প্রথম লেগে হার, দ্বিতীয় লেগেও শুরুতেই পিছিয়ে পড়া। স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা যেন ধীরে ধীরে ঘিরে ধরছিল ইন্টার মিয়ামিকে। অথচ শেষ বাঁশি বাজতেই দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়ন্স কাপের সেমিফাইনালে উঠে গেছে ডেভিড বেকহ্যামের দল। কারণটা একটাই— লিওনেল মেসি।
এ যেন ফুটবল কিংবদন্তির আরেকটা মাস্টারক্লাস! জোড়া গোল করে আবারও প্রমাণ করে দিলেন, এই খেলাটার আসল রাজা এখনও তিনিই। যখনই দল বিপদে পড়ে, যখনই চারদিক অন্ধকার— তখনই আলো হয়ে ওঠেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। যেন তাঁর পায়ের জাদুতেই নতুন করে বাঁচে ইন্টার মিয়ামি।

ফুটবল বিশ্বে লিওনেল মেসির নামটাই যেন অন্য রকম বিশ্বাসের নাম। যেখানে পথ আটকে যায়, যেখানে হার মানতে বসে দল— সেখান থেকেই যেন শুরু হয় মেসির জাদু। কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়ন্স কাপের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ইন্টার মিয়ামির গল্পটা আবারও সেই পুরোনো মেসির গল্প।
আরও পড়ুন: ফুটবলার কার্লোস কাইজার- যিনি কখনও ফুটবলই খেলেননি
প্রথম লেগে ১-০ গোলে হেরে বসেছিল ইন্টার মিয়ামি। দ্বিতীয় লেগের শুরুটাও হয়েছিল ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দিয়ে। ম্যাচের মাত্র ৯ মিনিটেই গোল হজম করে বসেছিল মেসির দল। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া মায়ামি যেন ছিটকে পড়ার অপেক্ষায়। কিন্তু মায়ামির হয়ে মাঠে ছিলেন যে একজন লিওনেল মেসি— এই বিশ্বাসটাই বাঁচিয়ে রাখে স্বপ্ন।
৩৫ মিনিটে ম্যাচে মেসির জাদুর শুরু। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের দুর্দান্ত শটে গোল করে দলকে ফেরালেন লড়াইয়ে। ওই গোলটা শুধু গোল ছিল না, ছিল মায়ামির আশার আলো জ্বালানো। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে নোয়াহ অ্যালেনের গোলের সুবাদে ম্যাচে ফেরে সমতা। কিন্তু দুই লেগ মিলিয়ে তখনো এগিয়ে ছিল এলএএফসি।

তবে মাঠে যে তখনও ছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি। গল্পটাও তাই শেষ হলো মেসির মতো করেই। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের ভুলে পাওয়া পেনাল্টিতে মেসি আবারও নিজেকে প্রমাণ করেন। গোলরক্ষক হুগো লরিসকে পরাস্ত করে দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। ফ্রান্সের সাবেক গোলরক্ষক এই লরিসকে ফাকি দিয়েই তো ২০২২ বিশ্বকাপটাও বাগিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এবার কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়ন্স কাপের সেমিতেও দলকে তুলে নিলেন তিনি।
সব মিলিয়ে মিয়ামির জার্সিতে ৪৮ ম্যাচে ৪২ তম গোলের দেখা পেলেন লিওনেল মেসি। ৩৭ বছর বয়সে, ফুটবল ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বিকেলেও নতুন গল্প লিখছেন তিনি।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে যেভাবে দেখা যাবে পিএসএল
বয়সটা তাঁর কাছে যেনো কেবলই সংখ্যা। পারফরম্যান্সে কোথাও এতটুকু ভাটা নেই। বরং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও পরিণত, আরও ধারালো হয়ে উঠেছে তাঁর ফুটবল।
এ যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তির অবিশ্বাস্য পথচলা। ক্লাব হোক বা দেশ— যেখানে খেলেন, সেখানেই ইতিহাসের পাতায় যোগ হয় নতুন অধ্যায়। শিরোপা, গোল, রেকর্ড, সবই মেসির কাছে যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। ফুটবল বিশ্ব যখন নতুন তারকার খোঁজে ব্যস্ত, তখনও মেসি দেখিয়ে দিচ্ছেন, সেরা হতে হলে শুধু প্রতিভাই নয়, প্রয়োজন অদম্য মানসিকতা আর অগাধ ভালোবাসা— এই খেলাটার প্রতি। যতদিন মাঠে থাকবেন, মেসিই ফুটবলের সবচেয়ে বড় গল্প। মাঠে নামা মানেই তাঁর জন্য আরেকটা দিন, আরেকটা রূপকথা।