বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

তামিম-জাওয়াদে স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ

পুরো ক্রিকেট বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট কাঠামো বেশ দুর্বল। এই কথা স্বীকার করবেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট যে কেউ। ঘরোয়া ক্রিকেটে মানসম্মত পিচ, আম্পায়ারিংয়ের অভাব, বয়সভিত্তিক দলগুলোকে ঠিকঠাক মূল্যায়নের কমতি থাকলেও আন্তর্জাতিক আঙিনায় খেলে চলেছে বাংলাদেশ। যদিও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনো কোন বড় ট্রফি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে ইন্ডিয়া কিংবা শ্রীলঙ্কার মত না হওয়ায় আমাদের শেষ ভরসা ঘুরেফিরে অনূর্ধ্ব-১৯। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়ের নাম যদি নিতে হয় তাহলে কার নাম নিবেন? সাকিব নাকি? তামিম? যার নামই নেয়া হোক না কেন সবাই এই অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে প্রাপ্ত খেলোয়াড়। ‘পঞ্চপাণ্ডব’-এর কেউই এখন আর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে নিয়মিত নন। সর্বশেষ মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকের অবসর পঞ্চপাণ্ডবের শেষ দেখাচ্ছে দর্শকদের। এই পঞ্চপাণ্ডবের প্রায় সবার উঠে আসা অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে। একটা দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহর কাছ থেকে সার্ভিস নিয়েছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা ছিল তাদের হাত ধরে একটা ট্রফির জেতার। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তবে উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু অর্জন তাদের সময়ে হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্সে থেমে নেই বাংলাদেশ। ২০২০ সালে ভারতে হারিয়ে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ কোন ট্রফি জিতে। আর সেই সেটা হলো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ট্রফি। এরপর আর ট্রফি ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত বছর দ্বিতীয়বারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। যা ভক্ত সমর্থকদের মনে জন্ম দিচ্ছে নতুন আশা।

আরও পড়ুন: ক্রিকেট থেকে অস্থায়ীভাবে নি’ষিদ্ধ কাগিসো রাবাদা

এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে আছে বেশ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়, যারা যে কোন সময় বদলে দিতে পারে ম্যাচের পরিস্থিতি। তাদের ভরসা করা যায় দীর্ঘ সময়ের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য।এদের মধ্যে অন্যতম হলো- আজিজুল হাকিম তামিম, জাওয়াদ আবরার। মাঠে আজিজুল হাকিম তামিম তার আত্মবিশ্বাসী শট, ক্রিকেটের প্রতি তার সিরিয়াসনেস দিয়ে আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। এবারের এপ্রিলে এসএসসি পরীক্ষায় বসার কথা ছিল আজিজুল হাকিম তামিমের।

কিন্তু তিনি পড়ালেখা থেকে ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিয়েছেন সব সময়। ফলে পরীক্ষার সময় শ্রীলঙ্কা সফর থাকায় পরীক্ষায় বসেননি তামিম। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের কারণে প্রথমে নজর কাড়েন আজিজুল হাকিম তামিম। সেই মুগ্ধতা এখনো ধরে রেখেছেন তিনি। জাতীয় ক্রিকেট লিগেও খেলেছেন মারকুটে ইনিংস। জাতীয় ক্রিকেট লিগ টি-টোয়েন্টিতে খুলনার হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। শুরুর সিজনেই ৯ ম্যাচে ২৩৭ রান তুলেন টুর্নামেন্টে। যা তার ধারাবাহিকতাকেই তুলে আনে সমর্থকদের সামনে। এরপর আসে অনূর্ধ্ব-১৯ এর আরেক তারকা ক্রিকেটার জাওয়াদ আবরারের কথা। দারুন ছন্দে আছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ছয় ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ৩-১ এ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ওয়ানডেতে জয়ের ক্ষেত্রে বড় অবদান এই জাওয়াদ আবরারের। চাপের মুহূর্তে শক্ত হাতে হাল ধরেন দলের। রিজান হাসানের সাথে মিলে ইনিংস গুছিয়ে নেন ওপেনার জাওয়াদ আবরার। নিজে করেন ১১৩ রান সেই সাথে দলকে দেন নির্ভরযোগ্য একটা পুঁজি।

