যে ক্লাবের হয়ে বছর ছয়েক ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছেন ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা কিলিয়ান এমবাপে, সেই পিএসজিই অবশেষে জিতল তাদের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। কিন্তু গল্পের মোড়টা ঠিক সেখানেই নাটকীয়— সেই শিরোপার মুহূর্তে মাঠে ছিলেন না এমবাপে। কারণ, মৌসুম শুরুর আগেই শৈশবের স্বপ্ন রিয়াল মাদ্রিদে নাম লিখিয়েছেন এই ফরাসি সুপারস্টার। তাই এমন এক মুহূর্তে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে— পিএসজির চূড়ান্ত সাফল্যে মাঠের বাইরে থাকা এমবাপের মনেই বা কী চলছে?
জার্মানির বিপক্ষে নেশন্স লিগের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচের আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে হাজির হয়ে সেই প্রশ্নের উত্তরটা খোলাসা করলেন এমবাপে নিজেই। বললেন, “আমি আগেভাগে পিএসজি ছাড়িনি। বরং আমার অধ্যায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। একসময় তো যেতে হতোই। কোনো তিক্ততা নেই, আক্ষেপও নেই। আমি মনে করি, সঠিক সময়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
আরও পড়ুন: রোনালদোর গোলে ফাইনালে পর্তুগাল

পিএসজির হয়ে অনেকবারই তিনি কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন ইউরোপ সেরার মঞ্চে। কিন্তু শেষ চুম্বনটা অধরাই থেকে গিয়েছিল। এবারও নিজের অভিষেক মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ব্যক্তিগতভাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ার্টার ফাইনালের বাইরে যেতে পারেনি। আর সেই মৌসুমেই তার পুরনো ক্লাব পিএসজি ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপের চ্যাম্পিয়ন!
তবু যেন আক্ষেপ শব্দটা এমবাপের অভিধানে নেই। বরং বড় ছবিটা দেখছেন তিনি। “আমার কোনো খারাপ লাগা নেই,” জানালেন এই ফরোয়ার্ড। “বরং আমি খুশি ওদের জন্য। পিএসজি অনেক বছর ধরে এই স্বপ্নের পেছনে ছুটেছে। আমি নিজেও সেই লড়াইয়ের অংশ ছিলাম। শুধু শিরোপার রাতটা বাদে, চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রায় প্রতিটি ধাপে আমি পিএসজির হয়েই খেলেছি। তারা এটা ডিজার্ভ করেই জিতেছে।”
আরও পড়ুন: ইয়ামালের জোড়া গোলে নেশন্স লিগের ফাইনালে স্পেন
এমবাপে মনে করেন, এমন একটা পরিস্থিতিই হয়তো তার জন্য আরও বড় একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে। নিজের ভাবনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “আমার ওপর এই জয়ের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। বরং এটা ভালো হয়েছে আমার জন্য। অনেক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসতে পেরেছি। আমি বরাবরই এমন অবস্থায় থাকতে পছন্দ করি, যেখানে সবাই প্রশ্ন করে আর আমায় প্রমাণ দিতে হয়।”

নিজেকে নিয়ে কাজ করা, সমালোচনার মুখে দাঁড়িয়ে জবাব দেওয়া—এই চ্যালেঞ্জগুলোকেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন এমবাপে। পিএসজিতে তার সময়টা কতটা পরিপূর্ণ ছিল, সেটাও স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু এটা নিয়তিরই অংশ ছিল—ওরা জিতবে আমার অনুপস্থিতিতে। সেটা নিয়ে আমার মনে কোনো ক্ষোভ নেই।”
সব মিলিয়ে, একজন পরিণত কিলিয়ান এমবাপে ধরা দিলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। যিনি জানেন, ক্যারিয়ারে সবকিছুই একসঙ্গে পাওয়া যায় না। কখনও না-পাওয়ার গল্পটাই হয়ে ওঠে ভবিষ্যতের প্রেরণা। পিএসজির চ্যাম্পিয়নস লিগ জয় তার জন্য হয়তো সেই না-পাওয়ার অনুপ্রেরণা, যা তাকে রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে শিরোপার পথে আরও আগ্রাসী করে তুলবে।