প্রথম লেগে জিতেও শেষ হাসি হাসতে পারলো না ডেনমার্ক। উয়েফা নেশন্স লিগের দ্বিতীয় লেগে পর্তুগালের কাছে ৫-২ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে ডেনিশরা। অন্যদিকে প্রথমার্ধে ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইতালি। তবে তা সত্ত্বেও জার্মানির সেমিফাইনালের পথে বাধা হতে পারেনি আজ্জুরিরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ ব্যবধানে জয় নিয়েই সেমিফাইনালে উঠেছে জার্মানি।
কোয়ার্টারের বাকি দুই ম্যাচেও উত্তেজনা ছিলো একেবারে চরমে। প্রথম লেগে লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-০ গোলে হারা ফ্রান্স দ্বিতীয় লেগে জয় তুলে নিয়েছে একই ব্যবধানে। দুই লেগ ও অতিরিক্ত সময়েও বিজয়ী পাওয়া না গেলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর সেখানেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স। মাঠের খেলায় ফলাফল না আসায় টাইব্রেকারে গড়িয়েছে স্পেন বনাম নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার ম্যাচও। প্রথম লেগের মতো দ্বিতীয় লেগেও শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই শেষে ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে। যার ফলে ভাগ্য নির্ধারণ হয় পেনাল্টি শুটআউটে, যেখানে জয় নিয়ে নেশন্স লিগের সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে লামিনে ইয়ামাল-পেদ্রিরা।
নিজেদের ঘরের মাঠে লিসবনে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাবার সুযোগ ছিলো পর্তুগালের সামনে। তবে ৬ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েও গোল করার সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ৩৮ মিনিটে অবশ্য প্রথম গোলের দেখা পায় স্বাগতিকরা। ফার্নান্দেজের নেওয়া কর্ণার কিক থেকে নিজের জালেই বল জড়ান ডেনমার্কের ডিফেন্ডার জোয়াকিম এন্ডারসন। দ্বিতীয়ার্ধের ১১ মিনিটে সেই কর্ণার থেকেই সমতায় ফেরে সফরকারীরা। এরিকসেনের নেয়া কর্ণারে হেড দিয়ে গোল আদায় করে নেন ক্রিস্টেনসেন।
এগ্রিগেটে পিছিয়ে থাকা পর্তুগালকে ৭২ মিনিটে ম্যাচে ফেরান রোনালদো। চার মিনিট পর অবশ্য ম্যাচে সমতায় ও এগ্রিগেটে আবারো এগিয়ে যায় ডেনমার্ক। দলের হয়ে এবার স্কোরশিটে নাম তোলেন এরিকসেন। তবে নির্ধারিত সময়ের চার মিনিট আগে ফ্রানসিস্কো ট্রিনকাওয়ের দুর্দান্ত এক শটে ম্যাচে আবারো লিড নেয় পর্তুগাল। সেই সাথে এগ্রিগেটেও সমতা আনে দলটি। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে আবারো সেই ট্রিনকাও জাদু। তার গোলে দুই লেগ মিলিয়ে প্রথমবারের মতো লিডের দেখা পায় পর্তুগিজরা। আর ম্যাচ শেষ হবার পাঁচ মিনিট আগে ডেনমার্কের কফিনে শেষ পেরেক ঠুঁকে দেন গঞ্জালো রামোস। ৫-২ গোলে জয়ের পাশাপাশি এগ্রিগেটে ৫-৩ গোলে এগিয়ে থেকেই নেশন্স লিগের সেমিতে উঠেছে স্বাগতিকরা।
এদিকে প্রথম লেগে ২-১ গোলে ম্যাচ জেতা জার্মানি দ্বিতীয় লেগে ইতালির বিপক্ষে ড্র করেছে ৩-৩ ব্যবধানে। নিজেদের ঘরের মাঠে ম্যাচের ৩০ মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে লিড এনে দেন জশুয়া কিমিখ। ৬ মিনিট পর জামাল মুসিয়ালার গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে জার্মানি। ৪৫ মিনিটে ব্যবধান আরো বাড়িয়ে দেন টিম ক্লাইনডিয়েন্স্ট। যদিও বিরতির পর এসে বেশ মরিয়া হয়ে ওঠে ইতালি। ম্যাচের ৪৯ ও ৬৯ মিনিটে জোড়া গোল করেন মোসেস কিন। ৯৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে সমতায় ফেরান গিয়াকামো রাসপাদোরি। তবে শেষ পর্যন্ত ৩-৩ গোলের ড্র ও ৫-৪ গোলের এগ্রিগেটে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় ইতালিকে। সেই সাথে নেশন্স লিগের এবারের আসর থেকে বাদ পড়ে আজ্জুরিরা।
নেশন্স লিগের অপর কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় পায় ফ্রান্স। প্রথম লেগে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের ব্যবধান একই থাকায় অতিরিক্ত সময়ে খেলা গড়ালেও সেখান থেকে গোল আদায় করতে পারেনি কেউই। দ্বিতীয় লেগে নিজেদের ঘরের মাঠে প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণ করেও কাঙ্খিত গোল আদায় করতে পারেনি ফ্রান্স। তবে দ্বিতীয়ার্ধের ৭ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে নেন মিকায়েল অলিস। এরপর ম্যাচের ৮০ মিনিটে ২-০ গোলের লিড এনে দেন উসমান ডেম্বেলে। সেই সাথে দুই লেগ মিলিয়েও দলকে সমতায় আনেন পিএসজির এই ফুটবলার।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচে আর কোনো গোল না এলে খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে প্রথম শটেই গোল করতে ব্যর্থ হন মার্টিন বাতুরিনা। ফ্রান্সের হয়ে এমবাপে, চুয়োমিনি গোল করলেও ব্যর্থ হন জুলস কুন্ডে ও থিও হার্নান্দেজ। মাঝে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে পেনাল্টি মিস করেন ইভানোভিচ। ক্রোয়েশিয়া হয়ে সপ্তম শটে স্ট্যানিসিচ মিস করলে টাইব্রেকারে ৫-৪ ব্যবধানে জয় পায় ফ্রান্স।
এদিকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে নেশন্স লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন। শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয়েছে ৩-৩ ব্যবধানে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের ৮ মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিক স্পেন। পেনাল্টি থেকে গোল করেন মিকেল ওয়ারজাবাল। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে ডাচদের সমতায় ফেরান মেমফিস ডিপে। ৬৭ মিনিটে অবশ্য আবারো লিড এনে দেন ওয়ারজাবাল। ১২ মিনিট পরেই আবার সমতায় ফেরে ডাচরা। জাভি সিমন্সের এসিস্টে গোল করেন ইয়ান ম্যাটসেন।
নির্ধারিত সময়ে আর কোনো গোলের দেখা না পাওয়া গেলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ১০৩ মিনিটে আবারো লিড নিয়ে নেয় স্পেন। লামিনে ইয়ামালের গোলে সেমির স্বপ্ন দেখতে শুরু করে স্বাগতিকরা। তবে সেই স্বপ্নে আবারো বাধা হয়ে দাঁড়ায় ডাচরা। ১০৯ মিনিটে সিমন্সের করা গোল থেকে ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো সমতায় ফেরে নেদারল্যান্স। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৫ ড্র নিয়ে ম্যাচ এরপর গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে ৫-৪ ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্পেন।
এদিকে নেশন্স লিগের এবারের আসরে সেমিফাইনাল মাঠে গড়াবে ৫ ও ৬ জুন। প্রথম সেমিফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হবে পর্তুগাল এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নামবে ফ্রান্স। দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে জার্মানির মাটিতে। এই দুই সেমিফাইনালের পরাজিত দল নিয়ে ৮ জুন মাঠে গড়াবে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ এবং ৯ জুন সেমিফাইনালের বিজয়ী দুই দল নিয়ে হবে নেশন্স লিগের এবারের আসরের ফাইনাল।