১৯ মে, ২০২৫; এই দিনটি বাংলাদেশের পর্বতারোহিদের ইতিহাসে যোগ করেছে নতুন এক অধ্যায়। বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করলেন ইকরামুল হাসান শাকিল। তবে শাকিলের যাত্রাটা একটু আলাদা। কেননা এই যাত্রাটা তিনি শুরু করেছিলেন পায়ে হেঁটে। কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্রসৈকত থেকে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করা এই অভাবনীয় অভিযানের নাম তিনি রেখেছেন ‘সি টু সামিট’।
আরও পড়ুন: পাকিস্তান সফর নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার ইতিবাচক বার্তা
সোমবার (১৯ মে) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে শাকিলের ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে তাঁর অভিযানের সমন্বয়কেরা জানান, “এইমাত্র খবর পেলাম, শাকিল সামিট করেছে এবং সুস্থ আছে। ক্যাম্প ৪-এ নেমে এসেছে। নেটওয়ার্ক না থাকায় বিস্তারিত তথ্য এখন দেওয়া যাচ্ছে না।”
শাকিলের এই অভিযান শুরু হয়েছিল গত ২৫ ফেব্রুয়ারি, কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৃথিবীর চূড়ায় পৌঁছানো ছিলো শাকিলের মূল্য লক্ষ্য। চট্টগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ হয়ে অভিযান শুরুর ১২ দিন পর ঢাকায় পা রাখেন শাকিল। এরপর গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে ২৮ মার্চ দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে পৌঁছান।

সেখান থেকে প্রবেশ করেন ভারতে। হেঁটেছেন জলপাইগুড়ি, এরপর দার্জিলিং হয়ে ৩১ মার্চ চলে যান নেপালে। এভাবে পথের পর পথ পাড়ি দিয়ে ২৯ এপ্রিল তিনি পৌঁছান এভারেস্ট বেজক্যাম্পে। সব মিলিয়ে এই পথে তিনি পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের বিশাল দূরত্ব।
আরও পড়ুন: সাকিবের দলে খেলার ছাড়পত্র পেলেন মিরাজ
এরপর শুরু হয় মূল পর্বতারোহণের প্রস্তুতি। বেজক্যাম্পে কিছুদিন অবস্থান করে রোটেশনে অংশ নেন শাকিল। রোটেশনের সময়ে তিনি একে একে ক্যাম্প-৩ পর্যন্ত উঠে আবার বেজক্যাম্পে ফিরে আসেন। ১৬ মে থেকে শুরু হয় তার চূড়া জয়ের অভিযান। সেই দিন ক্যাম্প-২ এ ওঠেন শাকিল। এরপর ধাপে ধাপে উঠতে উঠতে অবশেষে ১৯ মে পৌঁছে যান পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায়।
শাকিলের এই অনন্য উদ্যোগের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ। তিনি ১৯৯০ সালে ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে শুরু করে ৯৬ দিনে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার হেঁটে উঠেছিলেন এভারেস্ট। তার সেই ‘সি টু সামিট এক্সপেডিশন’ই শাকিলকে অনুপ্রাণিত করেছে।

এদিকে প্রথমবারের মতো এভারেস্ট জয়ের ইতিহাসে বাংলাদেশের নাম লেখেন মুসা ইব্রাহীম। ২০১০ সালে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছান মুসা। এরপর এভারেস্ট ছুঁয়েছেন এম এ মুহিত, ২০১১ ও ২০১২ দুইবার সর্বোচ্চ এই শৃঙ্গ জয় করেন মুহিত। প্রথম বাংলাদেসজি নারী হিসেবে এই সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেন নিশাত মজুমদার। ওয়াসফিয়া নাজরীন ২০১২ ও সজল খালেদ ২০১৩ সালে এভারেস্ট জয় করেন। তবে দীর্ঘ ১১ বছর এই শৃঙ্গে বাংলাদেশের কেউ উঠতে পারেননি। ২০২৪ সালে সেই খরা কাটিয়ে বাবর আলী আবার তুলে ধরেন লাল-সবুজ পতাকা। আর ২০২৫ সালে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন শাকিল।
আরও পড়ুন: এশিয়া কাপ না-ও খেলতে পারে ভারত
শাকিল এর আগে ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে পর্বতারোহণের প্রাথমিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। হিমালয়ের কেয়াজো-রি, দ্রৌপদী কা ডান্ডা-২, হিমলুং এবং ডোলমা খাং পর্বতও জয় করেছেন তিনি। ২০২৩ সালে তিনি পেরিয়েছেন গ্রেট হিমালয়া ট্রেইল নামের ১ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ, যা কিনা নেপালের পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত।