বৃহস্পতিবার, জুন ২৬, ২০২৫
সামি'স কর্নার

তাওহীদ হৃদয়কে খেলাতে ডিপিএলের নিয়ম বদল

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ক্রিকেট প্রশাসনের স্বচ্ছতা। নিয়ম অনুযায়ী খেলার সুযোগ না থাকলেও, মোহামেডানের অধিনায়ক তাওহীদ হৃদয় মাঠে নেমেছেন। আর এ নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্কের।

ঘটনার সূত্রপাত আবাহনীর বিপক্ষে এক উত্তেজনাকর ম্যাচে। মাঠে আম্পায়ারের সঙ্গে বিতর্কে জড়ান তাওহীদ হৃদয়, ম্যাচ শেষে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে উদ্দেশ্য করে ছুড়ে দেন আপত্তিকর মন্তব্যও। ফলস্বরূপ, তার বিরুদ্ধে আনা হয় আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ। জমা হয় সাত ডিমেরিট পয়েন্ট, যার পরিণতিতে দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা ও ৮০ হাজার টাকার জরিমানা।

আরও পড়ুন: রিশাদ অসাধারণ লেগ স্পিনার: ইফতিখার

নিয়ম বলছে— ৪ থেকে ৭ ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে ক্রিকেটারকে দুই ম্যাচের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে। সেই নিয়মে হৃদয় সুপার লিগের শুরুতে মাঠে নামার সুযোগ পাননি। কিন্তু মোহামেডান বড় ম্যাচের আগে তাকে মাঠে চাইছিল যেকোনো মূল্যে। ব্যাটে-বলে না, লড়াই এবার ছিল প্রশাসনিক দাপটে। শুরু হয় নেপথ্য চাপ প্রয়োগ।

যে দায়িত্ব ছিল টেকনিক্যাল কমিটির, সেটি হঠাৎ করে চলে যায় আম্পায়ার্স কমিটির হাতে। বিস্ময় জাগায় আরও— কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক মনি সরে দাঁড়ান দায়িত্ব থেকে, কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ‘স্বার্থের সংঘাত’। ইংরেজি দৈনিক সানকে মনি বলেন, “আমি ভিন্ন ভূমিকায় কাজ করছি, তাই মনে হয়েছে এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। তাই নিজেই সরে দাঁড়িয়েছি।”

তবে এখানেই শেষ নয়। দৈনিক সানের সূত্র বলছে, মোহামেডানের প্রবল চাপের মুখে পড়ে সিসিডিএম। নিয়ম পরিবর্তনের জন্য আম্পায়ার্স কমিটিকে কাজে লাগানো হয়। পূর্বের কোড অব কন্ডাক্টে ৪–৭ ডিমেরিট পয়েন্ট মানে ছিল দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা, নতুন নিয়মে তা এক ম্যাচে নামিয়ে আনা হয়—তা-ও আবার টুর্নামেন্ট চলাকালেই। ফলাফল, নিষেধাজ্ঞা কমে হৃদয় খেলেন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে।

অথচ এই সিদ্ধান্তে টেকনিক্যাল কমিটির কোনো মতামত ছিল না। মজার ব্যাপার হলো, যারা নিয়ম পরিবর্তনের মুখ্য ভূমিকা রাখার কথা ছিল— যেমন আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার মিঠু ও অপারেশন্স চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন— তাদেরও শুরুতে আপত্তি ছিল। কিন্তু পরে পরিস্থিতির চাপে তারা সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হন। মিঠু পর্যন্ত বলেন, “হৃদয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতি লঙ্ঘন করেছেন, আর তার শাস্তিও হওয়া উচিত সেই পর্যায়েরই।”

শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সিসিডিএম গঠন করেছিল তিন সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি— যার নেতৃত্বে ছিলেন এনামুল হক। নিয়ম অনুযায়ী, শাস্তি কমানোর আবেদনও তার কাছেই গিয়েছিল। কিন্তু এনামুল কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা না দেখিয়ে সরেই দাঁড়ালেন, যেন এক প্রকার প্রতিবাদ।

আরও পড়ুন: হারা ম্যাচেও দুর্দান্ত হামজা হলেন প্রতিপক্ষের আক্রমণের শিকার

এরপর যা ঘটেছে তা অনেকটাই ‘রুলস ইন রিভার্স’। বিসিবির কোড অব কন্ডাক্টে পরিবর্তন এনে ডিমেরিট পয়েন্ট অনুযায়ী শাস্তির মাত্রা কমিয়ে আনা হয়েছে। ৪–৭ ডিমেরিটে নিষেধাজ্ঞা এখন এক ম্যাচ, ৮–১১ পয়েন্টে তিন ম্যাচ। যেন পুরো কাঠামোটাই বদলে ফেলা হলো একজন খেলোয়াড়ের জন্য।

এই ঘটনা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল— স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের জায়গায় যেন বারবার ধাক্কা খায় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট। প্রশ্ন রয়ে যায়—নিয়ম কি সবার জন্য এক, না কি নির্দিষ্ট কারো জন্য বদলে যায় খেলায় ব্যবহৃত বইয়ের পাতাও?

আরও খবর

একটি মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

সর্বশেষ খবর

জনপ্রিয় খবর