বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ইমনের রেকর্ড শতক যেন আত্মতৃপ্তিতে না ভোগায়, দরকার আরো উন্নতি

আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শতকের দেখা পেলেন বাংলাদেশের ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে শতক পাওয়া মানেই এক দুর্লভ প্রাপ্তি। এই ফরম্যাটে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে মাত্র দু’জন ব্যাটার শতকের দেখা পেয়েছেন— তামিম ইকবাল ও পারভেজ ইমন। এর আগে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন তামিম। সেই ঐতিহাসিক সেঞ্চুরির প্রায় ৯ বছর পর এল ইমনের শতক, যা নিঃসন্দেহে ইমন ও বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য গর্বের। ৫৪ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ১০০ করার দিনে এদিন ইমন শতক পূর্ণ করেছিলেন ৫৩ বলে। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিয়ন তামিমের শতকটি এসেছিল ৬১ বলে, তাই ইমনের এই শতকটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্রুততম শতক। শুধু তাই নয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশীদের মাঝে দ্রুততম শতককারী ব্যাটারটার নামও পারভেজ হোসেন ইমন। ২০২০ সালের বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ইমন ফরচুন বরিশালের হয়ে ৪২ বলে শতক করেছিলেন, সেই ম্যাচে ইমনের অধিনায়ক ছিলেন তামিম ইকবালই। টি-টোয়েন্টি কিংবা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি, দুই জায়গাতেই বাংলাদেশী হিসেবে দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ন ইমন, ব্যাপারটা অবশ্যই গর্বের।

আরও পড়ুন: ইমনের রেকর্ড শতকে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৯১

তবে শুধুই গর্বের জায়গা থেকে নয়, ইমনের এই ইনিংসটিকে বিশ্লেষণ করেছেন অন ফিল্ড-এর সিইও সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামি। তার মতে, এই ইনিংসটি প্রশংসনীয় হলেও এখানে আত্মতৃপ্তির জায়গা নেই। বরং এই শতকের আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আরও পরিণত ইনিংস গড়ার চেষ্টায় মনোযোগী হওয়া উচিত ইমনের। ইমনের ব্যাটিং টেকনিক নিয়েও মন্তব্য করেছেন সৈয়দ সামি। তিনি ইমনের পাওয়ার হিটিংয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বলেন, পারভেজের ব্যাট ধরার ধরনটা অন্যদের চেয়ে আলাদা। ট্র্যাডিশনাল ব্যাটাররা যেখানে প্রথম থাই বা প্রথম ঊরুর কাছ থেকে ব্যাট ধরেন, সেখানে ইমন ব্যাট ধরেন দ্বিতীয় থাই বা বাইরের ঊরুর দিক থেকে। মডার্ন ক্রিকেটে এই ধরণের ব্যাট গ্রিপ ব্যাট সুইংয়ে সহায়তা করে, আর ইমন সেটি দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। তাঁর ব্যাট সুইং ছিল পূর্ণাঙ্গ এবং গতিময়। প্রতি শটেই ব্যাট সুইং দিয়ে একটি পূর্ণচক্র তৈরি করতে পেরেছেন ইমন।

আরও পড়ুন: ইমনকে জয় উপহার দিলেন বোলাররা

তবে সৈয়দ আবিদ হুসাইন সামির বিশ্লেষণে আরও কিছু সতর্কবার্তা আছে। তিনি মনে করেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বোলাররা ইমনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। ইমনের দুর্বলতা যেটা— ব্যাক অব দ্য লেংথ ডেলিভারি— তা খুব একটা কাজে লাগাতে পারেনি আমিরাতের বোলাররা। বিপিএলেও এই ধরণের ডেলিভারিতে ইমন বেশ ভুগেছেন, তাসকিন, তানজিম সাকিব কিংবা আবু হায়দার রনির করা ব্যাক অফ দ্যা লেংথ ডেলিভারিতে প্রপার শট না খেলতে পারে ক্যাচ দিয়ে ইনিংসের শুরুতেই আউট হয়েছেন ইমন।

আরও পড়ুন: ওয়ার্নার-ভিন্স জুটিতে বৃথা বাবরের ৯৪

এই স্ট্র‍্যাটেজিতে ইমনের বিপক্ষে সফল হয়েছে ঘরোয়ার বোলাররাও। তবে আমিরাতের বোলাররা সে জায়গায় ধারাবাহিক ছিলেন না। শুরুর দিকে খানিকটা অস্বস্তিতে ফেললেও, পরে আর তেমন সমস্যায় ফেলতে পারেননি তাঁকে। সৈয়দ সামির মতে, আমিরাতের বোলারদের মানও এমন ছিল না যে তারা ওই লেংথ থেকে ধারাবাহিক চাপ তৈরি করতে পারতেন।

আরও পড়ুন: আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে নথিপত্র যাচাই করছে দুদক

এই কারণেই সৈয়দ সামির মত, এই ইনিংসটি প্রশংসনীয় হলেও এখানেই থেমে গেলে চলবে না। ইমন এখন বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ান— এটি যেমন গর্বের, তেমনি এটি আরও বড় কিছু করার দ্বারও খুলে দিয়েছে। দলের জন্য ভবিষ্যতে আরও অবদান রাখাই হওয়া উচিত ইমনের মূল লক্ষ্য। ৫৩ বলে শতক অবশ্যই গর্বের, কিন্তু এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক সময় দেখা গেছে গর্ব করার মত রেকর্ড করেও আত্মতৃপ্তিতে ভুগে সেই খেলোয়াড় পরবর্তীতে বাংলাদেশকে বেশি দিতে পারেননি। তবে ইমনের এই শতক বাংলাদেশের নতুন ব্র‍্যান্ড অফ ক্রিকেটের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পারভেজ হোসেন ইমনের এই সেঞ্চুরি নিছক একটি ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। দীর্ঘদিন ধরে টাইগার ব্যাটারদের ব্যাট থেকে শতক দেখা যেন এক প্রকার বিলাসিতা হয়ে উঠেছিল। সেই শূন্যতাকে খানিকটা হলেও ভরাট করলেন ইমন। তরুণ এই ওপেনারের ইনিংসে যেমন ছিল আগ্রাসন, তেমনি ছিল পরিণত ভাবনার প্রতিফলন। তাঁর ব্যাটিংয়ের ধরন, পাওয়ার হিটিং এবং পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ভবিষ্যতের জন্য বড় আশার বার্তা দেয়। এখন দেখার বিষয়, এই অর্জনকে পাথেয় করে তিনি আরও কতটা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে।

শর্টার ফরম্যাটে এমন ব্যাটারদের কাছ থেকেই দেশ আশা করে বড় কিছু। ইমনের এই ইনিংস হোক আত্মবিশ্বাসের ইন্ধন, যেন সামনের দিনে আরও দৃঢ়, আরও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে রাঙিয়ে তুলতে পারেন নিজের এবং দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর