দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশের ফুটবল আবারও দাঁড়িয়ে আছে সম্ভাবনার এক নতুন সূর্যোদয়ের মুখোমুখি। ১৯৮০ সালের পর আর কখনও এশিয়ান কাপের মূল মঞ্চে জায়গা হয়নি লাল-সবুজের। কিন্ত, ৪৭ বছর পর, সেই মহাসম্ভাবনার দরজায় কড়া নাড়ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল।
এবার শুধু স্বপ্ন নয়— স্বপ্নের ভিত মজবুত করার মতো শক্তিও রয়েছে দলে। বাংলাদেশি বংশদ্ভূত বিদেশে বড় হওয়া ফুটবলারদের আগমনে স্কোয়াডের চেহারা বদলে গেছে। হামজা চৌধুরী, তারিক কাজি, ফাহমিদুল, কাজেম শাহ কিংবা শমিত সোম। নতুন চেতনায় জেগে উঠছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: র্যাঙ্কিং নয়, হামজাদের শক্তিমত্তাকে সমীহ করছেন সিঙ্গাপুর কোচ

তবে পথটা মোটেও ফুলে ফুলে সাজানো নয়। এশিয়ান কাপের মূলপর্বে জায়গা পেতে হলে বাংলাদেশকে পেরোতে হবে বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ড। সেখানে গ্রুপ ‘সি’তে রয়েছে ভারত, হংকং এবং সিঙ্গাপুর— তিন প্রতিপক্ষই ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। ভারত রয়েছে ১২৭তম, হংকং ১৫৩ এবং সিঙ্গাপুর ১৬১তম স্থানে, যেখানে বাংলাদেশ রয়েছে ১৮৩ নম্বরে। কিন্তু শুধু সংখ্যাই তো সব নয়। ভারতের মাঠে ভারতের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে— লড়াই করার সাহস ও সামর্থ্য তাদের আছে।
এই বাছাইপর্বে রয়েছে ৬টি গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দলই যাবে চূড়ান্ত পর্বে। অন্য কোনো সুযোগ নেই। তাই প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি গোল— সবকিছুর গুরুত্ব এখানে অশেষ। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে আবারও অতীতের মতো আফসোস নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে।

তবে আশার জায়গা হলো, তৃতীয় রাউন্ডে এশিয়ার বড় শক্তিগুলো নেই। তারা আগেই নিশ্চিত করেছে চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ। এখন লড়ছে যারা, তাদের অনেকেই বাংলাদেশের সমান বা কাছাকাছি মানের দল। অর্থাৎ সঠিক পরিকল্পনা, মানসিক দৃঢ়তা আর মাঠে বাস্তবায়ন— এই তিনে ভর করে বাংলাদেশ ইতিহাস লিখতেই পারে।
আরও পড়ুন: সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয় হবে দেশের ফুটবলের টার্নিং পয়েন্ট: জামাল
তাদের পথচলাটা শুরু হয়েছিল মালদ্বীপের বিপক্ষে প্লে–অফ দিয়ে। মালে ১-১ ড্র করার পর ঢাকায় ২-১ গোলে জিতে পেরোয় প্রথম বাধা। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ডে ছিল কঠিন গ্রুপ: অস্ট্রেলিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন। এখান থেকে বড় অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ। এখন তৃতীয় রাউন্ডের বাঁধা পেরোতে পারলেই বাংলাদেশ পৌছে যাবে স্বপ্নের চূড়ায়।
বাংলাদেশের সামনে রয়েছে আরও পাঁচটি ম্যাচ:
১০ জুন ২০২৫: সিঙ্গাপুর বনাম বাংলাদেশ (ঢাকা)
৯ অক্টোবর ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম হংকং (ঢাকা)
১৪ অক্টোবর ২০২৫: হংকং বনাম বাংলাদেশ (হংকং)
১৮ নভেম্বর ২০২৫: বাংলাদেশ বনাম ভারত (ঢাকা)
৩১ মার্চ ২০২৬: সিঙ্গাপুর বনাম বাংলাদেশ (সিঙ্গাপুর)

এই পাঁচটি ম্যাচই এখন ফাইনালের সমান। বিশেষ করে ঘরের মাঠে তিনটি ম্যাচ— এগুলোতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। ঘরের দর্শকদের সমর্থন, পরিবেশের সুবিধা— সবকিছু মিলিয়ে হামজা-জামালদের সামনে ইতিহাস গড়ার সুযোগ।
৪৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা, অসংখ্য ব্যর্থতা, হতাশার গল্পের পর এই একটিমাত্র সুযোগ। একটা জয়, একটা গোল হয়তো বদলে দিতে পারে সবকিছু। হয়তো এই প্রজন্মই নিয়ে আসবে সেই দিন, যেদিন এশিয়ার শ্রেষ্ঠদের মঞ্চে বাজবে ‘আমার সোনার বাংলা’।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর: দুই দল মুখোমুখি হয়েছে কতবার?
এবার প্রশ্ন একটাই— হামজারা কি পারবেন সেই দিনটা এনে দিতে?