টাইগার জার্সিতে ম্যাচ খেলেছেন ২৪ ঘন্টাও হয়নি, তারপরও আইপিএলে দিল্লির দলে যোগ দিয়ে সরাসরি সুযোগ পেলেন একাদশে। স্টার্কের পরিবর্তে মুস্তাফিজই যে দলের ভরসার পাত্র তার প্রমাণ যেন ম্যাচের শুরুতে দিলো দিল্লি। তবে সেই আস্থার প্রতিদান অবশ্য মুস্তাফিজ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। যদিও অন্য প্রান্ত থেকে পাননি কোনো সাহায্য। দুইশো রানের টার্গেট ডিফেন্ড করতে নেমে দলের সবচেয়ে কিপটে বোলিংটাই করেছেন ফিজ। তবে তাতেও লাভ হয়নি, দশ উইকেটের লজ্জার পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় দিল্লিকে।
আরও পড়ুন শিরোপা খরা কাটিয়ে পুনর্জন্মের গল্পে মোড়া ২০২৫
টসে হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা দিল্লির ইনিংসজুড়ে ছিলো শুধু একটাই নাম, কে এল রাহুল। ব্যাট হাতে সামনের থেকে নেতৃত্ব দেওয়া দিল্লির এই ব্যাটার হাঁকার আইপিএল ক্যারিয়ারে নিজের পঞ্চম শতক। এর আগে পাঞ্জাব কিংস ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে শতকের দেখা পাওয়া রাহুল এবার দিল্লির হয়েও পৌঁছালেন ম্যাজিকাল তিন অঙ্কের ফিগারে। তিনটি আলাদা ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে আইপিএলের মঞ্চে শতক হাঁকানোর এমন নজির নেই আর কোনো ব্যাটারের।

ইনিংসের প্রথম বল থেকে শুরু করে শেষ বল পর্যন্ত ক্রিজে ছিলেন রাহুল। তবে অন্যপ্রান্তে বাকি ব্যাটাররা অবশ্য দলের খাতায় খুব বেশি রান যোগ করতে পারেনি। রাহুলের ব্যাটে ১১২ রান এলেও বাকি ব্যাটাররা মিলে করেন মোটে ৮১ রান। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯৯ রানে থামে দিল্লির ইনিংস।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে সাই সুদর্শন ও শুভমান গিল রীতিমতো ছেলেখেলা করেছেন দিল্লির সাথে। জমজমাট লড়াইয়ের আভাস দিয়ে খেলতে নামা ম্যাচ একেবারে একপেষে করে ছেড়েছে গুজরাটেই এই দুই ওপেনার। এদিন যেন উইকেট না দেওয়ার পণ করেই মাঠে নেমেছিলেন এই দুই ব্যাটার। দুইশো রানের লক্ষ্যটাও তাদের কাছে হয়ে যায় মামুলি।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে নাহিদ-রিশাদের আটকা পরার কারণ জানালেন ফাহিম
দুজনে মিলেই পাওয়ার প্লেতে তুলে নেন ৫৯ রান। প্রথম ছয় ওভারের মধ্যে দুটি আবার করেন বাংলার কাটার মাস্টার। রান দিয়েছেন মাত্র ১৩। এরপর দশ ওভারে গুজরাটের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৯৩ রান। গিল আর সুদর্শন মিলে একের পর এক চার-ছক্কায় দলকে নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। এক ওভার বাকি থাকতেই কোনো উইকেট না হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় দিল্লি। সুদর্শন অপরাজিত থাকেন ১০৮ রানে আর গিলের ব্যাটে আসে ৯৩ রান। এই এক জয়েই প্লে-অফ নিশ্চিত হয় তিন দলের। বেঙ্গালুরু, গুজরাট ও পাঞ্জাব সবাই জায়গা করে নিয়েছে প্লে-অফে।