আরও পড়ুন: লঙ্কানদের উড়িয়ে ১৪৬ রানের জয় যুবাদের

শুধু এই ম্যাচ নয় সিরিজের বিগত মাচগুলোতেও দলের বিপর্যয়ের মুহূর্তে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন জাওয়াদ। কখনো সঙ্গী চলেন তামিম কখনো বা অন্য কেউ। ব্যাটিং-বোলিংয়ে ভারসাম্যপূর্ন এই দলের প্রতি আস্থা ভক্ত-সমর্থকদের। নতুন দিনের তারকা উঠে আসতে পারে এই দল থেকেই। যেমনটা দেখা যায় ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা দলের ক্ষেত্রে। এই দলের অনেকেই এখন খেলছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলে। তাদের মধ্যে তৌহিদ হৃদয়, তানজিম হাসান সাকিব, শরিফুল ইসলামরা নিয়মিত খেলে চলেছেন জাতীয় দলে। তৌহিদ হৃদয়, তানজিম সাকিব, শরিফুলরা খুব অল্প সময়েই বাংলাদেশ জাতীয় দলে পাকাপোক্ত আসন তৈরি করে নিয়েছেন। তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্যেও তারা থাকেন অটো চয়েস লিস্টে। ব্যাটিংয়ে হৃদয়ের নির্ভরযোগ্যতা, বোলিংয়ে সাকিব-শরিফুলের দুর্দান্ত কম্বিনেশন বাংলাদেশ দলকে বেশ কয়েলবার উদ্ধার করেছে বিপদ থেকে। এছাড়া পারভেজ হোসেন ইমন, মাহমুদুল হাসান জয়, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী সহ আরো অনেক ক্রিকেটারকেই মাঝেমাঝেই দেখা যায় জাতীয় দলে। এর মধ্যে ইমন পরিচিত তার মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য। সেই সাথে মৃত্যুঞ্জয় লাইমলাইটে আছেন তার বোলিংয়ের জন্য। আমরা যদি আরো পিছনে ফিরে যাই তাহলে পাবো মেহেদী হাসান মিরাজকে। তারও উত্থান অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে। মিরাজ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্যারিয়ারে খেলেছেন মোট ৫৬টি ম্যাচ। এর মধ্যে ৪৮ ম্যাচে করেছেন অধিনায়কত্ব। অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ জয়ও তার। মিরাজের অধিনায়কত্বে মোট ৩৭ টি ম্যাচে জয় লাভ করেছে বাংলাদেশ। জাতীয় দলে অভিষেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের বুকে কাপন ধরিয়েছিলেন তিনি। সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে তাই বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় ভরসা মেহেদী হাসান মিরাজই। শুধু মিরাজ নয় তার ব্যাচের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রিকেটার এখন খেলছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। এদের মধ্যে অন্যতম হলো- সাদমান অনিক, লিটন, মোসাদ্দেক সৈকত, সৌম্য সরকার, তাসকিন। সাম্প্রতিক সময়ে জিম্বাবুয়ের সাথে দ্বিতীয় টেস্টে সাদমান সেঞ্চুরি হাকিয়ে তার সামর্থ্যের প্রমান রেখেছেন। অন্যদিকে মিরাজ দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি সহ পাঁচ উইকেট নিয়ে রেকর্ড করে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন। এই দলের অন্যান্য খেলোয়াড়রাও বাংলাদেশের হয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে খেলে যাচ্ছেন নিয়মিত। এদের মধ্যে আছেন তাসকিন, লিটন, সৌম্য। মাশরাফির পর গতির বোলার হিসেবে আমরা পেয়েছি তাসকিনকে। আবার ক্ল্যাসিক ব্যাটসম্যান হিসেবে আমরা পেয়েছি লিটন-সৌম্যকে। এই সবই ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা দল থেকে বাংলাদেশের অর্জন। সামনের দিনে বর্তমান বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরা পারফর্ম করে যেতে পারলে সম্ভাবনা রয়েছে আরেকটি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ কিংবা টানা তৃতীয়বারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব গড়ার সুযোগ। এছাড়া সামনের দিনে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে ছড়ি ঘুরানোর সুযোগ তো আছেই। ফলে তামিম-জাওয়াদকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর