টানা ১২ বছর ধরে আইপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পায় না মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। রবিবার (২৩ মার্চ) চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে হেরে সেই সংখ্যা ১৩তে রূপান্তর করলো আম্বানি পরিবারের মালিকানাধীন দলটি। চেন্নাইয়ের ঘরের মাটিতে স্বাগতিকদের কাছে চার উইকেটে হার দিয়েই আসর শুরু করলো আইপিএলের সফলতম এই দলটি।
এদিন লড়াইটা ছিলো আইপিএলের দুই হেভিওয়েট দলের মধ্যে। দুদলের ঝুলিতেই আছে পাঁচটি করে শিরোপা। এমন হাইভোল্টেজ ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রুতুরাজ গাইকোয়াড। শুরু থেকেই সফরকারী মুম্বাইকে চেপে ধরে স্বাগতিক চেন্নাই। প্রথম ওভারেই খলিল আহমেদের বলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন রোহিত। রায়ান রিকেলটনও ইনিংসটা বড় করতে পারেননি। খলিলের বলেই তিনিও ফেরত যান প্যাভিলিয়নে।
উইল জ্যাকসও ১১ রান করে বিদায় নিয়েছেন অশ্বিনের বলে। এরপর অবশ্য তিলক ভার্মাকে সাথে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ করছিলেন সুরইয়াকুমার ইয়াদাভ। তবে নুর আহমেদের জাদুকরী এক ডেলিভারিতে ধোনির বুদ্ধিদীপ্ত স্ট্যাম্পিংয়ে ২৯ রানেই থামতে হয় মুম্বাইয়ের এই অধিনায়ককে। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন নুর। বিদায় করেন রবিন মিঞ্জ ও তিলক ভার্মাকে। ম্যাচের লাগাম তখন পুরোপুরি চলে আসে মুম্বাইয়ের দখলে।
শেষ দিকে এসে দিপাক চাহার এসে ১৫ বলে দুটি চার ও দুটি ছক্কায় ২৮ রানের এক ক্যামিও ইনিংস খেললে ১৫৫ রানের লড়াই করার পুঁজি পায় সফরকারী মুম্বাই। চেন্নাইয়ের হয়ে মাত্র ১৮ রান খরচায় চার উইকেট তুলে নেন নুর আহমেদ। এছাড়া খলিল আহমেদের ঝুলিতে যায় তিনটি উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে চেন্নাইয়ের ইনিংসের শুরুটাও ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বিদায় নেন রাহুল ত্রিপাঠি। তবে এরপর রাচিন রবীন্দ্রকে সাথে নিয়ে দারুণ এক পার্টনারশিপ গড়তে শুরু করেন অধিনায়ক রুতুরাজ গাইকোয়াড। পাওয়ার প্লেতে মুম্বাইয়ের বোলারদের তুলোধুনো করে দলীয় সংগ্রহ ৬২তে নিয়ে যান এই ব্যাটার। ইনিংসের সপ্তম ওভারে নিজের আইপিএল ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটিও পূর্ণ করেন গাইকোয়াড। তবে পরের ওভারেই ২৩ বলে ৫৬ রান করে তাকে ফিরে যেতে হয় প্যাভিলিয়নে।

গাইকোয়াডের বিদায়ের পর হুট করেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে চেন্নাই। বেশ দ্রুতই বিদায় নেন শিভাম দুবে, দিপক হুডা ও স্যাম কারান। তবে তখনো এক প্রান্ত আগলে রাখেন রাচিন রবীন্দ্র। ৬৫ রান করে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়েই মাঠ ছাড়েন এই কিউই তারকা ব্যাটার। পাঁচ বল বাকি থাকতেই চার উইকেটের জয় দিয়ে আসর শুরু করে চেন্নাই।
এদিকে দিনের প্রথম ম্যাচে ইতিহাস রচনা করেছে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। নিজেদের ঘরের মাঠে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ২৮৬ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় হায়দ্রাবাদ। যা কিনা আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। জবাবে ধ্রুব জুরেল ও সাঞ্জু স্যামসনের অর্ধশতক সত্ত্বেও ২৪২ রানের বেশি করতে পারেনি রাজস্থান। ফলে ৪৪ রানের জয় নিয়েই আইপিএলের এবারের আসর শুরু করেছে বর্তমান রানার্সআপরা।
রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে এদিন টসে জিতে হায়দ্রাবাদকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় রাজস্থানের অধিনায়ক রিয়ান পরাগ। উদ্বোধনী জুটিতে ঝড়ো ৪৫ রান তোলেন দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা ও ট্রাভিস হেড। এরপর অভিষেক আউট হলেও ঈশান কিষাণ ও হেড মিলে ৮৫ রানের জুটি গড়েন। যদিও ৩১ বলে ৬৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে আউট হয়ে যান ট্রাভিস হেড।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে দলের রানের চাকা সচল রাখেন ঈশান কিষাণ। শেষ পর্যন্ত আইপিএলের ১০ম আসরে খেলতে নেমে প্রথমবারের মতো শতকের দেখা পান তিনি। এর আগে গুজরাট লায়ন্স ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেললেও কখনো শতকের দেখা পাননি এই ব্যাটার।

ঈশানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির ওপর ভর করেই নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। মাত্র ১ রানের জন্য নিজেদেরই করা সর্বোচ্চ দলীয় স্কোরের রেকর্ড (২৮৭) ভাঙতে পারেনি তারা। ১০৬ রান করে অপরাজিত থাকেন ঈশান। অন্য দিকে, রাজস্থানের জোফরা আর্চার ৪ ওভারে ৭৬ রান খরচ করে আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে খরুচে স্পেলের তিক্ত রেকর্ড গড়েন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ইয়াশাদভি জয়সওয়ালকে হারায় রাজস্থান রয়্যালস। এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি অধিনায়ক রিয়ান পরাগ ও নিতিশ রানা। তবে চতুর্থ উইকেটে সাঞ্জু স্যামসন ও ধ্রুব জুরেলের ১১১ রানের পার্টনারশিপে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় রাজস্থান। কিন্তু ৩ বলের ব্যবধানে প্রথমে ৬৬ রান করা সাঞ্জু ও পরে ৭০ রান করা ধ্রুব আউট হয়ে গেলে আবারও চাপে পড়ে যায় দলটি।
শেষ দিকে শিমরন হেটমায়ার ও শুভম দুবে খানিকটা চেষ্টা চালালেও তা জেতার জন্য যথেষ্ট হয়নি। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪২ রানেই থেমে যায় রাজস্থানের ইনিংস। হার্শাল প্যাটেল ও শিমারজিত সিং ২টি করে উইকেট নেন। আর ৪৪ রানের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ।