বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

ম্যাচ হারের পুরো দায় নিজের কাঁধে নিলেন ধোনি

চেন্নাই সুপার কিংস আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর একটি। আইপিএল শিরোপা তারা জিতেছে মোট পাঁচবার। সেই চেন্নাই সুপার কিংস এবারের আসরে বড্ড অচেনা। আইপিএলের ১৮তম সিজনে এখন পর্যন্ত ১১টি ম্যাচে মাত্র দুটি ম্যাচ জিতেছে চেন্নাই। আইপিএল ২০২৫ মৌসুম জয় দিয়ে শুরু করলেও পরের দশ ম্যাচে মাত্র একটি ম্যাচ জেতে চেন্নাই। এবারের আসরে প্রথম দল হিসেবে বাদও পড়ে চেন্নাই সুপার কিংস। বিগত আসরগুলো হিসাব করলে দলটির উত্থান পতন স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

২০২৩ সালে মাহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চেন্নাই সুপার কিংস। ২০২৪ সালে নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান রুতুরাজ গায়কোয়াদ। সেবার রুতুরাজ ভালো শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত প্লে-অফ নিশ্চিত করতে পারেননি। তবুও এবারও আস্থা ছিল রুতুরাজে, তবে রুতুরাজ গায়কোয়াদের অনাকাঙ্ক্ষিত ইনজুরি টুর্নামেন্টের মাঝপথে ছিটকে দেয় তাকে। রুতুরাজের অবর্তমানে দলের অধিনায়কত্ব পান মহেন্দ্র সিং ধোনি।

আরও পড়ুন: রিশাদ-রানার প্রশংসায় পঞ্চমুখ সিকান্দার রাজা

তবে ধোনির ছোঁয়াতেও বদলায়নি চেন্নাইয়ের ভাগ্য। একের পর এক হেরেই চলেছে চেন্নাই। এবারের আসরের প্রথম ম্যাচটি জিতে পরের টানা পাঁচটি ম্যাচ হারে চেন্নাই। সপ্তম ম্যাচে লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে আবার জয়লাভ করে, যেটির নেপথ্যে ছিলেন খোদ মাহেন্দ্র সিং ধোনী। কিন্তু এখন আবার টানা চারটি ম্যাচ হারায় পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে তারা। শেষ ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর কাছে হেরেছে কেবল দুই রানে। আর সেই হারের দায় পুরোটাই নিজের কাঁধে নিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য চেন্নাই সুপার কিংসের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। বল হাতে ছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বাঁহাতি পেসার ইয়াশ দয়াল। প্রথম বলে দিলেন কেবল ২ রান এবং তৃতীয় বলে একটি ফুলটস বল করেন, যেখানে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান মহেন্দ্র সিং ধোনি। এদিন ধোনি এক ছক্কায় ৮ বলে ১২ রানের ইনিংস খেলেন, তবে এই রকম ম্যাচটি ধোনীর শেষ করে আসা উচিত ছিল বলে তিনি মনে করেন।

আরও পড়ুন: চাপ সামলে দুর্দান্ত জয়ে শিরোপার আরো কাছে বার্সা

ম্যাচ শেষে তিনি এই ম্যাচের দায় পুরোটাই নিজের ঘাড়ে নেন। তিনি মনে করেন, তিনি যদি কয়েকটি বাউন্ডারি আনতে পারতেন, তাহলে সেটা দলের উপর চাপ অনেকটাই কমিয়ে দিত। তাছাড়া প্রথম ইনিংসের বোলিংটাও শেষের দিকে ভালো হয়নি চেন্নাইয়ের। রোমারিও শেফার্ডের ১৪ বলে ৫৩ রানের ইনিংস বদলে দেয় দৃশ্যপট। ধোনি বলেন, চেন্নাই ভালো শুরু করলেও রোমারিও শেষদিকে দুর্দান্ত খেলেছেন। আমাদের বোলাররা যাই বল করেছেন, সে(শেফার্ড) সর্বোচ্চ রান তুলে নিয়েছেন।

তাছাড়া ধোনি মনে করেন ব্যাটারদের আরও স্কিল ট্রেইনিং দরকার, বিশেষ করে ইয়র্কারের বিরুদ্ধে। ধোনীর মতে, ব্যাটসম্যান যখন বল পেটাতে শুরু করে, তখন ইয়র্কারের উপর নির্ভর করতেই হয়। কিন্তু ইয়র্কারের ভুলের সুযোগ খুব কম। তাই ইয়র্কার না হলে ‘লো ফুলটস’ বলও কার্যকর হতে পারে।

এদিকে মাথিশা পাথিরানা, যে লঙ্কান ফাস্ট বোলার চেন্নাইয়ের অন্যতম ভরসার প্রতীক ছিলেন, তিনি এই সিজনে অনেকটাই ফিকে পারফর্মেন্স করছেন। যদিও বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচে তিনটি উইকেট পেয়েছেন পাথিরানা, তবুও সামগ্রিকভাবে এবারের আসরের পারফরম্যান্স খুব একটা মনোমুগ্ধকর নয়। অনেকেই মহেন্দ্র সিং ধোনিকে পাথিরানার অভিভাবক মনে করেন। সেই অভিভাবকের জায়গা থেকে ধোনি পাথিরানাকে নিয়ে বলেন— পাথিরানার ইয়র্কার না হলে তিনি গতি ও বাউন্সার ব্যবহার করে ব্যাটারদের বিভ্রান্ত করতে পারেন। যেহেতু ইয়র্কার মিস করলে ব্যাটারের হিট করার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়, তাই এবার পাথিরানা মাঝে মাঝে একটু খরুচে হয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু পাথিরানার পারঙ্গমতায় সন্দেহ নেই কারোরই।

এ আসরে চেন্নাই সুপার কিংস ছিল একেবারে ছন্নছাড়া। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই কখনো ভালো কম্বিনেশন পায়নি দলটি। বল হাতে খলিল আহমেদ ও নুর আহমেদ শুরুর দিকে ভালো করলেও শেষদিকে হয়ে পড়েন ছন্নছাড়া। অন্যদিকে ব্যাটিং অর্ডারেও কোনো স্থিতিশীলতা দেখা যায়নি। প্রথমদিকে রাচিন রাভিন্দ্র বা ডেভন কনওয়ে শুরু করলেও এখন ওপেনিং করছেন তরুণ আয়ুশ মাত্রে ও শেখ রাশিদ। শুধু তাই নয়, টুর্নামেন্টে রাহুল ত্রিপাঠী কিংবা দীপক হুডারাও ব্যর্থ হয়েছেন।

এতসব পারফরম্যান্সের ভিড়ে সমালোচনার তীরটা কেন যেন কেবল ৪৪ বছর বয়সী ধোনির দিকে তাক করে। অথচ চেন্নাই সুপার কিংসের এই দলে এবার কেউই ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে পারেননি। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক বিরাট কোহলি, যার রান ৫০৫। সেখানে চেন্নাইয়ের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রবীন্দ্র জাদেজা, যার রান মাত্র ২৬০! রান তালিকায় তিনি আছেন ২১ নম্বরে।

আরও পড়ুন: শেষ ওভারের নাটকীয়তায় শেষ হাসি কোয়েটার

জাদেজার পর চেন্নাইয়ের হয়েবসবচেয়ে বেশি রান করেছেন শিভম দুবে, ২৫৬ রান করে তালিকায় জাদেজার পরে দুবের অবস্থান। বুঝাই যাচ্ছে, চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা এবার কতটা অসহায় ছিলেন। সেখানে মহেন্দ্র সিং ধোনী শেষ দিকে ব্যাট করতে নেমেও ২৩ গড় ও ১৪৮ স্ট্রাইক রেটের সঙ্গে ১৬৩ রান করেছেন। ব্যাট হাতে দলকে জিতিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন লখনৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে। শুধু তাই নয়, এবারের আসরে সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ ও ফিল সল্টকে দ্রুততম সময়ের মাঝে স্টাম্পিং করে ক্রিকেটপ্রেমীদের আলোচনা এসেছেন বারংবার। চেন্নাই সুপার কিংসের পারফরম্যান্স মলিন হলেও মলিন ছিলেন না মাহেন্দ্র সিং ধোনি।

তবুও দলের ব্যর্থতার দিনে বাকিদের বাঁচাতে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি। ধোনী না এ আসরে চেন্নাইয়ের সবচেয়ে খারাপ পারফর্মার, না এই টুর্নামেন্টে শুরু থেকে অধিনায়ক ছিলেন। তবুও দলের ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে ধোনি যেন প্রমাণ করলেন— চেন্নাইয়ের প্রতি তার দায়বদ্ধতা কতটা, অধিনায়ক হিসেবে ধোনির নেতৃত্বগুণ কতটা দৃঢ়, কতটা বলিষ্ঠ।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর