দেশ যখন রক্তাক্ত, তখন খেলাধুলা নিয়ে ভাবার সময় নেই, এই মন্ত্রেই যেন বিশ্বাসী ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর। জম্মু-কাশ্মীরের পাহালগামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জ’ঙ্গি হা’ম’লার পর পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অন্যান্য সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ভারত। এবার ভারতের কোচের কন্ঠেও এবার প্রতিবাদের সুর। দুদেশের মধ্যকার তিক্ত এই সম্পর্কে গম্ভীর মনে করেন পাকিস্তানের সাথে খেলাই উচিত হবে না ভারতের।
আরও পড়ুন: সেমিতেই বিদায়, ইন্টার পাস হলো না বার্সার
মঙ্গলবার (৬ মে) দিল্লিতে এবিপি গ্রুপের এক অনুষ্ঠানে গম্ভীর সাফ জানিয়ে দেন চলমান অবস্থায় পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ হোক, এমনটা তিনি চান না। এমনিতেই নিরপেক্ষ ভেন্যু এবং আইসিসি ইভেন্ট ছাড়া ক্রিকেট মাঠে নামা হয়না এই দুই দেশের। তবে গম্ভীর এখন মনে করেন পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলাই উচিত না ভারতের। তিনি বলেন, “আমার ব্যক্তিগত মত হল, একেবারেই না। যতক্ষণ না এসব সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হচ্ছে, ততক্ষণ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কোনও কিছুই হওয়া উচিত নয়।”
পাহালগামের সেই জ’ঙ্গি হা’ম’লায় ২৬ জনের প্রা’ণহানি ভারতজুড়ে শোকের আবহ তৈরি করেছে। সরকার ইতিমধ্যেই ইন্দাস নদী চুক্তি স্থগিত করেছে, অটারি সীমান্ত বন্ধ করা হয়েছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনার ঘোষণা এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে গম্ভীরের কাছে দেশ সবার আগে। তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি, কোনও ক্রিকেট ম্যাচ, বলিউড বা অন্য কোনও বিনোদন কোনওভাবেই একজন ভারতীয় সৈনিক বা নাগরিকের জীবনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ম্যাচ চলতে থাকবে, সিনেমা তৈরি হবে, গায়করা গান গাইবে। কিন্তু পরিবারের একজন প্রিয় মানুষকে হারানো অন্য কিছুর সঙ্গেই তুলনা করা যায় না।”
আরও পড়ুন: পিএসএলে প্লে-অফের ওঠার লড়াইয়ে সমীকরণের মারপ্যাঁচ
২০১৩ সালের জানুয়ারির পর কোনো দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ খেলেনি ভারত ও পাকিস্তান। দুই দেশ কেবল এশিয়া কাপ বা আইসিসির টুর্নামেন্টেই মুখোমুখি হচ্ছে। সবশেষ, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুবাইয়ের মাটিতে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছিলো এই দুই দল। তবে আপাতত দুদেশের মধ্যকার ম্যাচ আয়োজন নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। যদিও ম্যাচ আয়োজনের ব্যাপারে সরকার যেই সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন গম্ভীর। তিনি বলেন, “এই সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের কাজ, আমার না। এটা বিসিসিআই এবং তার থেকেও বেশি সরকারের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই আমরা মেনে নেব। এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই।”
এদিকে ভারতের ক্রিকেটে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিলো গম্ভীরের অধীনে কতদিন খেলতে পারবেন ভিরাট কোহলি-রোহিত শর্মার। এ ব্যাপারে এবার স্বয়ং গম্ভীরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচকরা। তিনি বলেন, “প্রথমত, কোচ দলের নির্বাচন করেন না। সেটা নির্বাচকদের কাজ। কোচ শুধু ম্যাচে একাদশ বেছে নেন। আমার আগেও যারা ছিলেন, তারাও নির্বাচক ছিলেন না, আমিও নই।”
গম্ভীরের মতে কে খেলবেন আর কে খেলবেন না, সেটা পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করে, রাজনৈতিক চাপ বা ব্যক্তিগত মতের উপর নয়। রোহিত-কোহলির প্রসঙ্গে গম্ভীর বলেন,”যতদিন তাঁরা পারফর্ম করছেন, ততদিন দলে থাকা উচিত। কখন শুরু করবেন আর কখন অবসর নেবেন, এটা একজন খেলোয়াড়ের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কোনো কোচ, নির্বাচক বা বিসিসিআই কাউকে বলে দিতে পারে না কখন আপনি থামবেন। আপনি যদি পারফর্ম করেন, তাহলে ৪০ কেন, ৪৫ বছর পর্যন্ত খেললেও আপনাকে কেউ আটকাবে না।”