এর আগে দিনের প্রথম ম্যাচে দশ রানের নাটকীয় জয় পেয়েছে পাঞ্জাব কিংস। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে রাজস্থানের সামনে ২২০ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায় পাঞ্জাব। জবাবে জয়সওয়াল ও সূর্যবংশীর তান্ডবের পর ধ্রুব জুরেল একা লড়াই চালালেও ২০৯ রানেই থামে রাজস্থানের ইনিংস।
আরও পড়ুন: ইমনের জন্য ‘স্পেশাল’ সেঞ্চুরি
জয়পুরে এদিন টস ভাগ্যটা সঙ্গ দেয় সফরকারী দল পাঞ্জাব কিংসের। টস্ব জিতে আগে সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাট করার। শুরুতেই কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় দলটি। ৩.১ ওভারে ৩৪ রানের মধ্যে হারায় তিন উইকেট। তবে নেহাল ওয়াধেরা ও অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার মিলে ইনিংসটি গুছিয়ে তোলেন। চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৬৭ রান।
আইয়ার অবশ্য ২৫ বলে ৩০ রান করে বিদায় নিলেও শশাঙ্ককে সাথে নিয়ে আরো ৫৮ রান যোগ করেন ওয়াধেরা। তবে ব্যক্তিগত ৭০ রানে আকাশ মাধওয়ালের বলে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাটেন এই ব্যাটার। মাত্র ৩৭ বলে ৫ চার ও ৫ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান নেহাল।

শেষ দিকে শশাঙ্ক সিং ও আফগান অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই ৪ ওভারে ৬০ রান তুলে দলের সংগ্রহ নিয়ে যায় দুইশোর উপরে। ৩০ বলে ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন শশাঙ্ক। অন্যদিকে ৯ বলে আজমতুল্লাহর ব্যাটে আসে ২১ রান। নির্ধারিত ওভারের খেলা শেষে পাঞ্জাবের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ২১৯ রান। রাজস্থানের হয়ে সর্বোচ্চ দুইটি উইকেট তুলে নেন তুষার দেশপান্ডে। এছাড়া মাফাকা, পরাগ ও মাধওয়ালের ঝুলিতে যায় একটি করে উইকেট।
জবাবে রাজস্থানের ইনিংসের শুরুতেই ঝড় তোলেন ইয়াশাসভি জয়সওয়াল ও বৈভব সূর্যবংশী। শুধু ঝড় নয়, রীতিমতো আইপিএল ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেওয়ার মতো শুরু করেন এই দুই ব্যাটার। জয়সওয়াল ও বৈভবের তাণ্ডবে ২২০ রানের লক্ষ্যকে ছোট মনে হচ্ছিল কিছু সময়ের জন্য। প্রথম ওভারে অর্শদীপ সিংয়ের বিরুদ্ধে জয়সওয়াল তুলে নেন ২২ রান। যা কিনা আইপিএল ইতিহাসে ইনিংসের প্রথম ওভারে কোনো ব্যাটসম্যানের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
দ্বিতীয় ওভারে আগুন ঝরান নবাগত বৈভব সূর্যবংশীও। মার্কো ইয়ানসেনের করা ওভারে ১৬ রান আসে ব্যাট থেকে। মাত্র ২.৫ ওভারেই রাজস্থান পৌঁছে যায় ৫০ রানে, যা এবারের আইপিএলে দ্রুততম দলীয় অর্ধশতক। পাওয়ার প্লের শেষে রাজস্থানের স্কোর ৮৯ ফ্র্যাঞ্চাইজিটির আইপিএল ইতিহাসে পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: ইমনকে জয় উপহার দিলেন বোলাররা
এরপরেই অবশ্য ১৫ বলে ৪০ রান করে আউট হন সূর্যবংশী। তবে জয়সওয়াল ছিলেন দারুণ ছন্দে। পেয়ে যান অর্ধশতকের দেখাও। কিন্তু ইনিংসের নবম ওভারে তাকে দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান মিচেল ওয়েন। ২৫ বলে ৫০ রানে জয়সওয়াল আউট হলে শুরু হয় রাজস্থানের ছন্দপতন।

মাঝের ওভারে ছন্দ হারানো রাজস্থানকে শেষ দিকে কিছুটা ভরসা দেন ধ্রুব জুরেল। তবে ৩১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেললেও সেটা কেবল ব্যবধানটাই কমিয়েছে, এনে দিতে পারেনি কাঙ্খিত জয়। ইনিংসের শেষ ওভারে বিদায় নেন জুরেল এবং শেষ পর্যন্ত রাজস্থানের ইনিংস থামে ২০৯ রানে। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছে পাঞ্জাব কিংস। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট থাকলেও নেট রান রেটে এগিয়ে বেঙ্গালুরু আছে শীর্ষে। অন্যদিকে রাজস্থানের এখন ১৩ ম্যাচে মাত্র ৬ পয়েন্ট।