হলো না কামব্যাক, হলো না রুপকথা লেখা। এক দশকের অপেক্ষার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে পৌঁছেও স্বপ্নভঙ্গের সুরে মাঠ ছাড়ল হ্যান্সি ফ্লিকের বার্সেলোনা। সান সিরোর রাতটা হয়ে থাকল শুধুই ইন্টার মিলানের।
প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৩-৩ গোলে ড্র করেও আশা টিকে ছিল বার্সেলোনার। তবে সেই আশার মিছিলে বাধা হয়ে দাঁড়াল সান সিরোর এক ইতিহাস— ইন্টার কখনোই এই মঞ্চে তাদের মাঠে হারে না। সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখেই ইতিহাসের পাতায় আরেকটি স্মরণীয় অধ্যায় লিখল সিমোন ইনজাগির দল। দুই লেগ মিলিয়ে ৭–৬ ব্যবধানে বার্সাকে হারিয়ে ৩১ মে মিউনিখের ফাইনালে জায়গা করে নিল ইন্টার।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে আসতে চান কুইন সুলিভান

শুরু থেকেই যেন দুলতে থাকা এক পেন্ডুলামের মতো উঠানামা করেছে ম্যাচের ভাগ্য। প্রথমার্ধে লাউতারো মার্তিনেজ আর হাকানের গোলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় ইন্টার। তখন মনে হচ্ছিল, বার্সেলোনার কফিনে শেষ পেরেক বসাতে চলেছে ইতালিয়ান ক্লাবটি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গল্পে টুইস্ট আনেন এরিক গার্সিয়া ও দানি ওলমো। পরপর দুই গোলে সমতায় ফেরে বার্সা।
৮৮ মিনিটে রাফিনিয়ার দুর্দান্ত এক গোল গোটা সান সিরোকে স্তব্ধ করে দেয়। ৩-২ তে এগিয়ে গিয়ে সেই মুহূর্তে বার্সা শিবিরে জন্ম নেয় স্বপ্ন, হয়তো এই বারই পারা যাবে। হয়তো লেখা যাবে নতুন ইতিহাস। কিন্তু ফুটবল এতটা সরল গল্পও নয়। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে আচমকাই ডামফ্রিসের ক্রস থেকে হেডে গোল করেন ফ্র্যান্সিসকো আচেরবি। স্কোর তখন ৩-৩! আবারও সমতা, আবারও টানটান উত্তেজনা।

দুই লেগ মিলিয়ে যখন স্কোরলাইন ৬-৬, তখন অতিরিক্ত সময়ই হয়ে ওঠে ভাগ্য নির্ধারক। সেখানে বদলি হিসেবে নামা ডেভিড ফ্রাত্তেসি হয়ে ওঠেন ইন্টারের ত্রাণকর্তা। তারেমির পাস পেয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে বার্সা-গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এই মিডফিল্ডার। সেই গোলই ইন্টারকে পৌঁছে দেয় চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে।
আরও পড়ুন: রোনালদোর ছেলের গায়ে উঠছে পর্তুগালের জার্সি
কেউ বলেন, তিনি ‘ক্রাইসিস ম্যান’। কোয়ার্টার ফাইনালেও তার গোলে বায়ার্নের মাঠে জয় এসেছিল। এবার সেমির মহারণেও তার নামেই লেখা থাকল পার্থক্য গড়ার গল্প। আর এসবের পেছনে নিঃশব্দ এক স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইন্টার গোলরক্ষক ইয়ান সোমার— বার্সার একাধিক নিশ্চিত গোলের সুযোগ ঠেকিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

ম্যাচ শেষে বার্সেলোনার ডাগআউটে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন রাফিনিয়া। এমন এক ম্যাচে যেখানে বারবার ফিরে এসেছে বার্সা, সেখানে এভাবে হার মেনে নেওয়া সহজ নয়। কিন্তু ফুটবলে প্রত্যাবর্তনের গল্প যেমন লেখা হয়, ঠিক তেমনি লেখা হয় হেরে যাওয়ার বেদনাও। বার্সার তরুণরা হয়তো শিখে গেলেন— শুধু স্কিল নয়, অভিজ্ঞতা, চাপ সামলানো, আর ছোট ছোট মুহূর্তের নিয়ন্ত্রণই গড়ে দেয় চূড়ান্ত ফলাফল।
ইন্টার মিলান দ্বিতীয়বারের মতো তিন বছরের মধ্যে ফাইনালে। সামনে প্রতিপক্ষ পিএসজি অথবা আর্সেনাল— যেই আসুক, ইনজাগির শিষ্যদের আত্মবিশ্বাস এখন আকাশচুম্বী। টানা ১৫ ম্যাচ ধরে সান সিরোয় অপরাজিত থেকে এসেছে তারা। মার্টিনেজ, হাকান, আচেরবি, ডামফ্রিস, ফ্রাত্তেসি— একটি টিমওয়ার্কে একেকজন নিজ নিজ ভূমিকায় হয়ে উঠেছেন নায়ক।
আরও পড়ুন: সাইক্লিং রেসে অংশ নিলেন আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি, কত তম হলেন?

এমন নাটকীয়তা, রোমাঞ্চ, বাঁকবদলের স্রোত এবং শেষ মুহূর্তে গোল—সবকিছু মিলিয়ে ফুটবল ইতিহাসে এই দ্বৈরথ হয়তো চিরকাল মনে রাখবেন দর্শকরা। প্রতিপক্ষ হিসেবে বার্সেলোনাকে পেয়ে ইন্টার যেভাবে নিজেদের খেলায় অনড় থেকেছে, আবার বার্সাও যেভাবে বারবার ফিরে এসে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে লড়েছে— এটাই প্রমাণ করে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কেন এত বিশেষ।