একটি প্রজন্মের শৈশব, কৈশোর ও বেড়ে উঠার সাথে পুরোটা জুড়েই ছিল ফুটবলে দুই অবিসংবাদিত কিংবদন্তি লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। মাঠে তাঁরা প্রতিপক্ষ হলেও, তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল এমন সব গল্প, যা শুধু ইতিহাসে নয়, কোটি হৃদয়ের আবেগেও লেখা থাকবে। লম্বা একটা সময় ইউরোপিয়াব ফুটবলে রাজত্ব করেছেন এই দুইজন। আর সেই সোনালি সময়েরই স্মৃতিচারণ করে এবার মেসি বললেন, “রোনালদোর সঙ্গে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সত্যিই অবিশ্বাস্য কিছু ছিল।”
সম্প্রতি ব্যালন ডি’অর-এর অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে আবারও পুরনো সেই দ্বৈরথকে স্মরণ করলেন মেসি। প্রিয় প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ানোর প্রতি যেখানে মেসির কন্ঠে ফুটে উঠেছিল — আবেগ, শ্রদ্ধা ও পরষ্পরের প্রতি ভালোবাসা।
আরও পড়ুন: ইমনের জন্য ‘স্পেশাল’ সেঞ্চুরি

২০০৮ থেকে ২০২৩— এই পনেরো বছর ধরে বিশ্ব ফুটবল একচেটিয়াভাবে শাসন করেছেন এই দুই কিংবদন্তি। ব্যালন ডি’অর যেন তাঁদের ব্যক্তিগত লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এই সময়ে মেসি জিতেছেন ৮ বার, রোনালদো ৫ বার। এছাড়া গোল, ট্রফি কিংবা রেকর্ড— সব জায়গাতেই লেগে থাকত একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
মেসির ভাষায়, “ক্রিস্টিয়ানো সবসময় সবকিছু জিততে চাইত, আমিও তাই। আমরা একে অপরকে আরও ভালো হওয়ার জন্য পুশ করেছি। এটা আমাদের জন্য যেমন, তেমনি ফুটবলভক্তদের জন্যও ছিল এক স্বর্ণালি সময়।”
তবে এই দুই মহারথীর সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায়টি ছিল নিঃসন্দেহে স্পেনের এল-ক্লাসিকো— বার্সেলোনা বনাম রিয়াল মাদ্রিদ। সেই ম্যাচগুলো যেন রূপ নিয়েছিল মেসি-রোনালদোর ব্যক্তিগত দ্বৈরথে। রোনালদোর ক্ষ্যাপাটে উদযাপন, মেসির পাল্টা জবাব— এই সময়কার প্রতিটি মুহূর্ত ফুটবল ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে আজও।
আরও পড়ুন: ইমনকে জয় উপহার দিলেন বোলাররা

দীর্ঘ একটা সময় এই দুই ফুটবল গ্রেট মৌসুমের পর মৌসুম গোলের বন্যা ভাসিয়েছেন। প্রতি সিজনেই মুড়ি-মুড়কির মতো ৫০ এর উপরে গোল করেছেন।
মেসি বলেন, “শীর্ষে ওঠা সবসময়ই কঠিন, কিন্তু সেখানে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা আরও কঠিন। আমরা দুজনেই সেটা পেরেছি। সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।” এই কথাগুলোয় যেনো লুকিয়ে আছে পরষ্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, গর্ব আর ভালোবাসার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।
আরও পড়ুন: আকবরের ব্যাটে প্রত্যাবর্তনের ঝলক
২০১৮ সালে রিয়ালের হয়ে হ্যাটট্রিক ইউসিএল জিতে রোনালদো পাড়ি জমান জুভেন্টাসে, আর মেসি বার্সেলোনা ছাড়েন ২০২১ সালে। এরপর তাঁদের ইউরোপিয়ান অধ্যায় কিছুটা স্তিমিত হলেও, ভক্তদের আবেগে তাঁদের উপস্থিতি আজও সমান উজ্জ্বল। ২০২৩ সালে মেসি অষ্টম ব্যালন ডি’অর জিতে গড়েছেন ইতিহাস। রোনালদো এখন সৌদি আরবের আল নাসরে খেলছেন, লড়াই করছেন ১০০০ তম গোলের রেকর্ডে পৌছানোর।
২০২৪ সালের ব্যালন ডি’অর তালিকায় প্রথমবারের মতো ছিলেন না এই দুই মহাতারকা। সময় হয়তো বদলেছে, কিন্তু স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি সেই মহাজাগতিক দ্বৈরথ।

মেসির বলেন, “ক্রিস্টিয়ানোর সঙ্গে সেই সময়গুলো আমার ক্যারিয়ারের সেরা স্মৃতির মধ্যে থাকবে। আমরা একে অপরকে যেভাবে চ্যালেঞ্জ করেছি, তাতে ফুটবল অনেক দূর এগিয়েছে।”
এর আগে উয়েফার মঞ্চেও মেসির পাশে বসেই রোনালদো নিজেও জানিয়েছিলেন, ‘তারা যেভাবে দীর্ঘ ১৫ বছরেরও উপরে ফুটবলে রাজত্ব করেছে, তা আর কেউই করতে পারেনি। তারা দুজনেই, দুজনকে এতদূর টেনে এনেছে। মেসির সঙ্গে একসঙ্গে ডিনারও করতে চান তিনি।’
এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল প্রতিভার সম্মান, পরিশ্রমের ফল এবং একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার উদ্যম। কে সেরা? এই প্রশ্নের উত্তরটা কখনোই নির্দিষ্ট নয়। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত— ফুটবলপ্রেমীরা এমন এক সময়ের সাক্ষী ছিল, যা আর কোনোদিন ফিরে আসবে না

এটা যেনো শুধুই মেসি বনাম রোনালদো নয়— এটা এক যুগের গল্পও বটে।
আরও পড়ুন: কাকা-ইতোদের সাথে প্রীতি ম্যাচ খেললেন তাবিথ আউয়াল