মারুফ মৃধার বলটা অফসাইডে ঠেলেই দৌড় দিলেন প্রোটিয়া ব্যাটার টেসপো। তবে অপর সাইডে থাকা মোকোয়েনা ঠিক সময়ে পৌছাতে পারলেন না। তার আগেই আরিফুল ইসলামের ডাইরেক্ট থ্রোতে ভেঙে যায় স্ট্যাম্প। ৩৪ রানের জয়ে বাঁধভাঙ্গা উল্লাসে ফেটে পড়ে বাংলাদেশ ইমার্জিং দল। রাজশাহীর মাটিতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও যে জিতে নিলো আকবর আলির দল।
আর এই সিরিজে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন এই আকবর। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ম্যাচে ৪১, পরেরটায় অনবদ্য ১৩১ এবং শেষ ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ৩৮ রান। মোট ২১০ রান ও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতে নেন সিরিজ সেরার পুরষ্কারও। অথচ, এই আকবরই কী বরাবরই একটু আলো ছায়ার ভিড়ে আড়ালে নয়?

আরও পড়ুন: নিক কেলির সেঞ্চুরিতে চালকের আসনে নিউজিল্যান্ড ‘এ’
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এ যাবত সর্বোচ্চ অর্জন বলা যায় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়। ২০২০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসির বৈশ্বিক কোনো আসরের সর্বোচ্চ অর্জনে নাম লিখিয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনালের সেই ম্যাচেও ৭৭ বলে অনবদ্য ৪৩ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকেই দলকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন আকবর আলি। সেদিনের সেই আকবরের হাত ধরেই নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়েছিল বাংলাদেশ।
সবাই ভেবেই নিয়েছিল, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট ছাপিয়ে এবার বড়দের দলেও নিজের মুন্সিয়ানা দেখাবেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার অধীনেই বিশ্বকাপ জেতা তাওহীদ হৃদয়, শরিফুল থেকে তানজিদ তামিম, ইমন, শামিম পাটোয়ারিরা জাতীয় দলের পরিচিত মুখ হয়ে গেলেও এখনো আকবরের অভিষেকই হয়নি সিনিয়র টিমে। কী অদ্ভুত তাই না?

মাঝের এই ক’বছরে অবশ্য আকবরও ছিলেন আলো ছায়ার ভিড়ে। কখনো বিপিএল, এনসিএল কিংবা এ দলের হয়ে পারফর্ম করেছেন, তবে সেভাবে নিয়মিত নজরকাড়া খেলে বিসিবির নির্বাচকদের মন জয় করতে পারেননি। তাই একই ব্যাচের অন্যান্যরা জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হয়ে গেলেও বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়কই খেলতে পারেননি লাল-সবুজের বড়দের দলে।
আরও পড়ুন: সাকিবকে দলে পেয়ে উচ্ছ্বসিত লাহোরের মালিক
যদিও সম্প্রতি তারই নেতৃত্বে এনসিএল টি-টোয়েন্টি আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রংপুর বিভাগ। কিন্তু, একজন আকবর আলি যেনো সেই মেঘের আড়ালেই রয়ে গেছিলেন।
তবে এবারের ইমার্জিং কাপের পর হয়তো সেই আক্ষেপই ঘুচতে যাচ্ছে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারের। অন্তত তিনি যেভাবে খেলেছেন তাতে বলাই যায়, জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনাও আবারও বেড়েছে আকবরের জন্য।

দক্ষিণ আফ্রিকা ইমার্জিংয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে যখন ৩০২ রানের পাহাড়সম টার্গেটের সামনে ব্যাটিংয়ে নেমে একসময় খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ, ঠিক সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে মাঠে নেমে ২৪ বলে ৪১ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেছিলেন। ৩০২ রানের বড় টার্গেটও বাংলাদেশ জিতে নিয়েছিল ৩ উইকেট হাতে রেখেই।
এরপরের ম্যাচে তো আরও বড় ঝলক দেখিয়েছিলেন তিনি। এবার প্রথমে ব্যাট করে শুরুতে ব্যাটিং ধ্বসে পড়লেও মিডল অর্ডারের কল্যানে ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় প্রোটিয়ারা। ৬৮ বলে ৯টি চার ও ৩ ছয়ে কনরের ব্যাট থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৯১ রান। এরপর মৃধার বলে তিনি আউট হলেও বিপাকে পড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা কেবল ফরেস্টারের জন্য। পাঁচে নেমে শেষ অব্দি ক্রিজে টিকে থেকে তুলে নেন ৫৯ বলে ৭টি চার ও ৬ ছক্কায় ঝড়ো ৯৬। অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস গেলেও অপরাজিত থেকেই দলকে বড় লক্ষ্যের পৌছে দিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি।
আরও পড়ুন: তিন ম্যাচের জন্যই এনওসি পেলেন মুস্তাফিজ
অন্যদিকে, ৩৩২ রানের বড় টার্গেটের সামনে খেলতে নেমে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এক জিসান আলম ছাড়া টাইগারদের আশার আলো দেখাতে পারেনি কেউন আর ফিফটি করে তিনি আউট হওয়ার পরেই ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে একাই টেনে নিয়ে যান অধিনায়ক আকবর আলি।

দলীয় ২৯১ রানে আউট হওয়ার আগে খেলে যান ১১০ বলে ১৪টি চার ও ২ ছয়ে ১৩১ রানের এক অনবদ্য ইনিংস। তবে তার আউটের পরেই মূলত, আবারও ম্যাচ হারের শঙ্কায় পড়ে যায় স্বাগতিকরা। আর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ১০ রানে হেরে গিয়েছিল। ফলে ৩ ম্যাচের সিরিজেও ১-১ এ সমতা এনে ফেলে প্রোটিয়া ইমার্জিং দল।
আর সিরিজের শেষ ম্যাচে বাঁচা মরার লড়াইয়ে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার। এরপরেই আবারও দলের হাল ধরেন সেই আকবরই। মিডল অর্ডারে নেমে ৫১ বলে ৩৮ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২০০ পেরোতে সাহায্য করেন। যার ফিনিশিং আসে রাকিবুল হাসানের ব্যাটে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশও বোলারদের কল্যানে এই ম্যাচ জিতে নেয় ৩৪ রানে। সাথে আকবরের নেতৃত্বে ২-১ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নেয় বাংলাদেশ ইমার্জিং দল।
আরও পড়ুন: আইপিএলে নতুন করে সুযোগ পেল আরও ৩ বিদেশি
আর তিন ম্যাচেই ব্যাটে হাতে দুরন্ত পারফরম্যান্স করে ২১০ রান করা আকবরের হাতেই উঠে সিরিজ সেরার পুরষ্কার। বলা যায়, প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে যেনো নিজেকেই ফিরে পেয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

আর এই অনবদ্য পারফরম্যান্সের পর আবারও উঠেছে প্রশ্ন, অবশেষে কী জাতীয় দলে ডাক পেতে যাচ্ছেন আকবর আলি? প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সিরিজে আকবরের এই পারফরম্যান্স তার আত্মবিশ্বাসও বাড়াবে। আর সব ঠিকঠাক থাকলে হয়তো টাইগারদের সিনিয়র দলেও সুযোগ পেলে এবার দেখা যাবে আকবরের মুন্সিয়ানা। বাংলাদেশের ভক্তরাও এখন অপেক্ষায়, বড়দের দলে কবে দেখা যাবে, আকবরের ব্যাটের জাদু।
আরও পড়ুন: আইপিএলের শেষভাগে কারা ফিরছেন, কারা আসছেন না ভারতে