ইংল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিন্টফের জীবনের উপর নির্মিত “Flintoff” নামের ডকুমেন্টারিটি যে কোনো ক্রিকেটপ্রেমীকেই আবেগতাড়িত করে ফেলবে। ডকুমেন্টারির সবচেয়ে আবেগঘন অংশগুলোর একটিতে দুর্ঘটনায় ফ্লিন্টফের মুখ ও দেহের ক্ষতবিক্ষত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে যা আগে কখনো দৃশ্যিত হয়নি। সেই মুহূর্তে তাঁর স্ত্রী র্যাচেল বলেন: “ক্রিকেটই ফ্লিনটফের জীবন বাঁচিয়েছে।”

২০২২ সালের ডিসেম্বরে “Top Gear” টিভি শোয়ের শুটিং চলাকালীন ফ্লিনটফ একটি স্টান্টের জন্য গাড়ি চালাতে গিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার স্বীকার হন। গাড়ি উল্টে যাওয়ার সময় ফ্লিনটফকে নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই ক্ষীণ সময়ের মধ্যে তিনি চিন্তা করতে পেরেছিলেন যে যদি তিনি এক পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে পড়ে যান, তবে হয়তো তার ঘাড় ভেঙে যাবে বা মৃত্যু হতে পারে। তাই তিনি সংঘর্ষের মুহূর্তে মুখ নিচু করে পড়া যাওয়াকেই বেছে নেন। অনেকটাই যেন ২০০৫ অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ান স্পিডস্টার ব্রেট লির ১৫০ কিলোমিটার গতির বাউন্সার থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য মাথা নিচু করে ফেলার মতো।
ফ্লিনটফ বলেন, “বল আসার সময় যেমন মাত্র ০.৪ সেকেন্ডে সিদ্ধান্ত নিতে হয়—কীভাবে খেলবো, পা কোথায় রাখবো—গাড়ি উল্টে যাওয়ার সময়ও আমি একইভাবে ভাবছিলাম। যদি মাথার পাশে আঘাত লাগে, আমি নিশ্চিত মরে যাবো। আমার একমাত্র সুযোগ ছিল মুখ নিচু করে পড়া।”

এই দুর্ঘটনায় ফ্লিনটফের মুখমণ্ডল ও পাঁজরে গুরুতর চোট লাগে, যার ফলে তাঁকে জটিল রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এই ট্রমা থেকে সেরে ওঠা ফ্লিনটফের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর মাসের পর মাস গৃহবন্দী ছিলেন, কেবল চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতেন। সেই সময় তিনি প্রবল মানসিক অস্থিরতা, দুঃস্বপ্ন ও আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে গেছেন। ডকুমেন্টারিতে তিনি বলেন – “আমি ভাবতাম, আমার পক্ষে এই পরিস্থিতি পার করা সম্ভব না। কখনো কখনো মনে হতো, মারা গেলেই বোধহয় ভালো হতো। ”
আরও পড়ুনঃ ম্যাচ হারের পুরো দায় নিজের কাঁধে নিলেন ধোনি
তবে ক্রিকেটই তাঁকে আবার স্বস্তির আশ্রয় দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ইংল্যান্ড লায়ন্স দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রিকেট এবং তাঁর পরিবার ফ্লিনটফের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে তার পাশে দাড়িয়েছে।

ফ্লিনটফ জানান, “আমার জীবনে পরিবার যেমন সব সময় আমার পাশে ছিল, ঠিক তেমনি ক্রিকেটও সবসময় আমার পাশে ছিল। ক্রিকেটই সম্ভবত আমাকে আবার বাঁচার সাহস দিয়েছে। আমি এখন কোচিং করাচ্ছি, তরুণদের নিয়ে কাজ করছি, শুধুমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে নয়—তাদের জীবনের পথ দেখাতেও চেষ্টা করছি।”
ফ্লিনটফ বলেন, তিনি এখন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের কোচ হওয়ার কথা ভাবছেন না। লায়ন্স দলের দায়িত্বে থেকেই তরুণ খেলোয়াড়দের তৈরি করতে চান। পাশাপাশি, টেলিভিশনে কাজও মাঝে মাঝে চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।

দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া “Field of Dreams” নামক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় মৌসুমের শুটিংও শেষ করেছেন, যেখানে নিজ শহরের কিছু তরুণকে ক্রিকেটের মাধ্যমে জীবনে আশার আলো দেখিয়েছেন তিনি। ক্রিকেট হয়তো কিছু সময়ের জন্য তার জীবনে আড়ালে ছিল, কিন্তু সেটা কখনো তার জীবন থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি।
আরও পড়ুনঃ আফগান শরণার্থী থেকে ডেনিশ ফুটবলার; নাদিয়া নাদিমের অদম্য পথচলা