ফুটবল অনেক সময়ই সিনেমার চেয়ে কম কিছু নয়। কখনো শিরোনামে থাকে কোটি টাকার তারকা, আবার কখনো মঞ্চে উঠে আসেন একেবারে আড়ালে থাকা কেউ। যার গল্পে নেই নাম, আছে শুধু স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নটাই এবার সত্যি করে দেখালেন নিউজিল্যান্ডের এক স্কুলশিক্ষক। ক্লাসরুম ছেড়ে মাঠে নেমে গোল করলেন বোকা জুনিয়র্সের বিপক্ষে, ছিটকে দিলেন আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিকে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে।
নাম তাঁর ক্রিশ্চিয়ান থমাস গ্রে। দিনের বেলায় পড়ান স্কুলে, আর রাতে মাঠে নামেন ফুটবল খেলার জন্য। অকল্যান্ড সিটির হয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে খেলতে নামা এই অপেশাদার ফুটবলার ম্যাচের ৫২তম মিনিটে কর্নার থেকে হেডে গোল করে শুধু দলের সমতা ফেরাননি, বরং এক ঐতিহাসিক রাত উপহার দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ক্লাবটিকে।

আরও পড়ুন: ন্যাপকিনের চুক্তিপত্র থেকে বিশ্বজয়ী লিওনেল মেসি
অথচ এই অকল্যান্ড সিটি টুর্নামেন্টের শুরুতেই ছিল কৌতুকের পাত্র। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ১০ গোল এবং বেনফিকার বিপক্ষে আরও ৬ গোল হজম করে তাঁদের কেউ গুরুত্ব দিচ্ছিল না। কোমল পানীয় বিক্রেতা, রিয়েল এস্টেট এজেন্ট এবং স্কুলশিক্ষক মিলিয়ে গড়া দলটিকে দেখলে অনেকেই ভেবেছিল, বোকা জুনিয়র্স নিশ্চিন্তে জয় পাবে। কিন্তু ফুটবল তো অনেক সময়ই সেই গল্পটা লিখে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারে না।
ম্যাচের প্রথমার্ধে আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বোকা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে স্কুলশিক্ষকের সেই দুর্দান্ত হেড গোলেই সমতায় ফেরে অকল্যান্ড। ম্যাচের বাকিটা সময় একের পর এক আক্রমণ করেছে আর্জেন্টাইন ক্লাবটি। ৭৪ শতাংশ বলের দখলে রেখে ৪১টি শট নিয়েও দ্বিতীয় গোল আর আসেনি। বরং ২৬ শতাংশ বলের দখলে থাকা অকল্যান্ড ৩টি শটের মধ্যে ২টিই লক্ষ্যে রেখে একটিতে গোল আদায় করে নিয়েছে।

বোকা জুনিয়র্সের জন্য ম্যাচটা ছিল ‘অবশ্য জয়ের’। গ্রুপ পর্বে এর আগেই বেনফিকার বিপক্ষে ড্র করে সমীকরণ কঠিন করে ফেলেছিল তারা। সুযোগ ছিল বড় ব্যবধানে জিতে পরের রাউন্ডে যাওয়ার। কিন্তু স্কুলশিক্ষকের গোলেই সব হিসাব ভেস্তে গেছে। শুধু গ্রুপ থেকে বাদ পড়েনি বোকা, বরং এখন তাঁরা সমালোচনার তীরে বিদ্ধ এক ক্লাব।
আরও পড়ুন: হেডিংলিতে রেকর্ড গড়ে ভারত বধ ইংলিশদের
ম্যাচ শেষে আবেগে ভাসছিলেন থমাস গ্রে, “এটা অবিশ্বাস্য অনুভূতি। আমাদের মতো ছোট একটা ক্লাবের জন্য এত বড় ম্যাচে গোল করা স্বপ্নের মতো। এটা শুধু আমার নয়, গোটা দলের অর্জন।”

এটাই তো ফুটবলের সৌন্দর্য— যেখানে একজন সাধারণ স্কুলশিক্ষক হয়ে উঠতে পারেন নায়ক, আর কোটি টাকার স্কোয়াড হয়ে যেতে পারে কেবল পরাজিত। যেখানে গোল পোস্টের দুই প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকে বাস্তবতা আর রূপকথা। আর মাঝখানে ফুটবল, ঠিক যেন জীবনের মতোই অবিশ্বাস্য!