আফগানিস্তানে জন্ম নেওয়া নাদিয়া নাদিম আজ ডেনমার্ক নারী ফুটবল দলের একজন আইকন। তিনি কোনো সাধারণ ক্রীড়াবিদ নন বরং তার জীবনকাহিনী রূপকথাকেও হার মানায় যা আজ সারা বিশ্বে লাখো মানুষের জন্য এক অনুপ্রেরণা। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ওঠা এই নারী ফুটবলারের জীবনের গল্প নাড়িয়ে দিয়েছে বহু মানুষকে।

২০২০-২১ মৌসুমে প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের (PSG) হয়ে ফরাসি লীগ শিরোপা জয় করার পর আগে থেকেই নাদিয়া নাদিমকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মহিলা ফুটবলারদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু তার শৈশব কেটেছে সীমাহীন দুঃখ আর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে।
আরও পড়ুনঃ ফুটবলার কার্লোস কাইজার- যিনি কখনও ফুটবলই খেলেননি
নাদিয়া নাদিম ১৯৮৮ সালের ২ জানুয়ারি আফগানিস্তানের হেরাত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। যখন তার বয়স মাত্র ১১ বছর তখন তালেবানরা তার বাবাকে হত্যা করে। তার বাবা আফগান সেনাবাহিনীর একজন জেনারেল ছিলেন। বাবাকে হারানোর পর মা ও চার বোনের সাথে নাদিয়া জাল পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান । সেখান থেকেই তারা ইউরোপে যাত্রা করেন।

নাদিয়া তার ওয়েবসাইটে লেখেন, “আমরা লন্ডনে যেতে চেয়েছিলাম কারণ সেখানে আমাদের কিছু আত্মীয় ছিল। পাকিস্তান থেকে জাল পাসপোর্ট নিয়ে আমরা ইতালি আসি। এরপর একটা ট্রাকে করে আমরা লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হই। কয়েকদিন পর যখন ট্রাক থেকে নামলাম ভেবেছিলাম বিগ বেন দেখতে পাবো কিন্তু শুধু গাছপালা বাদে আর কিছুই দেখতে পেলাম না। পরে এক পথচারীর কাছ থেকে জানতে পারি আমরা ডেনমার্কে চলে এসেছি।”
ডেনমার্কই হয়ে ওঠে নাদিয়া ও তার পরিবারের দ্বিতীয় আবাসস্থল। সেখানেই তিনি B52 Aalborg ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। ২০০৯ সালে আলগার্ভ কাপে ডেনিশ জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক ঘটে তার। এরপর থেকে বহু ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন দলের একজন নির্ভরযোগ্য গোলস্কোরার। ২০১৭ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে তার করা একটি গোল ছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।
ফুটবল খেলার পাশাপাশি নাদিয়া reconstructive surgeon হওয়ার প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন। বর্তমানে তিনি আরহুস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর তার সার্জন হিসেবে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ফুটবল ছাড়াও নাদিয়া নাদিম জাতিসংঘের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন এবং বিভিন্ন চ্যারিটিতে যুক্ত আছেন। সম্প্রতি তিনি পিএসজি ও ক্লাবুর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছেন এবং বিশ্বজুড়ে শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সাথে সম্পৃক্ত থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
নাদিয়া নাদিমের জীবন আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে অবিশ্বাস্য প্রতিবন্ধকতা ও কঠিনতম পরিস্থিতিকেও পরাজিত করে আত্মবিশ্বাস ও সাহসের সাথে জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাঁর জীবনযুদ্ধ, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই এবং সাফল্যের পথে অবিচল থাকা সকলের জন্যই এক অনুপ্রেরণা। সত্যিই, তিনি শুধুমাত্র একজন খ্যাতনামা ফুটবলার নন বরং বর্তমান সময়ের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাঁর গল্প ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য একটি চিরন্তন উৎসাহের সঞ্চার করবে।
আরও পড়ুনঃ ফি’ক্সিংয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিলেন সাব্বির