বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। মাঠের লড়াইয়ে কত প্রতিকূলতা পেরিয়ে গেছেন, কিন্তু জীবন-মৃত্যুর এমন এক লড়াইয়ে তিনি নিজেও হয়তো কখনও পড়বেন, ভাবেননি। গত সোমবার (২৪ মার্চ) সাভারের বিকেএসপির মাঠে খেলার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে, পরে চিকিৎসা চলাকালীনই মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—খেলায় ফেরা তো দূরে থাক, হার্ট অ্যাটাকে মাঠেই জ্ঞান হারান তিনি!
সেই খবর যখন পরিবারের কাছে পৌঁছায়, তখনই ঘটে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্ত। আকস্মিকভাবে খবর ছড়িয়ে পড়ে—”তামিম আর নেই!” বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও তামিমের আপন চাচা আকরাম খান প্রথমে এ খবর পেয়েই হতবাক হয়ে যান। এক মুহূর্তের জন্য যেন তার চারপাশের পৃথিবী থমকে যায়।
আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে আকরাম খানের লাল দলের জয়

বুধবার (২৬ মার্চ) গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আকরাম বলেন, “যখন আমি খবরটা পেয়েছি, বলা হলো—তামিম আর বেঁচে নেই! এটা শুনে আমি কল্পনাও করতে পারিনি। কোনো দিন ভাবিনি এমন খবর শুনতে হবে।”
তবে কিছুক্ষণ পর আরও একটি ফোনকলে আশার আলো দেখা যায়। আকরাম খান বলেন, “আমাকে পরে জানানো হলো—তামিম বেঁচে আছে। ডাক্তাররা কল করে বললেন, রিং লাগানোর জন্য তাকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন একটু স্বস্তি পেলাম। কারণ, যদি রিং লাগানো হয়, তার মানে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে!”

সোমবার মোহামেডানের হয়ে শাইনপুকুরের বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন তামিম। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নেমে টসও করেন তিনি। কিন্তু ব্যাটিং বা বোলিংয়ের আগেই শরীরে অস্বস্তি অনুভব করেন। মাঠের চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করেন এবং দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রথমে বিকেএসপির কাছাকাছি কেপিজে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসা দেওয়ার পর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক মনে হওয়ায় মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরই ঘটে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা—হার্ট অ্যাটাক করে মাঠেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক।
পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থা আরও অবনতি ঘটলে, চিকিৎসকরা দ্রুত এনজিওগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেন। পরীক্ষার পর জানা যায়, তার হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন এবং তার শারীরিক অবস্থার ওপর গভীর নজর রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: তামিমকে সাভার থেকে এভারকেয়ারে স্থানান্তর
তামিমের দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশ-বিদেশের ভক্তরা যেভাবে প্রার্থনা করছেন, তাতে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তার পরিবার। আকরাম খান বলেন, “তামিম যে অবস্থায় ছিল, সেখান থেকে ফিরে আসাটা সত্যিই অলৌকিক। আপনাদের দোয়া ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। প্রচুর কল ও মেসেজ পেয়েছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”

তবে চিকিৎসা এখানেই শেষ নয়। পরিবার চাইছে তাকে আরও ভালোভাবে পরীক্ষা করাতে। আকরাম খান বলেন, “রিং লাগানো হয়ে গেছে। তবে পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যত দ্রুত সম্ভব তাকে বিদেশে নিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা করানো হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ঝুঁকি না থাকে।”
চলতি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) দারুণ ছন্দে ছিলেন তামিম ইকবাল। নিয়মিত পারফর্ম করছিলেন, মাত্র ১০ দিন আগেই দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। আকরাম খানও সেটি উল্লেখ করে বলেন, “এমন একজন খেলোয়াড়, যে কয়েকদিন আগেও অসাধারণ ব্যাটিং করছিল, তার জন্য এমন ঘটনা কল্পনাও করা যায় না। সবাই খুব আপসেট ছিল, কিন্তু আল্লাহর রহমতে তামিম আবার ফিরে এসেছে।”
জীবনে অনেক ম্যাচ জিতেছেন তামিম ইকবাল, কিন্তু এই ম্যাচটি ছিল তার নিজের জীবনের জন্য। ভাগ্যের খেলায় হার মানতে হয়নি তাকে, বরং দোয়া, চিকিৎসা আর আল্লাহর রহমতে তিনি আবার ফিরেছেন সবার মাঝে।