসির খান, যিনি ৮৭ রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস খেলেন। রিশাদ উইকেটের দেখা পান তার শেষ ওভারেও—শেষ ওভারের শুরুটা ভালো না হলেও অ্যাস্টন টার্নারের উইকেটটা পেয়ে নিজের প্রতিশোধ নিয়ে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত আজকের দিনের রিশাদের বোলিং ফিগার ছিল ৪ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ২ উইকেট।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত বাংলাদেশের
তবে এদিন খরুচে ছিল লাহোরের প্রায় সব বোলারই। হারিস রউফ তিন ওভারে দেন ৫৪ রান, তবে ব্যতিক্রম ছিলেন আসিফ আফ্রিদি—৪ ওভার বল করে মাত্র ২৬ রান খরচে নিয়েছেন এক উইকেট। শেষ পর্যন্ত ইফতিখার আহমেদের ১৮ বলে ৪০ রানের ক্যামিওতে স্বাগতিক মুলতান সুলতানের স্কোর দাঁড়ায় ২২৮ রানে।
২২৯ রানের লক্ষ্যে লাহোরের ওপেনার ফখর জামান বেশ ভালো শুরু করেন। তবে আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম এদিন খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি—আউট হন ১১ বলে ১১ রান করে। ফখর জামানও আউট হয়ে যান ১৪ বলে ৩২ রান করে, তবে পাওয়ার প্লেতে একটা দারুণ সূচনা এনে দেন। পরবর্তীতে উইকেট হারালেও আব্দুল্লাহ শফিক এবং ড্যারাইল মিচেল কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন, তবে দলকে বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তারা কেউই। পরপর দুই ওভারে আউট হয়ে যান দুই সেট ব্যাটার।চতুর্থ উইকেটের পতনের পর লাহোরের ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে নামেন রিশাদ হোসেন। তবে রিশাদ তার ব্যাটিং অর্ডারের পদোন্নতিটাকে কাজে লাগাতে পারেননি, মাত্র ৪ বলে ২ রান করে লেগস্পিনার উসামা মিরের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান রিশাদ।

আরও পড়ুন: এখনো জিম্বাবুয়েকেই এগিয়ে রাখছেন মুজারাবানি
এরপর রাজা ও বিলিংস চেষ্টা করলেও সেটা ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। বিলিংস দুই চার ও চার ছক্কায় ২৩ বলে ৪৩ রান করেন। রাজা শেষ পর্যন্ত খেলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন। রাজার ২৭ বলে ৫০ রানের অপরাজিত ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও তিনটি ছক্কার মার। শেষ পর্যন্ত লাহোর কালান্দার্স নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে করে ৯ উইকেটে ১৯৫ রান। ম্যাচটি ৩৩ রানে জিতে নেয় মুলতান সুলতান এবং এই জয়ের মাধ্যমে আসরের প্রথম জয় পায় তারা। অন্যদিকে ৪ ম্যাচে ২ জয় নিয়ে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে লাহোর কালান্দার্স।
স্কোরকার্ড:
মুলতান সুলতান্স: ২২৮/৫ (২০ ওভার)
(ইয়াসির ৮৭, ইফতিখার ৪০*, উসমান ৩৯, রিশাদ ২/৪৫)
লাহোর কালান্দার্স: ১৯৫/৯ (২০ ওভার)
(রাজা ৫০*, বিলিংস ৪৩, উবাইদ শাহ ৩/৩৭)
ফলাফল: মুলতান সুলতান্স ৩৩ রানে জয়ী।